পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুন-বাদী শ্রী অরবিন্দ দত্ত পঞ্চম পরিচ্ছেদ কানাইলাল যে ভদ্রলোকটির ঔষধ আনিতে গিয়াছিল, তাহার নাম গণপতি মিত্র। পূৰ্ব্বে হুগলি জেলায় তাহার বসতি ছিল । এখন ঘাটালে একটুকুর জমি লইয়া— সেইখানেই সামান্ত-রকমের একটি বাড়ী প্রস্তুত করাষ্টয়া ছিলেন এবং তথাকার বাসিন্দী হুইয়া পড়িয়াছিলেন। স্ত্রী ও দুইটি কন্যা সন্তান ব্যতীত সংসারে তাহার আর কোনো বন্ধনই ছিল না । বড় মেয়েটির বিবাহ হইয়া গিয়াছিল। ছোটোটির নাম নলিনী ; সে একাদশ বৎসরে পড়িয়াছিল। কানাইলাল ইপিাইতে-ক্টাপাইতে আসিয়া উপস্থিত হইল । গণপতির হস্তে ঔষধ-দুটি দিয়া কহিল, “অনেক দূব যেতে হয়েছিল, বড় দেরি হ'য়ে গেছে । আমার মা বোধ হয় এ-গাড়ীতে যেতে পারেননি। আমি একবার দেখা ক’রে আসি। এসে আপনাদের শুশষ কবুর ' গণপতি কহিলেন, “আপনাকে আর কি ল’লে ধন্যবাদ দেবো ? যদি পারেন ত একবার এসে দে’খে যাবেন ।” কানাই দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। আসিয়া দেখিল, গাড়ীথান চলিয়। গিয়াছে । তাঙ্গার হৃদয়ের স্পন্দন অত্যন্ত দ্রুত হইয়া উঠিল, কিন্তু তখনও তাহার মনে ভরসা ছিল যে, মাতৃস্নেহের অচ্ছেদ্য সম্পর্কটা এমন সহজে যায় না । মহেশ্বরী কোথাও-না-কোথাও আশ্রয় লইয়া তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছেন । সে প্লাটফর্শের একপ্রাস্ত হইতে অন্য প্রান্ত পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্রই ঘুরিয়া-ঘুরিয়া আসন্নমৃত্যু-লোকের মায়াজড়িত চক্ষু-দুটির মতো তাহার চক্ষু দুটি সকলের দিকে খুরাইতে-ফিরাইতে লাগিল । যখন কোথাও তাহাদের দেখিতে পাইল না, তখন সে বিশ্রাম-গৃহগুলি তন্ন-তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়া আসিল ; এবং তৃষিত চাতকের মতো নবাগত যাত্রীদের প্রতিও কিছুকাল ‘ই’ করিয়া চাহিয়া রহিল । অবশেষে সজোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া সে গঙ্গার ঘাটে আসিয়া বসিল ; এবং হঠাৎ একটা পরিবর্তনের পথে আসিয়া সে একেবারে দিগ বিদিগ জ্ঞানশূন্ত হইয়া পড়িল । খাইতে, শুইতে, উঠিতে, বসিতে যে মহেশ্বরীকে তাহার একান্তই প্রয়োজন। এক 8 سمصت 8 মাত্ৰ মহেশ্বরীই তাহাকে জগতের সম্মুখে পরিচিত করিয়া রাখিয়াছেন। মহেশ্বরীর অভাবে জগতের সহিত তাহার কোনো সম্বন্ধই নাই । আনন্দের সহিত বেদন যে এমন জট পাকাইয়া জড়াইয়া থাকিতে পারে, যাহাদের জীবনগীতি অন্য যন্ত্রের সাহায্যে বাজিতে থাকে, তাহারা তাহা বুঝিতে পারে না । বাতাসের ঘেরটার বাহিরে যে দম্আটক পড়িবার একট। সঙ্কট-স্থান আছে, তাহা তাহীদের চক্ষে সত্য এবং পাকাপাকি হইয়া পড়ে তখনই—যখন তাহারা অবস্থার গতিকে আপনার সমস্ত পুঁজিপাট লইয়া সেখানে যাইয়া উপস্থিত হয়। হঠাৎ এই পরিবর্তনের মধ্যে পড়িয়া কানাইলালের বিচার-বুদ্ধি ও হিতাহিত জ্ঞান একেবারে বিলুপ্ত হইয়া গেল। সে কেবল অপরের স্বন্ধে ভর করিয়া বাড়িয়া উঠিতেছিল । সে কোনোদিন এমন সন্ধান পায় নাই যে, কিরূপে আপনার বিধি-ব্যবস্থাকে নিজের নিয়মে মিলাইয়া লইতে হয় । গঙ্গাবক্ষের ঢেউগুলি নাচিয়া-নাfচয় তাহাকে যেন পুরষ্কারের ইঙ্গিত জানাইয় আপনাদের গন্তব্যপথে ছুটিয়া চলিতে লাগিল। গঙ্গার পুলের উপর দিয়া পিপীলিকার শ্রেণীব দ্যায় অবিরাম জনস্রোত আপন-আপন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চলিয়াছে । তাহারাও যেন কটাক্ষ করিয়া যাইতেছে যে, “আপনার ব্যক্তিত্বকে অন্তোর হাতে বিলাইয়া দিয়া এই কৰ্ম্মক্ষেত্রের সমরলীলায় পঙ্গুর মতো বসিয়া থাকিলে চলিবে না । মায়ার বোঝা মস্তকে লইয়া শক্তি অপচয় করিলে নিজেকেই নিঞ্জীব করিয়া ফেলিবে ।” সে মনে-মনে বলিতে লাগিল “ইহারা এমন অস্কায় ইঙ্গিত করিতেছে কেন ? বোধ হয়, ইহারা মাতৃস্নেহ পায় নাই । তাই কল্যাণময়ী জননীর পদতলে শক্তির অপচয় করিবার যোগ্যতা পাওয়া যে কত বড় শক্তিলাভ তাহা ইহারা জানে না ।” কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গে তাহার মনে একটা অভিমানও জাগিয়া উঠিল । তাঙ্কার দৃষ্টির বাহিরে, সম্পূর্ণ ইচ্ছার প্রতিকুলে যাহা সংঘটিত হইল, তাহার কারণ যাহাই হউক না কেন—মহেশ্বরীর অপরাধের সন্ধানে তাহার চক্ষু-দুটি