পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१९ যোগ্য। বাঙালায় যাহার এ বিষয়ে লেখনী চালনা করিয়াছেন ও করিতেছেন তাহাদের মধ্যে স্বগীয় সখারাম গণেশ দেউস্কর, শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ সমাদার, রাধাকমল মুখোপাধ্যায় প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। এতদিনকার প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকারী হইয়াও আমাদের অর্থনীতিক সাহিত্য নিতান্ত দরিদ্র । ভাষার বিকাশ সম্বন্ধে চৈনিক ও জাপানী ভাষা সভ্য জগতের বহিদুর্সারে বাস করিলেও অর্থনীতি সম্বন্ধে উভয় ভাষাতেই বছগ্রন্থ অনূদিত ও রচিত হইয়াছে। বাঙলাভাষ৷ *gai-sto ( Indo-European ) ভাষাসমূহের মধ্যে একটি প্রধান ভাষা ; জনসংখ্যার হিসাবে ধরিলে নুনাধিক সপ্তকোটি লোক এই ভাষায় কথা বলে ; সমাদরের দিক দিয়া দেখিতে গেলে ইহা বিশ্বের সভায় নোবেল পুরস্কারে সমাদৃত হইয়াছে; স্বতরাং কোনো দিক দিয়াই ইহাকে উপেক্ষার চক্ষে দেখা চলিতে পারে না। অর্থনীতিবিজ্ঞানের উপযোগী শব্দের অভাব হইবে এরূপ আশঙ্ক৷ অমূলক। সংস্কৃতরত্নাকর ছাড়া উর্দু, ফাসি শব্দসমূহ আমরা অবাধে লইতে পারিব ; আবখ্যক হইলে নূতন শব্দ রচনা করা যাইতে পারে, নিতান্ত শ্রুতিকটু না হইলে ফরাসী, ইংরেজী, জাৰ্ম্মান ও ইটালীয় শব্দ ও প্রচলনের চেষ্টা করা যাইতে পারে। এজন্য বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষং যাহাতে অবিলম্বে একটি “অর্থনৈতিক শাখ।” স্থাপিত করেন তাহার চেষ্টা করিতে হইবে। শ্ৰীযুক্ত যদুনাথ সরকার মহাশয়কে এই শাখার সভাপতি করিলে সমীচীন হইবে । আচাৰ্য্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও ঐযুক্ত যদুনাথ মজুমদার (যশোহর , এই সভার সহকারী সভাপতি অথবা সম্মানিত সভ্য থাকিলে খুব ভালো হয়। শীল মহাশয়ের প্রজচ্যভাষায় জ্ঞান, রায় মহাশয়ের ব্যবসায়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও শব্দজ্ঞান, ও মজুমদার মহাশয়ের প্রধান প্রধান ভারতীয় ভাষাসমূহে ব্যুৎপত্তি অর্থনীতিসম্বন্ধীয় পরিভাষা স্থষ্টি করিবার পক্ষে বিশেষ সাহায্য করিতে পারে। সার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের ন্যায় কৰ্ম্মীলোকের সহযোগিতাও একান্ত আবশ্বক। বাঙলদেশের মধ্যে ও বাহিরে বিভিন্ন কলেজে যে-সকল বাঙালী অধ্যাপক অর্থনীতি পড়াইতেছেন উহাদের এই প্রবাসী-শ্রাবণ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড সভার সভ্য হইতে নিমন্ত্রণ করা হউক। এতদ্ব্যতীত যাহারা স্বাধীনভাবে অর্থনীতির চর্চা করিয়া থাকেন উাহ{ দের সহযোগিতা সাদরে আহবান করা হউক। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্রের চতুপাশ্বে যেমন পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী যুবকদিগের একটি মণ্ডলী রচিত হইয়াছে, আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্রকে বেষ্টন করিয়া যেমন রাসায়নিকমণ্ডলী পুষ্ট হইতেছে, তেমনি আচাৰ্য্য যদুনাথ অথবা তত্ত্ব ল্য কাহাকেও মধ্যস্থ রূপে গ্রহণ করিয়া অর্থনীতির অনুশীলনে একদল যুবককে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। পূৰ্ব্বোক্ত উদেখা সাধনের নিমিত্ত উক্ত যুবকদিগকে কামার কুমোর তেলি মুদী মাঝি মজুর কাসারি শাখারি স্যাকর গন্ধবণিক জেলে চাষ প্রভৃতির সঙ্গে মিশিতে হইবে, এবং তাছাদের ব্যবসায় ও জীবনযাত্রার বৃত্তান্ত প্রকাশিত করিতে হইবে । বঙ্গের বিভিন্ন অংশ হইতে এই সকল বৃত্তান্ত সংগ্ৰহ করিয়া তাহার সার সঙ্কলন করিতে হইবে। এই সকল লোকের মধ্যে কি পরিমাণ শিক্ষার বিস্তার হইয়াছে ও অন্তত: আরো কতটুকু হইলে অপেক্ষাকৃত অল্পসময় শ্রম করিয়া অধিকতর অর্থ-উপার্জনে ইহারা সমর্থ হইতে পারে তাহ নিৰ্দ্ধারণ করিতে হইবে । যে-সকল ছাত্র অর্থনীতি অধ্যয়ন করিতেছেন তাহার অবকাশমত শ্রমজীবীদের সঙ্গে পরিচয় স্থাপন করিবার চেষ্টা করিবেন। ইহাতে তাহদের ইজং যাইবে না। ভারতের কোটি কোটি নরনারী সহায়ভূতি ও শিক্ষার অভাবে নিতান্ত হীন ভাবে দিন যাপন করিতেছে ; উহাদের দারিদ্র্য ও অজ্ঞতার জন্য আমরা অংশতঃ দায়ী । উহাদের অপরিচ্ছন্নতা ও আনুষঙ্গিক ব্যাধি দূর করিবার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে পারি। পথে, রেলে, নৌকায় ও ষ্টীমারে সময়ে সময়ে যখন আমরা ইহাদের কাছে পাই তখন শুচিতর, উচ্চতর জীবনের আকাঙ্ক্ষা ইহাদের মধ্যে জাগ্রত করিয়া দিবার চেষ্টা করিতে পারি। শুধু বৈজ্ঞানিকের মত অর্থনীতির থিওরি লইয়া মারামারি কাটাকাটি করিলে চলিবে না। ভারতে অর্থনীতির চর্চার অর্থ এই যে, দিন দিন ভারতবাসী সুস্থতা ও সচ্ছলতায় প্রতিষ্ঠিত হইয়া ' উদার জগং-সভ্যতার মাঝখানে আপনার বিশিষ্টসভ্যতার আসনপানি অমানমূপে দাবি করিলে। কয়েক সঙ্গ বা T 8५ म९५n ] কয়েক লক্ষ শিক্ষিত লোক লইয়া বাঙলাদেশ বা ভারতবর্ষ নহে। যে পরিমাণে আমরা আমাদের চতুষ্পাশ্বস্থ অসহায় নরনারীকে উচ্চতর মনুষ্যত্বের আস্বাদনমুখে স্বর্থী করিতে পারিব সেই পরিমাণে আমাদের অর্থনীতির অমুশীলন সার্থক হইবে। অর্থনীতি পাথেয় মাত্র, উদ্দিষ্ট তীর্থ নহে , একথা সৰ্ব্বদা মনে জগন্ধক রাখিতে হইবে। বাঙলাদেশে ও উহার বাহিরে আজকাল কলের ছড়া ছড়ি। বহুসংখ্যক পুরুষ ও নারী এই সকল কলে কাজ করে। অনেক স্থলে এই-সকল কল যুরোপীয়দের সম্পত্তি ; তথাপি ইচ্ছা করিলে যুবকগণ এই সকল কলবাড়ী দেখিয়৷ আদিতে পারেন এবং তাহার বিবরণ কাগজে প্রকাশ করিতে পারেন। শ্রমজীবীগণ প্রত্যহ কয় ঘণ্ট থাটে ও কি হারে মজুরী পায় ; কলঘরে আলো ও বাতাস আসে কি না ; ঘরের মেঝে শুষ্ক কিংবা স্যতানে ; পুরুষ ও স্ত্রীলোক একসঙ্গে কাজ করে কি না, তাহদের নৈতিক অবস্থা কিরূপ; গর্ভবতী ও দুগ্ধপোষ্য-সন্তানবতী নারী কাজ করে কি না ; সন্তানবতী সস্তানকে কোথায় রাখিয়া আসে ; ইহাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্রামগৃহ ও পায়খানা আছে কি না ; শ্রমজীবীগণের মধ্যে শতকরা কতজন পড়িতে পারে ; নিকটে তাড়িখানা আছে কি না ; কতদূর হইতে ইহার কাজে আসে ; প্রত্যেক পুরুষের সাপ্তাহিক আয় ও তাহার পরিবারের ব্যয়ের আভাস , তাহারা কি কি সামগ্ৰী আহার করিতে পায় ও তাহদের প্রত্যেকের কয়পানি কাপড় ও জামা আছে ; 'জুত থাকিলে কয় জোড়া ; পুত্র কন্যা থাকিলে তাহারাও কাজ করে কি না ; সৰ্ব্বাপেক্ষ কমবয়স্ক মজুরের বয়স (বালক অথবা বালিকা) , নিকটে নৈশ বিদ্যালয় আছে কি না ; শ্রমজীবীদের মধ্যে কতজন সেখানে গিয়া থাকে ; বৎসরের মধ্যে রবিবার ছাড়া আর কত দিন তাহার ছুটি পায় ; ছুটির সময়ে তাহারা অন্য উপায়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে কি না ; বার্ষিক আয়ব্যয় ; প্রধান প্রধান রোগ, ও তাহার চিকিৎসার উপায় ও ব্যয় । ইহা ব্যতীত আরো অনেক বিষয়ে তাহার } অনুসন্ধান করিয়া নোট লইতে পারেন। বলা বাহুল্য | ধতক্ষণ র্তাহার কলবাড়ীতে থাকিবেন অন্ততঃ ততক্ষণ বঙ্গে অর্থনীতির চর্চা 845 কোনোরূপ প্রতিকুল মন্তব্য প্রকাশ করিবেন না, এবং বাহিরে আসিয়া ঐ বিষয়ে আলোচনা করিতে হইলে, বিশেষ কারণ না ঘটিলে, সাধারণভাবেই আলোচনা করিবেন, নতুবা অন্যান্য ছাত্রের পক্ষে প্রবেশলাভ কঠিন হইবে । এই সকল শ্রমজীবীদের সহিত ভাবের আদান প্রদান করিলার প্রকৃষ্ট স্থান গ্রাম্য হাট ও বাজার। গ্রীষ্মের ও পূজার ছুটিতে ও অন্যান্য অবকাশকালে ছাত্রগণ ইহাদের নিকট তাহাদের জীবনের আদর্শ স্পষ্ট করিয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে পারেন। শ্রমজীবীদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তারচেষ্টা একান্ত আব: শুক । বিগত কয়েক বৎসরের মধ্যে এ বিষয়ে চেষ্টা বেশ অগ্রসর হইয়াছে, কিন্তু বিরাট ভারতবর্ষের পক্ষে উহ অতি সামান্য , এই চেষ্টা দ্বিগুণিত হউক ; তাহা হইলে অল্পদিনের মধ্যে শ্রমজীবীদের উপযোগী মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক কাগজ প্রচলন সম্ভবপর হইবে। স্বাস্থ্য, নীতি, ধৰ্ম্ম, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে প্রবন্ধ সহজ ভাষায় লিখিত হইতে পরিবে ও তাহ দ্বারা জগতের আধুনিকতম সভ্যতার সহিত ইহাদের পরিচয় সম্ভবপর হইবে। কৃষকদের নিকট আধুনিক চাষপদ্ধতি ও যন্ত্রব্যবহার সম্বন্ধে প্রস্তাব উপস্থিত করিতে হইবে এবং এ বিষয়ে বাঙলা সাপ্তাহিক কাগজে সৰ্ব্বদা প্রবন্ধাদি লিখিতে হইবে। জমীদারগণের খাসে যে-সকল জমী আছে তাহাতে আধুনিক উপায়ে চাষ আরম্ভ করাইয়। দৃষ্টান্ত দেখাইলে খুব ভালে৷ হয়। যৌথ কারবারসমূহের কার্য্যপ্রণালী, আয়ব্যয় প্রকৃ তির বিবরণ মধ্যে মধ্যে বাঙলায় মুদ্রিত হইয়া বিতরিত হইলে ভালো হয়। যাত্রা, পাচলি ও কথকতায় শুধু স্বদেশ-প্রেমের বাত্ময় উংস খুলিয়া না দিয়া কাজের কথা প্রচার করিবার সময় উপস্থিত হইয়াছে। সদুপায়ে অন্নসংস্থান পার্থিব জীবনের সর্বপ্রথম ও সৰ্ব্বপ্রধান কথা । থিওরির রাজ্যে ভারত সহজেই প্রবেশলাভ করিতে পারে ; সেই থিওরি প্রয়োগ করিবার ও তাহার ফল প্রত্যক্ষ করিবার সাহস ও শক্তি আমাদের আছে কি না তাহা আমরা অচিরেই বুঝিতে পারিব। দুনিয়ার সর্বত্র শ্রমেমূলধনে দৌলত বাটিয়া লইতেছে, শুধু ভারতবর্ষে দৌলত ( অতি সামান মাহ আছে ) এক শ্রেণীর লোকের এক