পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সত্তর বৎসর ©Ꮼ☾ সময় কোন বয়োজ্যেষ্ঠের गूषं বাজারে যাইতে পাইতাম । নতুবা অন্য সময়ে কখনও বাজারমুখে হইতে পৰ্য্যস্ত পারিতাম না । ১৮৭২ ইংরাজীর পূজার সময়ে আমি যোল বছরে পা দিয়াছি আর এই সময়েই সৰ্ব্বপ্রথম বাব আমার হাতে পুজার বাজারের কোন কোন সাজ-সজ্জা কিনিবার জন্য কিছু টাকা দেন। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে এতাবৎকাল পর্য্যস্ত বেলোয়ারী লণ্ঠন ও দেওয়ালগির ও শামাদানই যৎসামান্ত ছিল। পূজার সময়ে মোমবাতির আলো দিয়াই যথাসম্ভব রোশনাই করা হইত। চণ্ডীমণ্ডপের সম্মুখে কলাগাছ পতিয়া তার সঙ্গে চেরা বঁাশ বিধিয়া সারি সারি মাটির প্রদীপ দিয়া সন্ধ্যা-আরতির সময় আলো কমাল রচিত হইত। . তখনও কেরোসিন তেলের আমদানী আরম্ভ হইয়াছে বটে, কিন্তু বহুল ব্যবহার আরম্ভ হয় নাই । এই বৎসরই ( ১৮৭২ ) প্রথমে আমার হাতে টাকা পড়াতে আমাদের বাড়ীতে হিষ্ক সের ডবলউইক sets sisto oth ( Hink's Double Wick Wall Lamp )—সেই আনন্দের স্মৃতি এখনও জাগিয়া

  • [{{ty, 1

কিছুদিন পূৰ্ব্বে বঙ্গদর্শনে আমার দুর্গোৎসবের স্মৃতি লিখিয়াছিলাম। এই দীর্ঘ জীবনে নানা প্রকারের বহু আনন্দ-উৎসব দেখিয়াছি ও ভোগ করিয়াছি—কিন্তু আমাদের বাড়ীতে যে দুর্গোৎসব হইত তার মতন আননউৎসব জীবনে কখনও দেখি নাই। এখনও তার আমেজ প্রাণে লাগিয়া আছে। শরতের প্রাতঃ-সুৰ্য্যের আলোকে এখনও প্রাণে সে-অনিহ্মের সাড়া জাগে । দুর্গোৎসবের পূর্বের পক্ষকে পিতৃপক্ষ কহে । আজিকালিকার বালকের বোধ হয় পিতৃপক্ষের কোন পরিচয়ই পায় না। আমার বাল্যে অশ্বিনের কৃষ্ণণক্ষের প্রতিপদ হইতে অমাবস্যা পর্যন্ত প্রতিদিন প্রত্যুষে প্রায় সকল, ভদ্র গৃহস্থই প্রাতঃস্নান করিয়া আবক্ষ জলে দাড়াইয়া পিতৃলোকের তর্পণ করিতেন। সেই তপণের মন্ত্রে পল্লীর সমস্ত জলাশয়ের তীর মুখরিত হইয়া উঠিত। সে-দৃপ্ত ও সে-মন্ত্রের ধ্বনি এখনও যেন চোখে ভাসিতেছে ও কাণে জাগিতেছে। পিতৃপক্ষ আলিলেই আমরা বুঝিতাম, পূজার আর দেরী নাই। মহালয়ার দিন হইতেই দেওয়ানী আদালত বন্ধ হইত, সেই সঙ্গে সঙ্গে স্কুলেরও ছুটী হইত। বাবা নিয়মিতরূপে মহালয়ার পাৰ্ব্বণ শ্রাদ্ধ করিতেন, কোন বৎসর বা সহরেই এই শ্ৰাদ্ধ করিয়া পরে পুঞ্জার জন্য বাড়ী যাইতেন ; কোন কোন বৎসর বা বাড়ীতে যাইয়াই এই শ্রাদ্ধ করিতেন । সেই বাড়ী যাওয়ার আনন্ম জীবনে ভুলিব না । বৎসরাস্তে আমাদিগকে পাইয়া গ্রামবাসীর কি আনন্দ । আর পুজার আনন্দ । তার তুলনা দিতে পারি পর-জীবনে এমন কিছু পাই নাই। পৌত্তলিকতা কাহাকে বলে, তখনও তাহ জানি নাই। কিন্তু ওই প্রতিমা দেখিয়াই অপূৰ্ব্ব আনন্দ লাভ করিতাম । তার পর পূজার সময়ের অতিথিঅভ্যাগতের অভ্যর্থনার আনন্দ । বোধন হইতে প্রতদিনের চণ্ডীপাঠ । অর্থ গ্রহণ করিতে পারভাম না। কিন্তু সেই পাঠের ধ্বনিই যেন “হৃৎকর্ণ রসায়ন” ছিল । পুজার পুৰ্ব্ব হইতেই গ্রামে গ্রামে গানের দল গড়িয়া উঠিত। সখের যাত্রার দল নহে। আমাদের দেশে এসকলকে “সখী-সংবাদের” দল কহিত । ইহার একরূপ পদাবলীই গান করিত। তথন জানি নাই এখন বুঝিয়াছি যে, এইসকল সখের কীৰ্ত্তনের দল কখনও বা মান, কখনও বা বিরহ, কখনও বা কুঞ্জভঙ্গ পালাই গান করিত । দুই তিন দল মিলিয়া এক আপরে পরস্পরের প্রতিযোগিতা হইত। কলিকাতা অঞ্চলেও এক সময়ে এইরূপ গান হইত। রাজনারায়ণ বস্ব মহাশয়ের "একাল ও সেকাল"-এ ইহার বর্ণনা আছে। মুখে মুখে কবিতা রচনা করিয়া ভিন্ন ভিন্ন দলের সর্দারেরা একে অন্যের সঙ্গে “কবির লড়াই” করিতেন। পূজার ব্যাঘাত হইবে বগিয়া বাবা আমাদের বাড়ীতে নবমীদিন রাত্রির পূৰ্ব্বে কখনও এই কবিগান হইতে দিতেন না । দশমী দিনই আমাদের বাড়ীতে পূজা উপলক্ষে “গ্রাম নিমন্ত্ৰণ” হইত। সে-কথা স্মরণ করিয়া আমাদের প্রাচীন গ্রাম্য সমাজে জাত বর্ণের বিচার সত্বেও কতটা সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত ছিল ইহা বুঝিতে পারিতেছি। জাত কুলের মধ্যাদা ছিল, কিন্তু জাত্যভিমান ছিল না। একই জাতের বা শ্রেণীর মধ্যে কুলমর্ধ্যাদা লইয়া রেবারেষি হইত