পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর } রাহুল সাংকৃত্যায়ন ు তিব্বতে থবরের কাগঞ্জ নাই কিন্তু প্রতি সপ্তাহে “মৌখিক বাৰ্ত্তাবহ*তে এমন অনেক গুজব ও খবর রাষ্ট্র হয় যাহাতে জনসাধারণের মন তুষ্ট হয়। ১৯শে জানুয়ারি খবর পাওয়া গেল যে জনৈক চি-টুঙ ( ভিক্ষু-অফিসর ) এবং তাহার প্রিয়পাত্রী “কলছি লম্মর” গ্রেপ্তার হইয়া লাসায় আসিয়াছে। এই চি-টুঙ তিন বৎসর যাবৎ সপ্তম দলাইলামার শুপাগারের অধ্যক্ষ ছিল। এখানকার নিয়ম যে কোন দলাইলামার দেহান্ত হইলে পোতলা প্রাসাদের কোন গৃহে তাহার জন্য বৃহৎ স্বর্ণরৌপ্যময় স্তুপ নিৰ্ম্মাণ করা হয় এবং র্তাহার জীবদ্ধপায় তাহাকে যে-সব মণিমুক্ত ও অন্যান্ত বহুমূল্য ত্রব্য ভেট দেওয়া হইয়াছিল সে-সবহ সেই সুপমধ্যে প্রোথিত ও রক্ষিত থাকে। প্রতি তিন বৎসর অস্তর এইরূপ প্রত্যেক গুপে এক জন ভিক্ষু কৰ্ম্মচারী (চি-টুঙ) অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৬৪১ খ্ৰীষ্টাব্দে পঞ্চম দলাইলাম স্বমতিসাগর (১৬১৬-১৬৮১ খ্ৰীঃ) ভোটরাজ্য নিজ অধিকারে পাইয়াছিলেন। তখন হইতে বৰ্ত্তমান ত্রয়োদশ দলাইলাম মুনিশাসনসাগর ( খুব-বস্তন্‌-গা-মূছে, জন্ম ১৮৭৪ খ্ৰীঃ) পৰ্য্যস্ত আট জন দলাইলামা দেশে অধিকার পাইয়া গিয়াছেন । ইহাদের মধ্যে সপ্তম দলাইলাম ভদ্রকল্পসাগর ( স্কল্-বসঙগা-মূছে, জন্ম ১৭-৮ খ্ৰীঃ) পূর্ণরূপে সংসার-বিরাগী সাধু ছিলেন। চিত্রে ইহার হন্তে শাসন-চিহ্ন চক্রের বদলে পুস্তক দেওয়া আছে ; ইনি প্রাসাদ ছাড়িয়া, কোন রাজসেবক বা অনুচর সঙ্গে না লইয়াই পৰ্ব্বতে বাস করিতেন। চীন ও তিব্বত—উভয় দেশেই ইহার সম্মান সমরূপ ছিল । সপ্তম দলাইলামার স্তুপে রক্ষিত মহামূল্য ধনরত্নাদি গত তিন বৎসর উক্ত চি-টুঙ-এর হস্তে গুপ্ত ছিল। এই ঘটনার কিছুদিন পূৰ্ব্বে দাৰ্জিলিঙ হইতে কয়েকটি ভূটিয়ানী স্কুন্দরী রূপ-জীবিকার চেষ্টায় ও-দেশে যায়। তাহাদের f মধ্যে কন্‌চি লম্মর ও এই চি-টুঙের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল তাহা সকলেই জানিত । আশ্চর্যের বিষয়, কনছি প্রকাশুভাবে পচিশ হাজার টাকা মূল্যের মুক্তময় শিরোভূষণ পরিয়া বেড়াইলেও উচ্চতম অধিকারীদিগের সন্দেহ হয় নাই যে উক্ত চি-টুঙ স্তুপ হইতে মণির বিক্রয় করিতেছে। কয়েক সপ্তাহ পূৰ্ব্বে, তিন বৎসর পর যখন তাহার বদলির সময় ঘনাইয়া আসিল, তখন সে প্রাণ বাঁচাহবার জন্য পলায়নের পথ খুজিতে লাগিল। সে এবং কন্‌ছি লম্বর নিৰ্ব্বোধের মত ঘোড়ায় চড়িয়া চীনদেশের পথে রওয়ান হয় । যদি তাহার। দঞ্জিলিং যাইবার চেষ্টা করিত তবে দশ দিনের মধ্যেই তাহাদের কার্য্যসিদ্ধি হইয়া যাইত, কেননা, তাহারা পলাইবার তিন সপ্তাহ পরে উচ্চতম কৰ্ম্মচারীদ্বিগের ছস হয় যে ঐ চি-টুঙ কাৰ্য্যস্থলে নাই। আরও নিৰ্ব্বোধের মত তাহারা প্রায় দুই সপ্তাহ লাসা এব: আশপাশের জায়গায়, বন্ধুবান্ধবের ঘরে, পানাহারে * প্রমোদে কাটায়। যথন খবর পাওয়া গেল যে খোজ আরম্ভ হইয়াছে তখন তাহারা চীনদেশের পথে, লাস হইতে তিন-চার দিনের রাস্তায়, এক নির্জন পৰ্ব্বতময় অঞ্চলে লুকাইয়া থাকে। কয়েক দিন লুকাইয়া থাকিবার পর খাদোর সন্ধানে এক গ্রামে যাইবার সময় দু-জনেই গ্রেপ্তার হয় । লাসায় আসিলেই প্রথমে দু-জনের উপর নিৰ্ম্মমভাবে বেত চলিতে আরম্ভ করে। চিটুঙ ও কন্‌ছি সহজে কিছু কবুল করে না, বরঞ্চ বন্ধুবান্ধবের রক্ষার চেষ্টাই করে । কিন্তু “মারের চোটে ভূত ছাড়ে,” সুতরাং নিরস্তর প্রহারের ফলে তাহার লোকজনের নাম বলিতে আরম্ভ করে । দামী জিনিষের অধিকাংশ তত দিনে কলিকাতা—কি হয়ত সমুত্রপারে লগুন-প্যারিসে–পৌঁছিয়া গিয়াছে। একটি অতি মূল্যবান মুক্তার মালা লইয়া এক সওদাগর লাসা ছাড়ি নেপাল চলিয়া যায়, সেই মালার প্রশংসা চারি দিকে ছড়ায় পড়ে। তবে অল্পস্বল্প করিয়া অনেক মণির চিটুডে।