পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ সাম্প্রদায়িক অসদ্ভাব মনোমালিন্য প্রভৃতি যেরূপ ছিল, এখন তাহা অপেক্ষা অধিক হইয়াছে । ভারতীয়দের দ্বারা অনুমিত বা নির্দিষ্ট কারণগুলা যদি সত্য কারণ না-হয়, তাহা হইলে সত্য কারণ কি ? প্রতিকারই বা কি ? ইংরেজ জাতি ব্যাধি নির্ণয়ের ও তাহার চিকিৎসার কি চেষ্টা করিয়াছেন বা করিতেছেন ? তাহারা বলিতেছেন, ব্যাধিটা আছে বলিয়াই তাহারা ভারতবর্ষে আছেন। ব্যাধিটা চিরকাল থাকিবে, এবং হয়ত বাড়িয়া চলিবে এবং তাহারাও চিরকাল প্রভু হইয়া থাকিরেন, ইহা বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না—অস্ততঃ আমরা আমাদের দিক হইতে ইহা বাঞ্ছনীয় মনে করি না । আমরা মনে করি, র্তাহারা যদি বাস্তবিক আমাদের ব্যাধির জন্যই এদেশে আছেন মানিয়া লইতে হয় তাহা হইলে তাহাদিগকে দেখাইতে হইবে, যে, তাহারা ব্যাধির মূল উচ্ছেদ করিতেছেন এবং সেই সাধু চেষ্টায় অন্ততঃ সামান্য পরিমাণেও কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন । মিঃ বেভান কি ইহা দেখাইতে পারেন ? অন্য কোনও ইংরেজ দেখাইতে পারেন কি ? আমাদের কথা এই, যে, আমাদের ব্যাধির মত ব্যাধি অন্য অনেক দেশে ছিল, এখনও কোন কোন দেশে আছে । যেখানে যেখানে তাহার প্রতিকার ও উচ্ছেদ হইয়াছে বা হইতেছে, তাহা সেই সেই দেশের স্বাধীন অধিবাসীদিগের চেষ্ট দ্বারাই হইয়াছে ও হইতেছে, বাহির হইতে আগত এবং ব্যাধিট হইতে লাভবান কোন প্রভুজাতি দ্বারা তাহা হয় নাই, হইতে পারে না । মি: বেভান বলিয়াছেন, ইংরেজরা ইরাকের অভিভাবক ছাড়িয়া আসিবার পর তথাকার বিস্তর আসৗরীয় ( সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বার। ) নিহত হইয়াছে। তিনি যাহা বলেন নাই, তাহা আমরা যোগ করিয়া দিতেছি। যথা— সমুদয় আসৗরীয়কে অন্য কোন দেশে চালান করিয়া দিবার চেষ্ট হইয়া আসিতেছে, নতুবা তাহারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা নিমূল হইতে পারে। মি: বেভানের উক্তির মধ্যে এই ইঙ্গিত আছে, যে, ইংরেজরা ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া গেলে এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা সংখ্যালঘিষ্ঠদিগকে নিমূল বা অন্য কোন দেশে চালান কfরবে। জাতীয় প্রকৃতি হঠাৎ পরিবর্তিত হয় বিবিধ প্রসঙ্গ—পুনার মারুতি মন্দিরে সত্যাগ্রহ RSS না। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ভারতীয় প্রকৃতির কি এরূপ পরিচয় পাওয়া যায়, যে, এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠের সংখ্যালঘিষ্ঠদিগকে নিমূল বা বিদেশে চালান করিয়াছে বা করিবার চেষ্টা করিয়াছে ? বরং ইতিহাস কি ইহাই বলে ন, যে, ধৰ্ম্মবিষয়ক ঔদার্ষ্য ও নানামতসহিষ্ণুতার প্রাচীনতম প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত ভারতবর্ষেই পাওয়া যায়, এবং স্বাধীন ভারতে খ্ৰীষ্টীয় অব্দের গোড়ার দিক্ হইতে ইহুদী, সীরীয়, খ্ৰীষ্টিয়ান, পারসীক প্রভৃতি বিদেশী জাতির আতিথ্য ও আশ্রয় পাইয়াছে ? পুনার মারুতি মন্দিরে সত্যাগ্ৰহ পুনাব মারুতি মন্দিরে হিন্দুরা ঘণ্টা বাজাইয়া পূজা করেন। মারুতি মন্দির হইতে কিছু দূরে মুসলমানদের একটি মসজিদ আছে । সেই কারণে মুসলমানেরা হিন্দুদের এই ঘণ্টা বাজাইয়া পূজায় আপত্তি করে। অনেক জায়গায় মুসলমানের হিন্দুদের মন্দিরে, এমন কি হিন্দুদের নিজেদের বাড়ীতেও, শীৰ্থ বাজানতেও আপত্তি করে । কিন্তু মুসলমানদের মহরম পর্বের সময় ঢাক বাজানতে হিন্দুরা আপত্তি করে বলিয়া শুনি নাই, কোথাও করিয়াছে বলিয়া মনে পড়িতেছে না-করিয়া থাকিলেও সচরাচর করে না । খ্ৰীষ্টিয়ানদের গীর্জার কাছে মসজিদ থাকিলে গীর্জার ঘণ্টধ্বনিতে মুসলমানরা আপত্তি করে বলিয়া শুনি নাই। রেলগাড়ীর উচ্চ ও তীক্ষ সিটিধনি, মোটর গাড়ীর শিঙ্গার শব্দ, ট্রাম গাড়ীর কর্কশ আওয়াজ নিশ্চয়ই অদূরবত্তী মসজিদ হইতে শুনা যায়। কিন্তু এই সকল ধ্বনিতে মুসলমানেরা আপত্তি করে না। আপত্তি কেবল হিন্দুদের ঘণ্টাধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে ! কোন দেশে নানা ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোক বাস করিলে সকল সম্প্রদায়েরই ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করিবার অধিকার সমভাবে রক্ষিত হওয়া উচিত । কোন অনুষ্ঠান স্থনীতিবিরুদ্ধ বা সৰ্ব্ব সাধারণের পক্ষে বিপজ্জনক হইলে তাহা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত । ঘণ্টা ও শস্থের শব্দ তাহী নহে । অবশু তাহা কাহারও কাহারও অপ্রীতিকর হইতে পারে। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক কানের দ্বারা বিচার করিলে তাহা মহরমের ঢাক, গীর্জার ঘণ্টা, রেলগাড়ীর সিটি বা মোটর গাড়ীর শিঙ্গার চেয়ে