পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ههد প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১se৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড সংিত অতিথিরূপে গ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় সময় স্থানীয় গায়ক ও বাদকদের আহবান করা হইয়াছিল এবং অনেকক্ষণ গানবাজনা হয়। আমাদের গানের সহিত তাহাদের গানের স্বর মেলে না এবং বোল বাণীরও স্থানে স্থানে প্রভেদ দৃষ্ট হয়। তবে রামশঙ্কর মিশ্র মহাশয়ের স্বরচিত গানগুলি স্বরে এবং লয়ে আমার ভাল বলিয়া বোধ হইল। আমি গুরুদ্বেষের আদেশানুসারে ৩৪ খানি গান মিশ্র মহাশয়ের একজন ছাত্রের নিকট শিক্ষা করি। সেখানকার একজন গায়ক একটি আশাবরী গান করিয়াছিলেন। আমি পূর্বে উহা গোপাল চক্রবর্তী ( মুলো-গোপাল ) মহাশয়ের নিবট শুনিয়াছিলাম। এটি রাগমালার গান, অর্থাৎ কল্যাণ, ভূপ, শঙ্করা e হিণ্ডোল, এই চারি রাগে চারি পদ গাওয়া যায়। চারি তালেও চারি পদ গাওয়া বায় ; এক-একটি রাগেও চারি পদ গাওয়া যায়। উহা মৎপ্রণীত অন্ত পুস্তকে দিখাছি বলিয়া এখানে উদ্ধত করিলাম না । বৈজু পওরার গান কিরূপে নষ্ট হইয়াছে বুঝিবার উপায় নাই। আমি এই গান পরে উক্ত চক্ররর্তী মহাশয়ের নিকট শিক্ষা করি । বিষ্ণুপুর হইতে আমরা হেতমপুরে আসি, কিন্তু সেথানে কোন গায়ক ( পশ্চিমের শিক্ষা) দেখিলাম না। সৰই বিষ্ণুপুরী ঢং। একদিন গান-বাজনা হইয়াছিল ; পরদিন আমরা কাশী রওনা হই । (8) কাশী আসিয়া আমাদের শিক্ষা ও সাধনা পূৰ্ব্ববং হইতে লাগিল। কিছুদিন পরে শুনা গেল কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশয় নামক একজন গায়ক সাশষ কাশীতে আসিয়াছেন । তিনি ধ্রুপদ গানও করিতে পারেন এবং সেতারও বাজাইতে পারেন । বাঙ্গালীটোলায় আনন্দচন্দ্র সেন মহাশয়ের বাটীতে তাহার গান হইয়াছিল ; আমরাও উপস্থিত ছিলাম। বন্দ্ব্যোপাধ্যায় মহাশয়ের গলার স্বর অত্যস্ত উচ্চ এবং মোটা ; তাম্বুরার স্বর নীচে থাকে ; ক্রমে শুনা গিয়াছিল। তিনি ইংরেজী সঙ্গীত ভক্ত। যাহা হউক তাহার গান লয়ে স্বরে ভাল বলতে হইবে। আমাদের গানও হইল ; গুরুদেব নুতন নুতন গান করিলেন, আমরা সঙ্গে সুর দিতে লাগিলাম। পরে আমি ও নিমাই জুড়িতে গান করিয়াছিলাম, কৃষ্ণধন-বাৰু রামদাস-বাবুর গান শুনিয়া বলিলেন, “গোট কতক ধ্রুপদ আমি স্বরলিপি করিয়া শিক্ষা করিতে ইচ্ছা করি ; আকুমতি পাইলে আপনার নিকট যাইব ।” গুরুদেব বলিলেন, “তাহাতে কি আপত্তি হইতে পারে ? তবে স্বরলিপি দ্বারা কি শিক্ষণ হইবে বুঝডে পারি না।” কৃষ্ণধন-বাৰু তদুত্তরে একটি বক্তৃত সংক্ষেপে দিলেন এবং বললেন যে, স্বরলিপি ভিন্ন বিদ্যা রক্ষা করিবার অস্ত্য কোন উপায় নাই। গুরুদেব বলিলেন, “স্বর পুস্তক দেখিয়া শিক্ষা হয় না, গুরু সমীপে সাধনার দ্বারা শিক্ষা হয়। তবে আপনারা যদি স্বর সাধনা উঠাইয়া দিতে চাহেন তাহা হইলে ভিন্ন কথা।” কৃষ্ণধন বাবু বলিলেন,"এসমস্ত বিষয়ে আপনার বাটিতেই কথাৰাওঁ হইবে । আমি কল্য আপনার বাড়ীতে প্রাতে যাইব ।” পরদিন যথাসময়ে কৃষ্ণধন বাবু গুরুদেবের বাড়ীতে আসিলেন, আমরা "আনন্দী জগবন্দী” দেশকার রাগে শিক্ষা করিতেছিলাম। কৃষ্ণধন-বাবু স্বরলিপি করিলেন। গুরুদেব র্তাহাকে গাহিতে অকুরোধ করায় তিনি গান করিলেন,—আকাশ-পাতাল প্রভেদ । আমরা আবার গান করিলাম ; কৃষ্ণধন-বাবু পুনরায় স্বরলিপি পরিবর্তন করিলেন এবং তদকুযায়ী গান করিলেন। অনেকটা হইল বটে, কিন্তু স্বর ও তাল কাট কাটা বোধ হইতে লাগিল। গুরুদেব বলিলেন, স্বরলিপি সাহায্যে গান শিক্ষার কোনই সম্ভাবনা নাই, পরস্তু গানগুলির স্বর জবাই করা হয়। কৃষ্ণধন-বাবু পুনঃপুনঃ নিজেরই কথা অর্থাৎ স্বরলিপি ভিন্ন উপায়াস্তর নাই বুঝাইতে লাগিলেন। গুরুদেব অগত্য। এই কথাগুলি বলিয়। নিস্তব্ধ হইলেন,“তাহ। হইলে সাধনা ও গুরু,এই দুইটি শব্দ তোমরা উঠাইয়া দিতে সঙ্কল্প করিয়াছ ” কৃষ্ণধন-বাবু আরও দুই তিনখানি গান স্বরলিপি করিয়া সে-যাত্র। চলিয়া গেলেন । বলিয়া গেলেন, "এক বৎসর পরে আমি পুনরায় আসিব এবং ভাল ভাল গানগুলির স্বরলিপি করিয়া লইব ।” কলিকাতায় মহাপ্রদর্শনী সভা ধে-বৎসর হয় সেই বৎসরে কৃষ্ণধন-বাৰু কাশীতে আসিয়াছিলেন। তিনি ১•১৬