পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

HIV প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৪ [ २१* छां★, sञ थ७ শিবপূজার জন্য ব্যয়িত হবে। তিনি ভবিষ্যৎ রাজাদের উদ্দেশ ক’রে এই কথা বলেন যে, যেন কোন রাজা এই দেবোত্তর দানের উপর হস্তক্ষেপ না করেন। মুখের বিবয়— র্তার এই প্রার্থনা বিফল হয় নি, কারণ আমরা জানি র্তার পরে অনেক রাজা ঠিক এই জায়গায় অনেক মন্দির স্থাপন করেছেন ও সেইসব মন্দিরের ব্যয় নিৰ্ব্বাহের জন্য আরও অনেক দেবোত্তর জমি ও অর্থদান করেছেন। সেইসব মন্দিরের ধংসাবশেষ এখনও দেখতে পাওয়া যায়। এই রকমে হিন্দুধৰ্ম্ম, বিশেবতঃ শৈবধৰ্ম্ম, চম্পাদেশে প্রাধান্ত লাভ করল। চম্পায় হিন্দুধর্মের এই যে বিস্তার, তার কারণ হয়ত এই যে, হিন্দুধৰ্ম্ম সে সময় এই হিন্দু উপনিবেশে রাজধৰ্ম্ম হয়েছে। হিন্দুধৰ্ম্ম রাজার ধৰ্ম্ম হওয়াতে, সেখানকার সাধারণ লোকেদের মধ্যে সেই ধৰ্ম্ম গ্রহণ করবার একটি আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। আর হিন্দুধৰ্ম্ম বোধ হয় সাধারণ লোকেদের মনকে তার পূজাপদ্ধতি ও উৎসবের মধ্য দিয়ে জয় করতে পেরেছিল। এতক্ষণ আমরা চম্পাদেশকে "হিন্দু উপনিবেশ” ব’লে বর্ণনা ক’রে এসেছি। কিন্তু এখানে উপনিবেশ ঠিক বর্তমান অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। ভারতবর্ষ থেকে প্রথমে একদল বণিক সে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যায়, পরে একদল ভারতবাসী কোন উপায়ে সেথানকার রাজশক্তি হস্তগত করে । সেখানে এই রকমে হিন্দুরাজ্য সংস্থাপিত হ’বার পর, সেইসব হিন্দুদের কিন্তু স্বদেশের সঙ্গে কোন সম্বন্ধই রইল না। ভারতবর্ষের কোন রাজা বা সম্রাট তার প্রজাদের দ্বারা স্থাপিত এই রকম কোন উপনিবেশের উপর নিজের অধিকার বিস্তার করেন নাই। সেখানকার হিন্দুরাও স্বদেশের কোন রাজার সঙ্গে যোগ রাখবার চেষ্টা করেন নি। এই রকমে শু্যামদেশ বল, বা কাম্বোডিয়া বল, বা চম্প বল, সবদেশই স্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হ’য়ে পৃথক পৃথক্ রাজ্যরূপে গ’ড়ে উঠেছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে বড় বড় রাজা বা একছত্রাধিপতি সম্রাট যারা হয়েছিলেন, তাদের রাজ্য ভারতবর্ষের বাইরে বোধ হয় বিস্তৃত হয়নি। আর তাদের রাজ্য বা সাম্রাজ্যও তাদের মৃত্যুর পর অধিককাল স্থায়ী হয়নি। ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারাই যেন আলাদা আলাদা ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠা ; সেই ধারা ভারতবর্ষের বাইরে গিয়েও হাজির হয়েছিল । তাই যখন হিন্দুরা ভারতের বাইরে গিয়ে রাজ্য ব। উপনিবেশ স্থাপন করলে, তখন সেগুলি পৃথক রাজ্য রূপে পরিণত হ’ল । তারা সে সময়কার নিজেদের দেশের . কোন রাজাকে অধিপতি ব’লে স্বীকার ক’রে নিল না, বরং নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে। তার ফলে এই হয়েছে যে ভারতবর্ধ তার উপনিবেশের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ যোগ রাখতে পারেনি। সেইজন্যে ভারতবর্ষ যে তার সস্তানদের এদেশের বাইরে কোন উপনিবেশ স্থাপন করতে পাঠিয়েছিল ভারতবর্ষে তার কোন প্রমাণ আমরা এখন খুঁজে পাচ্ছি না। যা কিছু প্রমাণ তা আমরা পাচ্ছি সেই উপনিবেশের মন্দিরে, শিলালিপিতে ও সাহিত্যে । তবে স্বথের বিষয় আমরা একটা উদাহরণ পাই, ধা থেকে আমরা জানতে পারি যে, চম্পাদেশের এক রাজা নিজের রাজ্য ত্যাগ ক’রে ভারতবর্ষে এসে উপস্থিত হন । সেই রাজার কথা আমরা আগে একবার উল্লেখ করেছি অন্য প্রবন্ধে,তার নাম—গঙ্গারাজ। তিনি প্রথম ভদ্রবর্মণের পুত্র। তার কথা আমরা শিলালিপিতে পাই, চীন হইতেওঁ পাই । শিলালিপি থেকে জানা বায় যে, গঙ্গরাজের রাজেচিত গুণ, “বীর্য্য” “শ্রীতি” ছিল। যদিও রাজ্যত্যাগ করা শক্ত ( “রাজ্যং দুস্ত্যন্তং” ) তবুও তিনি কোন কারণে নিজের রাজসিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন । তার রাজ্যত্যাগের কারণ আমরা শিলালিপিতে পাই না, সেট চীনা বই থেকে পাওয়া যায়। চীনা বই থেকে আমরা জানি যে, তার ভাই কোন অজানা কারণ বশতঃ তার মাতার সঙ্গে রাজধানী থেকে চ’লে ঘান। তিনি আর ফিরে আসেননি ব’লে, গঙ্গারাজ নিজের রাজ-সিংহাসন ত্যাগ করলেন। তখন হঠাৎ তিনি স্থির করলেন যে, সেই স্থদুর চম্পাদেশ থেকে ভারতবর্ষে আসবেন। এ আসার উদ্দেশ্য বোধহয় গঙ্গানদী দেখা । সম্ভবত: তার মনে বৈরাগ্যের উদয় হয়েছিল, তাই তিনি গঙ্গানদী দেখে পাপক্ষয় করবার চেষ্টা করেছিলেন। প্রবাসী ভারতবাসীর বোধ হয় এই একমাত্র উদাহরণ যখন প্রবাস থেকে ভারতবাসী তীর্থযাত্রায় ভারতে এসেছেন। তবে তিনি কোথায় এলেন ও তার পরিবর্তী ইতিহাস কি সে-সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ।