পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*こヘヘヘヘ ৩৩৬ নানা দেশের সাধুদের উপদেশ-বাক্যেও খুব ঐক্য ও সাদৃশ্ব দেখা যায়। ইহার কারণ, মূলতঃ মানুষের আত্মার, মানুষের হৃদয় মনের, জাতি নাই। সকলেরই অস্তরে ঐক্য আছে। মানুষের শরীর দেশে ও কালে আবদ্ধ থাকিতে পারে, কিন্তু মন সৰ্ব্বত্র, সৰ্ব্বকালে বিচরণ করিতে পারে। ইহা করিবার প্রয়োজনও আছে। মানুষ যদি সকল সময়ে ঘরের বদ্ধ বাতাসে বাস করে, তাহা হইলে তাহার শরীর ভাল থাকে না। বাহিরের মুক্ত বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। মানুষের মনও চিরকাল নিজের গ্রামের, নিজের দেশের, নিজের সমসাময়িক ভাব ও চিন্তা লইয়। নাড়াচাড়া করিলে সুস্থ থাকিতে ও শক্তিশালী হইতে পারে না, তাহার ভাবসম্পদ চিন্তার ঐশ্বৰ্য্য যেরূপ হইবার সম্ভাবনা, তাহ হয় না। বিকৃত স্বাদেশিকতার বশবৰ্ত্তী হইয়া কেহ, তর্কস্থলে, জনতার হাততালির লোভে, মুখে ইহা অস্বীকার করিলেও কাৰ্য্যতঃ ইহা শিক্ষিত লোকেরা স্বীকার করেন। যদি আমরা বিদেশী কোন ভাব ও চিন্তাই লইব না, তাহ হইলে বিদেশী দর্শন ও সাহিত্যাদি কলেজে পড়ি কেন ? পাশ করিয়া টাকা রোজগার করিবার জন্য পড়ি, বলিলে, আংশিক সত্য বলা হইবে, সম্পূর্ণ সত্য বল। হইবে না। কারণ, মোটের উপর ইংরেজীশিক্ষিত লোকদের চেয়ে ইংরেজী-না-জান ব্যবসাদারের বেশী উপার্জন করে। কিন্তু ইংরেজীশিক্ষিতদের সম্মান বেশী, কারণ তাহাদের জ্ঞান বেশী ; এবং তাহদের এই জ্ঞান প্রধানতঃ বিদেশী ভাব ও চিন্তার সমষ্টি । চলিত ধারণা অনুসারে আমরা ভাব ও চিন্তাকে দেশী বা বিদেশী বলিলাম। কিন্তু প্লেটোর যে চিন্তা আমিও করিতে পারি, শেক্সপিয়রের যে ভাব আমার হৃদয়েও উঠে, তাহ আর শুধু বিদেশী রহিল কেমন করিয়া? তাহ দেশীও হইয়৷ গেল। সংস্কৃত সাহিত্যের যে-সব ভাব ও চিন্তু পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ ধারণা ও গ্রহণ করিতে পারিয়াছেন, তাহা তাহদের দেশেরও সম্পত্তি হইয়া গিয়াছে। পারস্যের গোলাপ ও বুলবুল এখন ভারতবর্ষেরও বটে। গোলআলু এখন আর বিদেশী জিনিষ নয়। বস্থঙ্কর। যেমন বীরভোগ্য, উৎকৃষ্ট ভাব ও চিন্তাও তেমনি যে-দেশে যে-ভাষাতেই থাক, গহা মনস্বীর ন্যায্য অধিকারভুক্ত। প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড আমরা গত সংখ্যায় যখন এলাহাবাদের মাননী ডাক্তার সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ু মহাশয়ের গুণ কীৰ্ত্তন করিতেছিলাম, তখন স্বপ্নেও ভাবি নাই যে এত শীঘ্র তিনি দেহত্যাগ করিবেন। কিন্তু মানুষ যাহ। ভাবে না । তাহাও অহরহ পৃথিবীতে ঘটিতেছে। তিনি ৮ দিনের জরে রক্ত বিষাক্ত হইয়া মৃত্যু গ্রাসে পতিত হইয়াছেন। একটা ফোড়াও হইয়াছিল। তিনি অনেক বৎসর হইতে বহুমূত্র রোগে ভূগিতেছিলেন। আঠার মাস পূৰ্ব্বে তাহার বড় ভাই মারা যান। এখন তিনিও গেলেন । তাহার পূজনীয় মাতাঠাকুরাণীকে যে কি শোক পাইতে হইল, ভাষায় তাহা বর্ণনা করা যায় না। সতীশচন্দ্র ১৮৭১ খৃষ্টাব্দের ২০ শে জুন আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তাহার বয়স ৪৪ বৎসরও পূর্ণ হয় নাই। অকালে আমাদের দেশের অনেক কৃতী পুরুষের মৃত্যু হয়। ইংরেজেরা শীতপ্রধান