পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোরা শ্রীশান্তা দেবী ( २१ ) মিলির গায়ে-হলুদে মহা কোলাহল। সকালবেলাই সকলের চেয়ে জমাট উৎসব লাগিয়াছে। স্বধা ও হৈমন্তীত প্রত্যহই আছে, তাহার উপর মিলির স্নানযাত্রার সমারোহ বৃদ্ধি করিবার জন্য আসিয়াছে স্নেহলত, মনীষা, ইন্দুপ্রভা, পঙ্কজিনী, ইত্যাদি সখীর দল। আত্মীয়-গোষ্ঠীর দুই-চারিঞ্জন মেয়েও জুটিয়াছে। বাকী বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-কুটুম্ব সকলেই নিমন্ত্রণের সময় মত আসিবেন । বিবাহ-উৎসবের দিনে বড় সভায় সামাজিক আইন-কাচুনের বাধনের ভিতর যাহাদের সংযত হইয়া চলিতে হুইবে, আজিকার ঘরোয় উৎসবে সেই তরুণী সখীর দল আদিম মানবীদের মত উন্মত্ত উৎসবে মাতিয়া উঠিয়াছে। তাহারা ভদ্রতার মূখোস টানিয়া ফেলিয়া দিয়াছে। এ যেন হোলির উৎসবের রংখেলা। মনীষা ও ইন্দুপ্রভার কিছুদিন পূৰ্ব্বে বিবাহ হইয়া গিয়াছে, স্বতরাং তাহারাই নেত্রী হইয়া এক-একতাল হলুদ লইয়া মেয়েমহলে বিভীষিকার সঞ্চার করিয়া বেড়াইতেছে । যে তাহাদের সন্মুখে পড়িবে তাহার আর রক্ষা নাই, আগাগোড়া তাহাকে রাঙাইয়া দিয়া তবে ছাড়িবে। বয়স্তাদের ভিতর সুধা, হৈমন্তী ও স্নেহলতারই সকলের চেয়ে দুৰ্গতি বেশী। এখনও অবিবাহিত থাকার অপরাধের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ মনীষা ও ইন্দুপ্রভার সকল অত্যাচার তাহাদের সহিতে হইতেছে। মিলির গায়ে হলুদ দিয়াই যাহার হাতে যত হলুদ ছিল সব গিয়া পড়িল সুধ, হৈমন্তী ও স্নেহলতার মাথায়। বেচাধী স্নেহলতা স্ত্রী-আচারের শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ, তাই একখানা সুন্দর ঢাকাই শাড়ী ও রেশমের পাড়-তোলা ব্লাউস পরিয়া আসিয়াছিল । সর্থীদের অত্যাচারে তাহার সখের কাপড়-জামার যা চেহারা হুইল তাহাতে সাত ধোপেও সেগুলি আর ভঞ্জ-সমাজে পরিবার মত হইবে না। হৈমন্তী বলিয়াছিল, “বেচারীর ভাল কাপড়খানা নষ্ট করে দিলে ?” মনীষা দুই হাতে দুই ভাল হলুদ লইয়া মাথায় কুটি বধিয়া মুখ নাড়া দিয়া বলিল, *গেলষ্ট বা একখানা ভাল কাপড় ! এখনও ত ওর বিয়েই হয় নি। বিয়ে হ’লে কত কাপড়-জামা পাবে, একথানার কথা অড মনেও থাকবে না। এই হলুদ গায়ে পড়া কত ভাগি, ওর পয়েই বিয়ে এগিয়ে আসবে।” g স্বধা বলিল, “ভাগি হোক বা না-হোক, তোমার মত রণরঙ্গিণীর সঙ্গে ত আর ও পারবে না ।” মনীষ বলিল, “ভুলে গিয়েছিলাম ভোর কথা । এখনও অৰ্দ্ধেক কাপড় সাদা, আবার পরের হয়ে ওকালতি । দাড়া, তোকে একটু ভাল ক'রে ছুপিয়ে দি । স্বেহর মুখখানাও একটু সোনার বরণ না হ’লে ভাল দেখাচ্ছে না।" ছুটাছুটি ছড়াকড়ি অনেক হইল, কিন্তু মনীষার হাত হইতে কেহ নিষ্কৃতি পাইল না। স্নেহলত বেচারীর কাপড় ত গিয়াইছিল, তাহার উপর সমস্ত মুখখানাও হলুদে রাঙা হইয়া গেল। স্বধার শাড়ীর পিঠটুকু বাকী ছিল, এবার সেটুকুও রহিল না। পালিত গৃহিণী বলিতে আসিয়াছিলেন, "ওরে, যারা ভাল কাপড়চোপড় পরে এসেছে তাদের শুধু একটা ক'রে কপালে টিপ দিয়ে ছেড়ে দিবি, আমন ক’রে সব ধ্বংস ক'রে দিস নে ৷” মনীষ বলিল, “তা বইকি জ্যাঠাষ্টম, বিয়ে মেট্রেমানষের একবারই হয়, জেনে শুনে যারা ভাল কাপড় পরে আসে তাদের কাপড় বাচাতে গেলে আমাদের আর ফুঠি করা কপালে হয় না। ওদের ত দেবই সং সাজিয়ে, আপনাকেও আজ আমনি ছাড়ব না।” জ্যাঠাইমা বলিলেন, “ওম, আমাকেও কি ছেলেমাচুর্য পেলি কুটুমবাড়ীর লোকের সামনে বেরোব কি ক' । ওই মূৰ্ত্তি করে ?” ইলুপ্ৰভা বলিল, "আহ, কুটুমবাড়ীর লোকেরা সব বিলেতের জাহাজ থেকে এই নামল কিন, গায়ে হলুদ কা ।