পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সময় বহিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়। ১৯৩০ সালের আয়ু কাজেই একদিন ফুরাইয়া গেল, ১৯৩১ সাল আসরে আসিয়া দেখা দিল।

 প্রথমেই মনে বাঙালদের ভাষায় ‘কামড়’ মারিল যে, না জানি এভাবে জেলে কত সালকেই পুরোনো বলিয়া বিদায় দিয়া নূতন সালকে অভ্যর্থনা করিতে হয়। মনকে অবশ্য প্রবোধ দিলাম যে, মুক্তির দিন একটা বছর আগাইয়া রাখা গেল। মুক্তির দিন যত দূরেই রহুক, একটা বছর পার করিয়া একটা বছর তার নিকটবর্তী হইয়াছি, ইহাকে হাতের পাঁচ বলিয়া মনে করিবার অধিকার আমাদের নিশ্চয় ছিল। এই সান্ত্বনা লইয়াই ১৯৩১ সালকে ‘আস্তে আজ্ঞা হোক’ বলিয়া আমরা সম্ভাষণ জানাইলাম।

 মাস কতক পরে বাঙলা নূতন সাল ১৩৩৮ দেখা দিল। নূতন বছর আমার জন্য একটি উপঢৌকন আনিয়াছিল। এই সালটি আমার জীবনে স্মরণীয় বৎসর, এই বৎসরে আমার জীবনে একটি পরমপ্রাপ্তি ঘটে। জেলখানাতে পরমপ্রাপ্তি? কেন, তাহাতে বাধা আছে কিছু? ‘পরমপ্রাপ্তি’ যেখান হইতে প্রেরিত হয়, সেখানকার দানের স্বভাব সম্বন্ধেই তো প্রবাদ প্রচলিত, “যো দেতা হ্যাব ছপ্পর ফোঁড়কে দেতা হ্যায়।” এতই পারে, আর জেলখানাতে দিতে পারিবে না, একটা কথা হইল!

 একটু বিনয় প্রকাশ করিতে হইল। ব্যাকরণের ‘উত্তমপুরুষ’ কথাটা আপনাদের মনে আছে আশা করি। সেখানকার ভূমিকা ও কৈফিয়তটার উপর একবার চোখ বুলাইয়া লইতে আড্ডা হয়। কারণ, উত্তমপুরুষের মানে আমার নিজের কথা কিছু এবার আসিয়া পড়িবে। নিজের কথা বলিয়াই যে তাহাদের আগমনে আপত্তি করিব, আমার ব্যবহারে এমন পক্ষপাতিত্ব আপনারা আশা করিবেন না।

 ২৫শে বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সত্তর বৎসর পূর্ণ হইবে। সমগ্র জাতি

১৪৮