পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যখন তারা বুঝেছিল মাহুষের আসল প্রয়োজনের ভার । খুব বেশি নয়। যুদ্ধ অবসানে সে কথাটা ভুলতে দেরি হয়নি । , অনতিপ্রয়ােজনীয়কে প্রয়ােজনীয় করে তোলা যখন দেশস্থদ্ধ সকল লোকেরই নিত্য সাধনা হয় তখন বিশ্বব্যাপী দক্ষ্যবৃত্তি অপরিহার্ষ্য হ’য়ে ওঠে। লোকসংখ্যাবৃদ্ধির সমস্তা নিয়ে পাশ্চাত্যেরা অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ ক’রে থাকেন। সমস্যাট কঠিন চ’বার প্রধান কারণ হচ্ছে, সৰ্ব্ব সাধারণেরই ভোগ-বাহুল্যের প্রতি দাবী । এত বড় ব্যাপক দাৰী,মেটাতে গেলে ধর্থরক্ষা করা চলে না, মাহষকে মানুষপীড়ক হ’তেই হয় । সেই পীড়ন কার্য্যে ভালে। করে হাত পাকানো হয় দূরস্থ অনাত্মীয় জাতির উপর দিয়ে। এর বিপদ এই যে, জীবন-ক্ষেত্রের যেকিনাৱাতেই ধৰ্ম্মবুদ্ধিতে আগুন লাগানো হোক না সেআগুন সেইখানেই থেমে থাকে না । ভোগী স্বভাবতুই যে-নিষ্ঠুরতার সাধনা করে তার সীমা নেই, কারণ আত্মম্ভরিতা কোথাও এসে বলতে জানে না, "এইবার বল হয়েছে |” বস্তুগত আয়োজনের অসঙ্গত বাহুল্যকেই যে সভ্যতার প্রধান লক্ষণ ব’লে মানা হয় সে-সভ্যতা অগত্যাই নয়ভুক্। নররক্ত-শোষণের বিশ্বব্যাপী চর্চা একদিন আত্মহত্যায় ঠেকবেই এতে আর সন্দেহ করা চলে না । রেলগাড়ির ভোজনশালায় একদিকে যেমন দেখা গেল ভোগের বাহুল্য, আর একদিকে তেমনি দেখলেম কৰ্ম্মের গতিবেগ । সময় অল্প, আরোহী অনেক, ভোজ্যের বৈচিত্রা প্রচুর, ভোজের উপকরণ বিস্তর,—তাই পরিবেষণ কর্মের অভ্যাস অতি আশ্চৰ্য্য দ্রুত হ’য়ে উঠেছে। পরিবেষণের যন্ত্রটাতে খুবই প্রবল জোরে দম দেওয়া হয়েছে। যেটা এই পরিবেষণে দেখা গেল পাশ্চাত্যের সমস্ত কৰ্ম্মচালনার মধ্যেই সেই ক্ষিপ্রবেগ । যে-যন্ত্র বাহিরের ব্যবহারের জঙ্ক, তার গতির ছন্দ দম দিয়ে অনেকদূর পর্য্যন্ত বাড়িয়ে তোলা চলে। কিন্তু আমাদের প্রাণের আমাদের হৃদয়ের ছন্দের একটা স্বাভাবিক লয় আছে, তার উপরে দ্রুত প্রয়োজনের জবরদস্তি থাটে না । দ্রুত চলাই যে ক্রত এগোনো সে কথা সত্য হতে পারে কলের গাড়ির পক্ষে, মাঙ্গুষের পক্ষে না । ૨ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড মাহুষের চলার সঙ্গে হওয়া আছে ; সেই চলাতে হৰয়াতে মিল ক’রে চলাই মানুষের চলা, কলের গাড়ির সে উপসর্গ নেই। আফিসের তাগিদে মুহূর্তের মধ্যে এক গ্রাসের জায়গায় চার গ্রাস খাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু সেই চার গ্রাস ঘড়ি ধ’রে হজম করা কলের মনিবের হুকুমে হ’তে পারে না । গ্রামোফোনের কান যদি ম’লে দেওয়া ষায় তবে যে গান গাইতে চার মিনিট লেগেছিল তাকে শুনতে আধ মিনিটের বেশী না লাগতে পারে কিন্তু সঙ্গীত হ’য়ে ওঠে চীৎকার । রসভোগ করবার জন্যে রসনার নিজের একটা নিৰ্দ্ধারিত সময় আছে ; সন্দেশকে যদি কুইনীনের বড়ীর মতে টপ ক’রে গেলা যায় তা হ’লে বস্তুটাকে পাওয়া যায়, বস্তুর রস পাওয়া যায় না। তাঁরবেগে বাইসিক্ল ছুটিয়ে যদি পদাভিক বন্ধুর চাদর ধরি তা হ’লে বাইসিকূলের জয় পতাকা হাতে আসবে, কিন্তু বন্ধুকে বুকে পাবার উপায় সেটা নয়। কলের বেগ বাইরের দরকাবে কাজে লাগে, অস্তরের দাবী মেটাবার বেলায় অস্তরের ছন্দ না মানলে চলে না। বাইরের বেগ অস্তুরের ছন্দকে অত্যন্ত বেশি পেরোয় কখন ? যখন বাহ প্রয়োজনের বড় বড় বাড়ে। তখন মানুষ পড়ে পিছিয়ে, কলের সঙ্গে সে তাল রাখতে পারে না। যুরোপে সেই মাতুষ ব্যক্তিটি দিনে দিনে বহু দূরে পড়ে গেল ; কল গেল এগিয়ে। তাকেই সেখানকার লোকে বলে অগ্রসরতা, প্রোগ্রেস । সিদ্ধি, যাকে ইংরেজিতে বলে সাক্সেস, তার বাহন যত দৌড়ে চলে ততই ফল পায় । যুরোপের দেশে দেশে . রাষ্ট্রনীতির যুদ্ধ-নীতির বাণিজ্য-নীতির তুমুল ঘোড়-দোঁড় চলছে জলে স্থলে আকাশে । সেখানে বাহ প্রয়োজনের গরজ অত্যন্ত বেশি হ’য়ে উঠল তাই মন্থন্তত্বের ডাক শুনে কেউ সবুর করতে পারছে না। বীভৎস সৰ্ব্বভূক পেটুকতার উদ্যোগে পলিটিক্স নিয়ত ব্যস্ত। তার গাঠ-কাট ব্যবসায়ের পরিধি পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে। পূৰ্ব্বকালে যুদ্ধ বিগ্রহের পদ্ধতিতে ধর্শ্ব-বুদ্ধিযেখানে মাঝে মাঝে বাধা খাড়া ক’রে রেখেছিল, ডিপ্লমালি সেখানে আজ লাফ-মারা hurdle race খেলে চলেছে। সবুর লয় না ষে । বিযবায়ুবান যুদ্ধের অন্ত্ররূপে যখন এক পক্ষ ব্যবহার করলে