দেশের লোক ; গ্রীষ্মপ্রধান ভারতে বাস করিয়াও তাহারা দীর্ঘজীবী হয় এবং অনেক বয়স পৰ্য্যন্ত কার্যক্ষম থাকে। অতএব কেবল জলবায়ুর দোয় দিয়া আমরা নিশ্চিন্ত হইতে পারি না। জলবায়ু ছাড়া ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত, পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও রাজ নৈতিক কি কি কারণে আমাদের স্বাস্থ্যভঙ্গ ও আয়ু হ্রাস হয়, তাহ নিৰ্দ্ধারিত হওয়া চাই, এবং প্রতিকার কি কি উপায়ে হইতে পারে, তাহ নিরূপিত হওয়া চাই। জলবায়ুর উৎকর্ষ সাধনও মানুষের সাধ্যাতীত নহে। তাহা ইটালী, পানাম, প্রভৃতি নানাদেশে প্রমাণিত হইয়াছে। সতীশচন্দ্র ১৫ বৎসর বয়সে আলিগড় হইতে প্রবেশিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি বি-এ পরীক্ষায় ইংরেজীতে এলাহাবাদ ও কলিকাত৷ উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএ ছিলেন, এবং কলিকাতার প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রাপ্ত হন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় হইতে তিনিই প্রথমে আইনের পরীক্ষা দিয়৷ সৰ্ব্বোচ্চ এলএল্ড উপাধি প্রাপ্ত হন, এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টের এডভোকেট হন। তিনি কিছুকাল হুগলী কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। প্রেমচাদ রায়চাদ বৃত্তি পাইয়া তিনি সাংখ্যদর্শন সম্বন্ধে একটি উৎকৃষ্ট দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন। উহা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯০৮ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর আইন-অধ্যাপক নিৰ্বাচিত হইয়া স্পেসিফিক রিলীফ সম্বন্ধে বক্তৃত করেন। বক্তৃতাগুলি ১০. পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি পুস্তকের আকারে মুদ্রিত হইয়াছে। তাছ T ৩য় সংখ্যা ] -ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ একখানি প্রামাণ্য গ্রন্থ বিবেচিত হইয়া থাকে। এতদ্ব্যতীত তিনি কলেজপাঠ্য অনেকগুলি ইংরেজী সাহিত্যিক ও দার্শ নিক পুস্তকের উংকৃষ্ট সটীক সংস্করণ প্রকাশ করিয়াছিলেন। স্বৰ্গীয় সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দুস্তান রিভিউ, মডার্ণরিভিউ, ইণ্ডিয়ানরিভিউ, প্রভৃতি মাসিক পত্রে মুদ্রিত তাঙ্গর ইংরেজী প্ৰবন্ধগুলি সাদরে পঠিত হইত। প্রবাসীতে তিনি কয়েকটি বাংলা প্রবন্ধ লিথিয়াছিলেন। ভক্তিভাজন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের “স্বপ্নপ্রয়াণ" কাব্যের একটি বিস্তৃত সমালোচনা তিনি এই গ্রীষ্মকালে পাহাড়ে গিয়া লিখিবেন, কিছু দিন পূৰ্ব্বে আমাদিগকে এই কথা লিপিয়ছিলেন। কয়েকমাস পূৰ্ব্বে আর-একথানি চিঠিতে লিখিয়াছিলেন যে, সমসাময়িক ঘটনাবলীর পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাধিতে কিম্বা সমসাময়িক নানা রাজনৈতিক ব্যাপারের আলোচনা করিতে র্তাহার তত ভাল লাগে না । লিখিয়াছিলেন, গ্ৰীক নাট্যকারদের প্রাচীন নাটকগুলি পড়িয়া খুব আনন্দ পাই ; গ্রীক জানি না, সুতরাং সেগুলির যত উৎকৃষ্ট ইংরেজী অন্তবাদ আছে, সমস্ত সংগ্ৰহ করিয়া পড়িতেছি। গ্রীক ট্র্যাজিডিগুলি সম্বন্ধে মডাৰ্ণরিভিউতে তিনি প্রবন্ধ লিখিতে ইচ্ছ। করিয়াছিলেন । বিবিধ প্রসঙ্গ—ডাক্তার সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় HVA --- - --.....