পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(*२ বলিয়া প্রদর্শিত হইবে । বৈষ্ণবগণ বলিয়া থাকেন ইহাই শ্ৰীকৃষ্ণের স্বরূপ, ইহাতে তাহার পদচিহ্ন অঙ্কিত আছে। গোবৰ্দ্ধন বৃন্দাবন হইতে প্রায় ১৮১৯ মাইল । মানসী গঙ্গা,—ইহ গোবৰ্দ্ধনের অন্তর্গত একটি দীর্ঘ দীর্ঘিকা। এইরূপ প্রবাদ অাছে গোপরাজ নন্দের গঙ্গাস্বানের ইচ্ছা হওয়ায় শ্ৰীকৃষ্ণ ইহার স্বজন করেন । ইহা পরম রমণীয় হ্রদ, চতুর্দিকে পাথরে বাধান। প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ গগ, ১ম খণ্ড । তের বাস। শুনিয়াছি চেষ্টা করিলে তথায় এখনও অনেক প্রাচীন দুষ্পাপ্য পুথি পাওয়া যাইতে পারে। আমার তথায় অবস্থিতিকালে বৃন্দাবননিবাসী আমার কোন আত্মীয় ভট্টাচার্য্যের নিকট হইতে চেষ্টা করিয়া একখানি অতি প্রাচীন হস্তলিখিত শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা দেখিয়াছিলাম। আমার ংস্কৃতজ্ঞান নাই, সুতরাং তাহার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলিতে অক্ষম, কিন্তু তাহাতে যে-সকল বহুবর্ণে চিত্রিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হস্তঅঙ্কিত চিত্র দেখিয়াছি তাহ। চৌষটি মহান্তের সমাজ । কুসুম-সরোবর,—গোবৰ্দ্ধন অতিক্রম করিয়া আরও কিছুদূর অগ্রসর হইলে একটি অতি মনোরম স্ববৃহৎ সরোবর দেখিতে পাওয়া যায়, ইহাই কুসুম-সরোবর। এই অতি রমণীয় স্থান দেখিলে মনে হয় বুঝি ইহাই পুরাকালের মুনিঋষি-বাঞ্ছিত তপোবন বা আশ্রম। এরূপ স্নিগ্ধ নিস্তব্ধ সৌন্দর্য্যময়, প্রাণমুগ্ধকর স্থান সচরাচর দৃষ্ট হয় না। কথিত আছে রাধিক। এই সরোবরে কুস্কমচয়ন করিতে আসিতেন । এই পুষ্করিণীতীরে ভরতপুরের রাজার সমাধিমন্দির, উদ্যান প্রভৃতি দর্শনীয়। উক্ত স্থান-সকল ভিন্ন কদম্বখণ্ডি, বৰ্মাণ গ্রাম, নন্দ গ্রাম, বস্ত্রহরণ ঘাট, শৃঙ্গারবট প্রভৃতি স্থানসমূহের সঙ্গেও পৌরাণিক . স্মৃতি বিজড়িত আছে। প্রাচীনপুথি । পুরাকাল হইতে বৃন্দাবনে বহু পওি আমি কখনও ভুলিতে পারিব না এবং তাহার বিষয় না বলিয়৷ থাকিতে পারি না। চিত্রগুলি আহমানিক একখানি পোষ্ঠকাডের আকারের। এত ছোট ছোট চিত্রে কিরূপে একএকটি বিষয় এত সুনিপুণ ও স্বম্পঃভাবে বিবিধ বর্ণসংযোগে অঙ্কিত করিতে কিরূপ তুলিক ব্যবহৃত হইয়াছে তাহাই কল্পনা করিতে পারি ন। শুনিয়াছি সেখানি শতাধিক বর্ষের পূর্বের লেখা, কিন্তু বলিতে কি-চিত্রের বর্ণ ও গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ লেখাগুলি আজিও নূতন বলিয়। মনে হয়। এগুলি অন্য হিসাবে দেখিলেও আমাদের প্রাচীন ললিত শিল্পকলার প্রমাণ দিতেছে। অতি সংক্ষেপে বৃন্দাবনের বাহ্যিক স্কুল বিষয়গুলি বলা হইল। আমার ন্যায় প্রেমভক্তিহীন লোকের চক্ষে বৈষ্ণব কথিত ব্ৰাদি-দেবতা-বাঞ্ছিত শ্রীবৃন্দাবন এখন মোটামুটি উচ্চচূড় দেবালয়াদি-পূর্ণ যমুনাতীরে একটি সামান্ত নগর। সে ফলে ফুলে ভর, মৃদু-মধুর-বায়ুহিল্লোল-সঞ্চারিত, করিয়াছে তাহ ভাবিলে আশ্চৰ্য্য । হইতে হয়। এত সূক্ষ্ম বিযয় অঙ্কিত | বিহগ-কাকলিতে পূর্ণ, ময়ুর ময়ুরীর কেকারবে মুখরিত । শোভা না দেখিয়া নিরাশ হইতে হয় । কিন্তু ভক্ত সাধকের চক্ষে এখনও সেই বৃন্দাবন, সেই