পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তারপর তিনি বন্দীদের মহলে প্রবেশ করিয়া এক হুলস্থুল কাণ্ড বাধাইয়া বসিলেন। মুখে তাঁর একমাত্র হুকুম—‘সেলাম দেও।’ পরে সকলকে জেলের ঘরে জোর করিয়া ঠেলিয়া বন্ধ করিলেন, বাহিরের সশস্ত্র পুলিশের সাহায্যে। শ’দেড়েক বন্দীকে বাছিয়া আনিয়া জেল অফিসের সম্মুখে খোলা মাঠে আনিয়া রৌদ্রে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাইলেন।

 এই সময়ে পঞ্চাননবার প্রাতঃকৃত্য সারিয়া ঘটনাস্থলে আসিয়া হাজির হইলেন। ব্যাপারটা অনুমানেই বুঝিয়া লইলেন, সম্মুখে বেত মারার কাঠের খাঁচাটা তিনঠ্যাংয়ের উপর দাঁড়াইয়া আছে। আসিয়াই পঞ্চাননবাবু সারিবদ্ধ বন্দিদের লাইন ভাঙ্গিয়া চলিয়া যাইতে বলিলেন এবং ঠেলিয়া নিজেই একধার হইতে লাইন ভাঙিতে লাগিয়া গেলেন।

 মিঃ হুগ জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই লোকটা কে?”

 জেলর বলিলেন, “স্যার, এই সেই পঞ্চানন চক্রবর্তী।”

 “হুঁ। পাকড়াও।”

 হুকুমমত জনচারেক সিপাহী পঞ্চাননবাবুকে জাপটাইয়া ধরিল।

 সাহেব বলিল, “সেলে নিয়ে যাও।”

 আবার বন্দিগণ শ্রেণীবদ্ধ হইতে বাধ্য হইলেন। সাহেব প্রত্যেকের সম্মুখে গিয়া প্রশ্ন করিলেন, “সেলাম দেবে কি না?”

 সকলেই নিরুত্তর। সাহেব নিজেই বাছিয়া ত্রিশজনকে লাইনের বাহিরে লইয়া আসিলেন। তারপর জোড়া জোড়া করিয়া তাহাদিগকে বসাইলেন। একের পিছনে অপরে এইভাবে পনর-জোড়া বন্দী তেপায়া কাঠের খাঁচাটাকে সম্মুখে রাখিয়া রৌদ্রে উপবিষ্ট রহিলেন! প্রথম জোড়ার একটিকে আপনারা চিনিবেন, তিনিও বর্তমানে বকসাক্যাম্পে আছেন, নাম বিজয় দত্ত, পঞ্চাননবাবুর বন্ধু। শক্তিতে ও দেহে ইনি আমাদের রবিবাবু ও সন্তোষ দত্তেরই সম-শ্রেণীর।

 বিজয় দত্তের জুড়িকেই গিয়া মিঃ হগ প্রথমে বলিলেন, “খাড়া হও।”

 যিনি খাড়া হইলেন, তিনি একটি স্কুলের হেডমাস্টার, নাম সুরেন্দ্র সিংহ।

১৪৪