পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१8 রূপার খনি আবিষ্কৃত হইতেছে বটে, কিন্তু তাহাতে সোন। রূপ যে-পরিমাণে বাড়িয়াছে, তার চেয়ে বাণিজ্য এবং বাণিজ্যের জন্য অর্থবিনিময়ের প্রয়োজন অনেক বেশী বাড়িয়াছে। মূল্যবান ধাতুর মুদ্রায় এই বিপুল আয়তনের ব্যবসায়বাণিজ্য চলে না বলিয়া, বণিকসমাজে ধার বিনিময়পত্র বহু পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, এবং সকল দেশের গবর্ণমেণ্ট এবং বড় বড় ব্যাঙ্ক বহু পরিমাণে নোট প্রভৃতি কাগজের মুদ্রা বাহির করেন। এসবও অর্থবিনিময়ের সম্পর্কে টাকার হ্যায় চলে । ধার বিনিময়-পত্রাদির কথা সাধারণতঃ আমরা বেশী জানি না, কারণ বাঙ্গালী শিক্ষিত ভদ্রলোকের মধ্যে ব্যবসায় বাণিজ্য বড় কম। র্যার সাধারণ সাহিত্য লইয়। নাড়াচাড়া করেন, তারা এসব চক্ষে ও বড় দেখেন না । তবে নোটটা যে টাকার স্থানে প্রচুর পরিমাণে চলিতেছে, ইহা সকলেই আমরা দেখিতেছি। আস্ত টাকার চেয়ে নোটই আমরা বেণী দেখিতে পাই। রূপার টাকা যত চলিতেছে, তার চারিগুণ যদি নোট চলে, তবে বলিতে হইবে, বিনিময়ে চলতি টাকা পাচগুণ বাড়িয়াছে। আবার সেই টাকা ব্যবসায়াদির বিনিময়ে যত দ্রুত হাত-বদলায়, তত সে হাতবদলান, সংখ্যা বৃদ্ধিরই ন্যায় ফলদায়ক হয়। অর্থনীতিশাস্ত্রের বড় জটিল সমস্ত। এগুলি, এ প্রসঙ্গে তার বিশদ ব্যাখ্যাও নিম্প্রয়োজন। মোটের উপর এই স্থলে এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে, যে টাকায় ও নোটে, এবং আজকাল কার বাজারবিনিময়ে তাদের দ্রুত হাতবদলানতে, পৃথিবীর সৰ্ব্বত্রই চলতি টাকার সংখ্য অনেক বেশী বাড়িয়াছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা বড় ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যের সম্বন্ধে আসিয়া পড়িয়াছি,—দেশের মধ্যে ও সৰ্ব্বত্র অতি দ্রুত বিবিধ বাণিজ্যের বিস্তার হইতেছে। ইহাতে চলতি টাকার পরিমাণ আমাদের দেশেও বাড়িয়াছে। দেশের মধ্যে চলতি টাকা বাড়িয়াছে,—তাই বলিয়া দেশের সর্বশ্রেণীর মধ্যে সম্পদসৌভাগ্য যে বাড়িয়ছে, তা বলি না। - বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী",–কিন্তু দেশে বহুল বাণিজ্যবিস্তার হইতেছে বলিয়া এ কথাও বলিতে পারি না যে দেশে ঘরে ঘরে লক্ষ্মী বসতি করিতেছেন। দেশের মধ্যে এবং বিদেশের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসায় বাণিজ্য এখন প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩২২

  • ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ/

- - [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড


"م-۰-م- **