যমুনা । তাহদের বিশ্বাস আজিও সেই নিধু নিকুঞ্জ আদি বনে শ্রীরাধাকৃষ্ণের নিত্য লীলা হইয়া থাকে। এপন ও এমন অনেক বৈষ্ণব আছেন ১ম সংখ্যা ] যাহার মেঘ দরশনে শ্ৰীকৃষ্ণপ্রেমে বিহ্বল হন, শ্ৰীবৃন্দাবনে শ্বরী শ্রীরাধার নাম ভিন্ন অন্য কথা মুখে নাই। এখনও সেখানে অনেক সাধারণ লোক অন্যকে সম্বোধনের জন্য নাম ধরিয়া না ডাকিয় রাধে বলিয়া ডাকে, প্ৰভু ভৃত্যকে, ভৃত্য প্রভুকে রাধে বলিয়া সম্বোধন করে, কি হিন্দু কি মুসলমান এখনও রাত্রিতে রাধে রাধে বলিয়া চৌকি দেয়। হরিহর শেঠ । দাক্ষিণাত্যের মূর্তিশিপ শুক্রচার্য্যের শুক্রনীতিসার অতি প্রাচীন গ্রন্থ । ইহাতে মূৰ্ত্তিশিল্প সম্বন্ধে অনেক জ্ঞাতব্য কথা আছে। শুক্রাচাৰ্য্য বলিতেছেন "মানবের প্রতিকৃতি নিৰ্ম্মাণ বা অঙ্কন করিবে না, তাহাতে মানব-সমাজের কল্যাণ হইবে না। শুধু দেবদেবীর মূৰ্ত্তিই ভাল হউক মন্দ হউক তৈরী করিবে।” কিন্তু আচার্য্যের এই কঠোর আদেশ প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু শিল্পীরা নিৰ্ব্বিরোধে মানিয়া লয় নাই ; বরং তাহারা মহুষ্যকৃতিতে দেবদেবীর নানামূৰ্ত্তি গঠন করিয়া শিল্পনৈপুণ্যবৰ্দ্ধনের চেষ্টা করিয়াছে। বিশেষতঃ দাক্ষিণাত্যের শিল্পীরা দেবদেবীর মূৰ্ত্তি ব্যতীত অন্যান্য বহু মানবমূৰ্ত্তি খোদাই করিয়া গিয়াছে। কোনও কোনও মূৰ্ত্তি এত সুন্দর যে তাহার তুলনায় দেবদেবীর মূৰ্ত্তি সৌন্দর্ঘ্যে ও ভাবপ্রকাশের চাতুরীতে বহু হীন বলিয়া মনে হয়। এইরূপ মূৰ্ত্তি ব্যতীত অন্যান্য মূৰ্ত্তিনিৰ্ম্মাণপ্রথা খ্ৰীষ্ট জন্মিবার বহু পূৰ্ব্ব হইতেই প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ছিল । নবাবিষ্কৃত কবি ভাসের নাটকসমূহে ইহার সমূহ পরিচয় পাওয়৷ যায়। তাহার "প্রতিমা-নাটকে”র তৃতীয় দৃশ্বে প্রতিমাগুহের উল্লেখ দেখিতে পাই। প্রতিমাগুহে অজ, দিলীপ, রঘু ও দশরথের চিত্র ছিল—দশরথের চিত্রদর্শনে ভরত সন্দেহাকুলচিত্তে জিজ্ঞাসা করিলেন “জীবিত ব্যক্তিরও কি মূৰ্ত্তি গঠন করা হয়?” উত্তর হইল “না, শুধু মৃতের ” এইরূপে ভরত দশরথের মৃত্যুসংবাদ জ্ঞাত হইলেন। স্বতরাং মহাকবি ভাসের সময় মৃতব্যক্তি, রাজা মহারাজার মূৰ্ত্তি গঠনের প্রথা বিদ্যমান ছিল। ভাস প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণিক পাণিনির সময় ছিলেন বলিয়া অনেকের মত। অতএব দাক্ষিণাত্যের মূৰ্ত্তিশিল্প ১ । তিরুমাল ও ট্র্যাহার পত্নীগণ । দেখা যাইতেছে খ্ৰীষ্ট জন্মিবার পাচশত বৎসর পূৰ্ব্বেও পারিবারিক চিত্র রক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এইসকল চিত্র অশেষ নৈপুণ্যের সহিত প্রস্তরফলকে খোদিত বা উৎকীর্ণ হইত, কারণ প্রতিমানাটকের উক্ত দৃশ্বেই অন্যত্র দেখিতে পাওয়া যায় যে ভরত খোদিত মূৰ্ত্তিগুলির প্রশংসা করিতেছেন। প্রেমপীড়িত রাজা দুষ্মন্তের দ্বারা শকুন্তলার চিত্র অঙ্কনের . কথা অনেকেই জানেন । শ্রীহর্ষের নৈষধচরিতে পাওয়া যায় দময়ন্তী নিজের ও নলের একখানি যুগলমূর্তি অঙ্কিত . করাইয়াছিলেন । রামচন্দ্রের স্বর্ণসীত নিৰ্ম্মাণের আখ্যা য়িকাও আমাদের অনুমান সমর্থন করে। - - যেসকল দ্রব্য দান করিলে দানপুণ্য সঞ্চয় হয় হেমাদ্রির -