পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অস্বাভাবিক মন লইয়া ফিরিতে বাধ্য হইতাম। আত্মহত্যা করিয়া বন্দীদের মধ্যে যাঁরা যন্ত্রণা এড়াইয়াছেন, তাঁদের সংখ্যা নিশ্চয় আরও বৃদ্ধি পাইত, যদি খেলার মাঠের মুক্তির আবহাওয়াটি আমাদের কাছে অপ্রাপ্য ও অনধিগম্য থাকিত।

 বাহিরে নানা কাজে নানা রকম ঘাতপ্রতিঘাতে শক্তি, উদ্যম ও উৎসাহ ব্যয় করিবার সুযোগ ছিল, দুর্গের এই বদ্ধ আবেষ্টনীতে খেলার মাঠেই সে সবের অভাব পূরণের চেষ্টা আমরা করিয়াছি। উগ্র কর্মশক্তি ও তেমনি উগ্র কামনাযদি বাইরে পথ না পাইয়া শরীর ও মনের ভিতর সুড়ঙ্গ খুঁড়িয়া পথ করিতে বাধ্য হইত, তবে বহুর ক্ষেত্রেই ফলে ভয়াবহ পরিণাম দেখা দিত, যেমন কতিপয়ের ক্ষেত্রে দেখা দিয়াছে। গান-বাজনা, পড়াশুনা ইত্যাদি অবশ্য ছিল এবং তাহাতে মগ্ন থাকিয়া আত্মরক্ষা ও আত্মচর্চা করিয়া অনেকেই দীর্ঘ কারাবাস তপস্বীর মত যাপন করিয়াছেন। কিন্তু স্বীকার করিতে দোষ নাই যে, আমরা বেশীর ভাগ সংখ্যাই ছিলাম সৈন্যজাতীয়, তপস্বী, সাধক ও জ্ঞানীর সংখ্যা সে তুলনায় ছিল অতি কম।

 ক্যাম্পের বাহিরে কিন্তু দুর্গের সীমানার মধ্যেই উত্তর দিকে হাত ত্রিশেক নীচু জমিতে পাথর কাটিয়া খেলার মাঠ প্রস্তুত করা হইয়াছিল। সে মাঠে একপাশে মাটিও ছিল। মাঠটিতে সিপাহীরা ফুটবল ও হকি খেলিয়া থাকে, কারণ ব্যায়াম করিলে মনে সুখ ও শরীরে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পায় এবং সিপাহীদের এদুটি জিনিসের নাকি বেশী আবশ্যক, সামরিক কর্তৃপক্ষ বহু আগেই আবিষ্কার করিয়াছিলেন। খেলার মাঠে রিহার্সেল না দিয়া কোন সেনাপতিই লড়াইয়ের মাঠে সৈন্য-চালনা করিতে রাজী হয় না। আর আমরাও তো একদিক দিয়া দেখিতে গেলে সৈন্যই, ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে ‘প্রিজনার অব ওয়ার’ হইয়া আপাততঃ দুর্গে আটক আছি, খেলার মাঠে আমাদের দাবী না মানিলে চলিবে কেন, ইহাই হইল রুণুবাবুর বক্তব্য।

 কমাণ্ডাণ্ট ফিনী সাহেবের পরিচয় কিছু দেওয়া হইয়াছে, তিনি কিছুতেই মাঠ ছাড়িতে রাজী হন না। অনেক ধ্বস্তাধ্বস্তির পর মাঠে আমাদের সরীকত্ব

৯৩