পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই সাহিত্যসভার এক প্রবন্ধ পাঠ করিবার ভার আমার উপর পড়ে। প্রবন্ধটির আরম্ভ ও উপসংহার দুইই আমার আজও স্মরণে আছে।

 একেবারে সংস্কৃতের ভোঃ ভোঃ বা শৃণ্বন্তু স্টাইলে সে-প্রবন্ধ আরম্ভ করিলাম—“আমি আছি, ইহা প্রমাণের অপেক্ষা করে না, আমি স্বয়ংসিদ্ধ।”

 তারপর এই ‘স্বয়ংসিদ্ধকে’ তাড়া করিয়া যে—শেষে বা পরিণতিতে গিয়া খতম করিলাম, তাহার নাম ‘সচ্চিদানন্দ।’ লিখিলাম, “আমি আছি, তাই আমার এক পরিচয় সৎ; আনি জানি, তাই আমি চিৎ এবং ইহাই আমার আনন্দ।” এই তিনটিকে ‘আমি’ নামক স্বয়ংসিদ্ধ পাত্রে ঠাসিয়া মিশ্রিত করিয়া অংকশাস্ত্রের যোগফলে যাহা পাওয়া গেল, তাহাই সচ্চিদানন্দ।

 লিখিবার আগে সত্যই আমি জানিতাম না কি লিখিব। লিখিয়া তবে জানিতে পারিলাম কি আমার প্রকৃত বক্তব্য। অর্থাৎ আমার স্বভাবটি আমার কাছে এই ঘটনায় ঈষৎ বিদ্যুৎচমকে ক্ষণিকের জন্য প্রকাশিত হইয়াছিল। প্রথম প্রকাশেই আমি আমার স্বভাবের সম্বন্ধে কিছুটা আঁচ সেদিন করিতে সমর্থ হইলাম।

 যেন যুদ্ধে জয় করিয়াছি, এমনই মুখচোখের ভাব লইয়া সাহিত্য-সভা হইতে নির্গত হইলাম। প্রবন্ধটিতে ক্যাম্পের চিন্তাশীল মহলে নাকি একটু আন্দোলনও দেখা দিয়াছিল। কিন্তু আমার বন্ধুরাই আমাকে পথে বসাইয়া দিল। ইহা না হইলে বন্ধু!

 ফণী (মজুমদার) জিজ্ঞাসা করিল, “যা লিখিস, তা তুই বুঝিস?”

 শোন কথা! আমার কথার অর্থ নাকি আমি জানি না। আমি কি ব্যাসদেবের স্টেনোগ্রাফার সেই গণেশ কেরানী যে, শুনিয়া তবে লিখিতে হইবে? অর্থাৎ ফণীর কথার সোজা মানে এই যে, আমি যাহা লিখিয়াছিলাম, তাহা গিলিতচর্বণ মাত্র। ইহা যদি গিলিতচর্বণ হইয়া থাকে, তবে গলাধঃকরণ ব্যাপারটি

১৬৭