পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২৮ প্রতিকৃতি নহে। রঙীন চিত্র অথবা খোদাই, রেখাচিত্র ইত্যাদি যে-কোনে চিত্রশিল্পই হউক না কেন ইতাদের প্রত্যেকের উদ্দেশু রঙ রেখা ইত্যাদির সমাবেশে একটি সুসমঞ্জস রূপোন্মেষশালী সুদৃশু চিত্র গড়িয়া তোলা ;– বাস্তব জগতের সঠিত তাহার কোনো সম্বন্ধ ন থাকিতে পারে, চিত্রাঙ্কিত বস্তুর বাস্তব জগতে অস্তিত্ব না থাকা ও অসম্ভব নতে। বস্তুতঃ দর্পণে বা বাতায়নের ভিতর দিয় আমরা বাস্তব জগতকে যেমন প্রত্যক্ষ করি ছবিতে সেরূপ করি না । সমতল জমির উপর রঙ ও রেপার আলঙ্কারিক সমাবেশে বা রূপোন্মেষিণী মূৰ্ত্তির অঙ্কনে চিত্র প্রস্তুত হয়। শিল্পীর কল্পনায় বাস্তবের যে ছাপ বা ইম্প্রেশন ছবি তাহারই প্রকাশ মাত্র ;--চিত্রাঙ্কণের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুযায়ী চিত্রশিল্প বিভিন্নরূপ পরিগ্রহ করে ; সকল দিকেই সাধারণ কোনো একটি নিয়মের অন্তভুক্ত করা চলে না । অঙ্কনকালে যে আঙ্গিক বা টেকনিক অনুসরণ করা হয় ছবি তাহার অনুযায়ী হইবে। কোনো শিল্পী তৈলচিত্রের বিশেষত্বকে জলরঙ ( water-colour ) ছবিতে ফুটায়। তুলিতে ব্যস্ত নহেন, রেখাচিত্র ও বর্ণচিত্রের পার্থক্যও তিনি ভুলেন না । তেমনি খোদাই-শিল্পের সাতটি বিভাগের পার্থক্য ভুলিলেও চলিবে না। আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, কাঠখোদাই শিল্পীর উপকরণ অধিক নহে । রঙ বজ্জন করিয়া কেবলমাত্র সাদা-কালোর সমাবেশে তাহাকে আলো ও বর্ণের খেলা দেখাইতে হয়। সুতরাং তাহাকে এমন কৌশল অবলম্বন করিতে হয় ঘাহাতে মূৰ্ত্তির সতেজ প্রকাশে রঙের অভাব প্রকাশ না পায়। এই কারণেই কাঠ-খোদাই ছাপের আকর্ষণী শক্তি অধিক, কারণ আমরা জানি যে, কেবলমাত্র বাহ মূৰ্ত্তির সৌন্দর্ঘ্য উপলব্ধি বস্তু নিরপেক্ষ হইয় করিতে হয় এবং ইহার জন্য সাধন আবশ্যক । রঙ সাধারণ মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে এবং সহজ আকর্ষণে প্রলুব্ধ হন না, তাই কাঠখোদাই ছাপ যখন র্তাহাকে আকৃষ্ট করে তখন তাহ বস্তু-নিরপেক্ষ বা abstract ভাবেই করিয়া থাকে ; সুতরাং এই আকর্ষণ প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৪ | রংএর প্রভাবে ছবি অনেক সময় যেন দেহ ধরিয়া উঠে, কিন্তু শিল্পজ্ঞান-সম্পন্ন ব্যক্তি রঙের এই [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রবলতর হয়। কাঠখোদাই শিল্পীর অন্ত বিশেষ অসুবিধা এই যে, কাঠের উপর চুরীর সাহায্যে তাহাকে কাজ করিতে হয়—কাগজের উপর পেন্সিল বা কাপড়ের উপর তুলির প্রয়োগের মত তাহ সহজ নহে। প্রথমতঃ কাঠ জিনিয়টিই যথাসাধ্য বাধা দিয়া থাকে, তাছাড়া ঘন্থ গুলিও এমন নহে যাঙ্গতে কাঠখোদাই-শিল্পী এটিং-শিল্পীর মত সহজ স্বাধীনতা পাঠতে পারে। বস্তুত, কাঠখোদাই-শিল্প শিল্পের আঙ্গিক’ বা টেকনিকের সক্তিত এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে, শিল্পীকে আপন কল্পনার সহিত সামঞ্জস্ত রাখিয় পোদাই কাৰ্য্য চালাইতে হয়। শ্রেষ্ঠ কাঠখোদাই-শিল্পীরা কাঠের উপর পেন্সিল দিয় খসড়া না আঁকিয়াই একেবারে চুরী ঢালাইয়া থাকেন। মিঃ গড়ন ক্রেগের কথায়—“অনেকে শুনিলে আশ্চৰ্য্য হইবেন যে, কাঠফলকের আয়তন ইত্যাদিই আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করিয়৷ বিশেষ বিশেষ ছবি খোদাই করিতে সাহায্য করে । কাঠফুল্লককে সাদ কাগজ কল্পনা করিয়াই যদি আমাকে কাজ করিতে হয় তাহা হইলেই আমার মাথা ঘুরিয়া যায়। কাঠপোদাই কার্যে যে ভয়ঙ্কর মানসিক নিয়মানুবর্তিত ( discipline) প্রয়োজন তাহার দৃষ্টান্ত স্বরূপ নম্বর ছবিতে যে কাঠখোদাইছাপের প্রতিকৃতি দেওয়া হইয়াছে তাহ। লক্ষ্য করিতে বলি। রৌদ্রালোক ও ছায়ার যে অপূৰ্ব্ব সমাবেশে ছবিটি জীবন্ত হইয় উঠিয়াছে তাহা কাঠফলকের প্রকৃতি অনুযায়ী কল্পিত হইয়াছিল । - ( 0 ) কাঠখোদাইকার্য্যে শিল্পস্থষ্টি খোদাই বা এনগ্রেভিং মাত্রই হয় অনুকরণ, নয় স্বতন্ত্র সৃষ্টি। অনুকরণ খোদাই বলিতে কোনো একটি অঙ্কিত চিত্রকে আদর্শ করিয়া খোদাইয়ের বিশেষ পদ্ধতি ( সাতটির মধ্যে একটি ) অনুসরণ করিয়া খোদিত চিত্র বুঝায়। তেমনি কোনো কিছুকে আদর্শ না করিয়াই শিল্পী মন হইতে যাহ। গড়িয়া তোলে তাহাকেই স্বষ্টি বল যাইতে পারে। এই অর্থে আধুনিক অধিকাংশ কাঠ-খোদাই ছাপই শিল্পীর সৃষ্টি বলিতে হইবে। কিন্তু পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে যে, পূৰ্ব্বে কাঠ-খোদাই শিল্প শিল্প কৃষ্টি পর্যায়ভুক্ত