পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেপটাইয়া যাওয়ায় বীর-ভঙ্গী ত্যাগ করিয়া তাহা অবমাননায় হাত-পা ছাড়িয়া দিয়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে।—সিপাহীরা পর্যন্ত খুশি হইয়া গেল।

 লড়াই সংক্রামিত হইয়া গিয়াছিল। খেলোয়াড় ও অ-খেলোয়াড় সব জোড়ে জোড়ে জাপটাজাপটি চলিয়াছিল। পাহাড়ের উপরে দাঁড়াইয়া যাঁহারা নিরাপদ দূরত্বে থাকিয়া খেলা দেখিতেছিলেন, মাঠ হইতে কর্দমাক্ত শত্রু তাঁদের পিছনে তাড়া করিল। ব্যারাকের ভিতরেও গিয়া আক্রমণকারিগণ লড়াই শুরু করিয়া দিল। রোগী ও নিতান্ত বৃদ্ধ যাঁরা, তাঁরাই কেবল রেহাই পাইলেন। মেয়েরা থাকিলে তাঁরাও অবশ্য রেহাই পাইতেন, কারণ রণশাস্ত্রে অস্পৃশ্যদের তালিকায় রুগ্ন ও বৃদ্ধের সঙ্গে ইহাদেরও উল্লেখ আছে।

 মাঠ হইতে একটা সমবেত কণ্ঠের ধ্বনি ক্রমে ব্যারাকের দিকে অগ্রসর হইয়া আসিল। এক সময়ে দেখা গেল, ভুঁড়িপেট ও মোটা-শরীর ক্ষিতীশদা জন-চার-পাঁচেকের কাঁধে চড়িয়া চীৎ হইয়া ব্যারাকে প্রবেশ করিতেছেন।

 মাল মাটিতে নামাইয়া রাখিতেই ওস্তাদ অমর চ্যাটার্জি সিগন্যাল দিল— “জয় বাবা ঘটোৎকচের জয়।”

 সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে বাহক দল ও অন্যান্য সকলে হুঙ্কার ছাড়িল, “জয়—”

 ভূপতিদা বলিলেন, “কচ্ছপ তো দেখছি, গজটি কোথায়?”

 ভীড়ের মধ্য হইতে সন্তোষ দত্ত উত্তর দিলেন—“হাম, ইধার হ্যায়।”


 নদী যখন পর্বতগুহা ছাড়িয়া বাহির হয়, তখন হাতে কোন ম্যাপ লইয়া বাহির হয় না। ডাহিনে বামে তটের ধাক্কায় তার গতিপথ নিয়ন্ত্রিত হইয়া চলে এবং এইভাবেই একদা সমুদ্র-মোহানায় এ-যাত্রা সমাপ্ত হয়। নদীর সঙ্গে মানুষের এই বিষয়ে হুবহু মিল রহিয়াছে। মানুষের মধ্যেও এমনি একটি প্রাণ-প্রবাহ বর্তমান, সংসারের ঘাতপ্রতিঘাতে তাহারও জীবন-পথ নিয়ন্ত্রিত হইয়া থাকে।

১৬৩