--ബ് র্তাহার পিতা স্বৰ্গীয় অবিনাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরপশ্চিম প্রদেশে ছোট আদালতের জজ ছিলেন। তিনি এক সময়ে ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের প্রভাবে ব্রাহ্মধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। সতীশ বাবুর মাতা চিরকাল হিন্দুধৰ্ম্মে অন্তরাগিনী। ব্রাহ্মসমাজের সহিত অবিনাশ বাবুর যোগ স্থায়ী হয় নাই, কিন্তু ব্রাহ্মসমাজের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা বরাবরই ছিল । সতীশ বাবুর এলাহাবাদস্থ বাটতে অনেক বৎসর হইতে দুর্গোৎসব হইয়া আসিতেছে । ইহাতে সতীশ বাবু পূর্ণমাত্রায় যোগ দিতেন। আমরা যখন এলাহাবাদে কায়স্থ পাঠশালায় কাজ করিতাম, তখন হালিশহরের স্বৰ্গীয় দীননাথ গাঙ্গুলী মহাশয় তশয় ভারতবর্ষের বিখ্যাত লোকদের স্মরণার্থ বার্ষিক সভা আহবান করার প্রথা প্রবর্তিত করেন । এইরূপ একটি রাজ রামমোহন রায়ের স্মৃতিসভায় সতীশ বাবু তাহার সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। উহ। ইংরেজী কায়স্থ সমাচার মাসিকপত্রের প্রথম বৎসরের এক সংখ্যায় মুদ্রিত হয়। প্রবন্ধে সতীশ বাৰু বলেন যে তাহার মতে রামমোহন রায়ের যে হিন্দু ধৰ্ম্ম তাহাই প্রকৃত হিন্দু ধৰ্ম্ম । সতীশ বাবর পিতা চরিত্রবান লোক ছিলেন। মাতা ঠাকুরাণীও ধৰ্ম্মপরায়ণ ও নিষ্ঠাবতী । ইহঁাদের সদগুণ সতীশবাবুর চরিত্রে পরিস্ফুট হইয়াছিল। তাহার নম্ৰতা তাহার পাণ্ডিত্যেরই অনুরূপ ছিল। তিনি বড় অমায়িক, সরল, মৃদু ও শান্ত স্বভাবের লোক ছিলেন। পরোপকারে তিনি খুব আনন্দ পাইতেন । তিনি আদর্শ পুত্র, আদর্শ ভ্রাত, আদর্শ স্বামী ও আদর্শ পিতা ছিলেন। র্তাহার মাত। অবরোধ-প্রথার পক্ষপাতী নহেন। সতীশ বাবুও ইহার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিছুকাল পূৰ্ব্বে এল হাবাদ হাইকোর্টের জজ শ্ৰীযুক্ত প্রমদাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূর একখানি পুস্তক সমালোচন৷ উপলক্ষে সতীশবাবু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন, এবং এ বিষয়ে তাহার আচরণ ঐ মতের অনুযায়ী না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। স্নেহলতার পর তিনি পণগ্রহণ প্রথার বিরুদ্ধে হিন্দীতে একটি উদ্দীপনাপূর্ণ বক্তৃত করেন। শ্ৰীযুক্ত ভূপেন্দ্রনাথ বস্থ হিন্দুধৰ্ম্মাবলম্বী ব্রাহ্মণ কায়স্থ প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে অঙ্গুলোম প্রতিলোম বিবাহ আইনসঙ্গত করিবার জন্য বড়লাটের সভায় যে আইনের পাণ্ডুলিপি উপস্থিত করেন, সতীশ বাৰু তাহার সপক্ষে মত প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই মত মডার্ণরিভিউতে প্রকাশিত র্তাহার রচিত একটি প্রবন্ধে ব্যক্ত হইয়াছিল । তিনি আগ্ৰা-অযোধ্য। প্রদেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তথাকার প্রাদেশিক রাজনৈতিক কনফারেন্সে সভাপতির কাজ করিয়াছিলেন। প্রাদেশিক শিল্পসম্বন্ধীয়