পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিশ্চয় আমি জন্মজন্মান্তরে সারিয়া রাখিয়াছি, এই জীবনে তাই শুধু চর্বণের অধিক পরিশ্রম আমার অদৃষ্টে লেখা হয় নাই। যত যুক্তিই দেই না কেন, মনে মনে কিন্তু দমিয়া গেলাম।

 মোক্ষম ঘাই মারিল কালীপদ (গুহরায়)। সাহিত্য সভা হইতে ব্যারাকে ফিরিয়া আসিতেই সে ডাক দিয়া বসিল, “এই অনুলোম-বিলোম।”

 অমলেন্দু নামটা যে কারণে অনুলোম-বিলোমে রূপান্তরিত হইল, তাহাতেই আমাকে একেবারে ফাটা ফানুস বানাইয়া ছাড়িল, আমি একেবারে চুপসাইয়া গেলাম।

 পরে কিন্তু দেখিতে পাইলাম যে, অঙ্গারকে জলে শত ধুইয়াও তার কালো রং ছাড়ানো চলে না, আমার স্বভাবের ঐ রংটিও তেমনি আমাকে পরিত্যাগ করিল না। আগুন দিলে কালো অঙ্গারও অবশ্য অগ্নিবর্ণ ধারণ করে, কিন্তু মানুষের স্বভাবে আগুন লাগিতে পারে, সে আগুন কোথায়?

 দুর্গে পড়া-শুনার ধূম লাগিয়া গিয়াছিল, সকল পার্টিতেই ঘরে ঘরে ক্লাস বসিত। আলাপ আলোচনা, পড়াশুনা, বাদ-প্রতিবাদ ইত্যাদিতে বক্সা ক্যাম্পের চিন্তাজগতে ঝড় লাগিল। আমিও আমার কম্বল-ঘেরা বারান্দার ঘরে অধ্যয়নে ব্যস্ত হইলাম, কিন্তু আমার পাঠ্য দেশী-বিদেশী গল্প-উপন্যাস সাহিত্যের চৌহদ্দীর মধ্যেই আবদ্ধ রহিল। সকলে যখন বুদ্ধি ও চিন্তার খোরক সংগ্রহে ব্যস্ত, আমি তখন রস-সম্ভোগে মগ্ন।

 সমাজতন্ত্রবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদি হইতে আমি আমাকে নিরাপদ দূরত্বে সরাইয়া রাখিলাম, কারণ চাণক্য বলিয়া দিয়াছেন, ‘শতহস্তেন—।’ ‘ইজম’কে আমি সেই “শতহস্তেন”-এর তালিকায় ফেলিয়া দূরেই রহিলাম বঠে, কিন্তু তাহারা দূরে রহিল না, আগাইয়া আসিয়া আক্রমণ করিল।

 বক্সা ক্যাম্পে তিন-নম্বর চৌকায় যাহারা নাম লিখাইয়াছিল, তাহাদের প্রধান দলটির নাম ছিল “রিভোল্ট পার্টি”। যুগান্তর ও অনুশীলন হইতে ইহারা সরিয়া আসিয়াছিল। বক্সা-ক্যাম্পের চিন্তারাজ্যে যে-আন্দোলন দেখা

১৬৮