যেমন চলিতেছে, বোধ হয় কোনও কালে ভারতের বাণিজ্য এত বিপুল আকারের হয় নাই। কিন্তু এই বাণিজ্য যাহাঁদের হাতে, বাণিজ্য প্রধানত: যাহার চালাইতেছেন, তাহারা বিদেশী বণিক,-এ দেশের স্থায়ী অধিবাসী নন। কিন্তু বিদেশী হইলেও তাহাদের ব্যবসায় বাণিজ্য এ দেশেই চলিতেছে,-বাণিজ্য উপলক্ষে তাহদের বহু অর্থ এদেশে আসিয়া পড়িয়াছে। রেলষ্টীমারে, বহু কলকারখানায়, খনিতে চায়ের বাগানে, নীলের ক্ষেতে, তাহদের প্রচুর মূলধন এ দেশে থাটিতেছে। ব্যবসায়ে যে টাকা খাটে, তা সব কেহ নিজের ঘরেই রাখিতে পারে না। আর পাঁচজনের মধ্যে বহু পরিমাণে তাহা ছড়াইতে হয়, তবে তাহাদের সাহায্যে মূলধনে লাভ দাড়ায়। বিদেশীর মূলধন যে এ দেশে খাটিতেছে, তাহ বহু পরিমাণে তাহদের সহকারী, কেরানী, সরকার, দালাল, মিস্ত্রী, কুলী প্রভৃতি রূপে এ দেশের লোকের মধ্যে আদিতেছে। এইসব ব্যবসায়ের সংস্রবে এ দেশেরও হাজার হাজার লোক অর্থে পার্জন করিতেছেন। যদি এ মূলধন দেশীয় লোকের হইল, ব্যবসায়ের কর্তৃত্ব দেশের অধিবাসীরাই করিতেন, তবে খুবই ভাল হইত সন্দেহ নাই। কিন্তু দেশীয় লোক যদি তাহা না করেন বা না করিতে পারেন, তবে ইহাই বা भन्म कि ? এ দেশে উৎপন্ন বহু কৃষিজ ও খনিজ দ্রব্যাদি বিদেশী বণিকেরা কিনিয়া বিদেশে চালান দিতেছেন। কেবল যে তাহাদের দেশের জিনিষ বিক্রয় করিয়া এদেশের টাকা তাহারা লুটিয়া নিতেনে তা নয়, যাহা নিতেছেন, তাহাও প্রচুর পরিমাণে আবার এদেশে আনিয়া ব্যবসায় বাণিজ্য করিতেছেন। তাহারা কত নিতেছেন, কত দিতেছেন,— এই বিনিময়ের খতিয়ানে কোন পক্ষের লাভ লোকসান কি হইতেছে, তার আলোচনা আমাদের এস্থলে নিম্প্রয়োজন। এখানে এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, বিদেশীর বাণিজ্যের ফলে দেশের চলতি টাকা অনেক বাড়িয়াছে। কেবল বিদেশের ও বিদেশীর বাণিজ্যেই যে চলতি টাকা বাড়িয়াছে, তা নয়। গবর্ণমেন্টের শাসন পরিচালনার বিধি ব্যবস্থাতেও দেশের চলতি টাকা বৃদ্ধির পক্ষে অনেক সহায়তা করিয়াছে। বর্তমান গবর্ণমেণ্টের শাসনব্যাপার ৩য় সংখ্যা ] বড় জটিল ; বহু বিভাগে, বহু রকম কৰ্ম্মভার গবর্ণমেণ্ট নিজের কর্তৃত্বাধীনে চালাইতেছেন। বড় বড় সাহেব কৰ্ম্মচারী যারা আছেন, তাহদের নিয়ে যত দেশীয় কৰ্ম্মচারী এখন নিযুক্ত হইয়৷ কাৰ্য্য করিতেছেন, তাহাদের সংথ্যা ও নিতান্ত কম নয়। ইহাতে গবৰ্ণমেণ্টের তহবিল হইতে যে টাকা দেশের লোকের মধ্যে ছড়াইতেছে, তাও নিতান্ত কম হইবে না। অনেকে বলিতে পারেন, গবৰ্ণমেণ্টের আয় ত প্রজার প্রদত্ত কর হইতে আসে, তবে ইহাতে চলতি টাকার বৃদ্ধির সহায়তা করিবে কেন ? কররূপে গবর্ণমেণ্ট যাহা নিতেছেন, তার কতক অংশ মাত্র রাজসেবার বিনিময়ে প্রজাকে দিতেছেন । ইহার উত্তর আছে। এখন গবর্ণমেণ্টের আয় কেবল প্রজার প্রদত্ত কর হইতেই হয় না। গবর্ণমেণ্ট প্রজার নিকট হইতে বহু ঋণ গ্রহণ করেন। সেভিংস ব্যান্ধের টাকা, কোম্পানীর কাগজের টাকা প্রভৃতি এই ঋণ। এই টাকা দেশের লোক ব্যবসায়ে খাটাইলেও দেশের লোকের মধ্যেই ছড়াইত। কিন্তু যে টাকা লোকে ব্যবসায়ে থাটাইতে চায়, তা দিয়া কোম্পানীর কাগজ কেনে না, সেভিংস ব্যাঙ্কে ও তা জমা রাখে না। গবর্ণমেণ্ট অনেক নূতন টাকা মুদ্রিত করেন এবং অনেক নূতন নোট বাহির করেন,—তাহ হইতেও আয় কিছু বাড়ে। বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে চলতি টাকা বৃদ্ধির প্রয়োজন, তাই প্রধানত: গবর্ণমেন্টকে মধ্যে মধ্যে নূতন টাকা এবং নূতন নোট বাহির করিতে হয়। ইহা ব্যতীত গবৰ্ণমেণ্টের হাতে ব্যবসায় বাণিজ্যও অনেক আছে,—তাহাতেও আয় কম হয় না। আরও একটি কথা আছে। প্রজার প্রদত্ত রাজস্ব যে সৰ্ব্বত্র, সকল প্রকার রাজশাসনাধীনে, বেশীর ভাগে আবার প্রজার মধ্যেই ফিরিয়া আসে, তা নয়। কর প্রজারা দেয়, প্রজাকে দিতেই হইবে । সেই টাকা যত পরিমাণে প্রজার মধ্যে ফিরিয়া আসে, তত পরিমাণে প্রজার মধ্যে চলতি টাকা বাড়ে বলিতে হইবে। গবর্ণমেন্টের এই করলন্ধ আয়, ইংরেজ কৰ্ম্মচারীদের বেতনে, পেন্সনে এবং আরও আরও অনেক রকমে দেশের বাহিরে যায়, তা সত্য। কিন্তু দেশের প্রজাদের মধ্যেও নিতান্ত কম আসে না। পূৰ্ব্বে মুসলমান রাজাদের আমলে রাজস্ব বিদেশে যাইত না। বাজারদর ও বর্তমান সমস্যা ヘし、ヘし、ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘへ^ー" কিন্তু তাই বলিয়ু সব যে প্রজাদের মধ্যেই ফিরিয়া আসিত তা নয়। তাহদের শাসনপ্রণালী অন্তরূপ ছিল । দেশীয় কি বিদেশী—বেতনভোগী এত বেশী কৰ্ম্মচারীর প্রয়োজন তাহাদের হইত না। বড় রাজকৰ্ম্মচারীর প্রায়ই বেতনের পরিবর্ভে জায়গীর ভোগ করিতেন। রাজস্ব বহু পরিমাণে রাজকোষেই সঞ্চিত থাকিত। তারপর নোটে কি কোম্পানী কাগজে, কি কোনও রূপ ব্যবসায়বাণিজ্যে, রাজসরকারের কোনও আয়ু ছিল না। প্রজারা সোনা রূপার টাকায় রাজস্ব দিত,–তাই রাজাদের একমাত্র আয় ছিল,—তারও অনেক রাজকোষে সঞ্চিত থাকিত । কেবল রাজাদের কথা কেন ? জমিদারেরাও টাকা বহুপরিমাণে সঞ্চিত রাখিতেন। দেশে যুদ্ধবিগ্ৰহাদিতে অনেক সময় অশাস্তির অবস্থা ছিল। নানা রকমে টাকা লুষ্ঠিত হইত। তাই অনেকে বহু টাকা ও মোহর মাটির নীচে পৰ্য্যন্ত পুতিয়া রাখিতেন। দেশে তপন সোনা রূপ এখন অপেক্ষা বেশী ছিল, সন্দেহ নাই,— কিন্তু তাহার অধিকাংশই প্রজার মধ্যে চলতি হইয়া ছড়াইয়া পড়িত না। রাজস্ব বিদেশে না গেলেও, দেশীয় প্রজার মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে ফিরিত না, ছড়াইত না-রাজকোষেই বেশী সঞ্চিত থাকিত । কতক নূতন বাবসায়বাণিজ্যের ফলে, এবং কতক রাজশাসন-সংক্রাস্ত নূতন ব্যবস্থার ফলে দেশের মধ্যে চলতি টাকা অনেক বাড়িয়াছে, বাড়িয়া টাকার দাম কমিয়াছে, এবং ইহাই বৰ্ত্তমান চড়া বাজারদরের প্রধান কারণ বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। কেবল মাছ, দুধ, তরকারী প্রভৃতি অনেক পদার্থ সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে যে, অপ্রাচুর্য্যত হয়ত কতক পরিমাণে এই দরবৃদ্ধির সহায়তা করিয়াছে। আরও একটি কারণও কতক পরিমাণে কোনও কোনও দ্রব্য সম্বন্ধে এই দরবৃদ্ধির সহায়তা করিতে পারে। এক ব্যবসায়ে যাহারা নিযুক্ত আছেন, তাহারা মিলিয়া জোট বাধিয়া অনেক পরিমাণে দর চড়াইয়া রাখিতে পারেন। অনেক সময় কতিপয় ধনী ব্যবসায়ী কোনও কোনও উৎপন্ন দ্রব্য গোলাজাত করিয়া তাহার উপর প্রায় একচেটিয়া প্রভুত্ব করিয়া থাকেন। তাহদের এইরূপ প্রভূত্বাধীন দ্রব্যাদির উপরে তাহারা যে দর নির্দিষ্ট করেন, 886. г