পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তুমি দেখিয়াছ যে, পথ দেখাইতে যাও? সামান্য ছোট্ট একখানা হাতচাপা দিলে যার দৃষ্টি অন্ধ হয়, পরের মুহূর্তে কি ঘটিবে যে জানে না, সে কোন্ জোরে ও কোন্ বুদ্ধিতে এমনভাবে ‘হাঁ’ বা ‘না’ নির্দেশ দেয় শুনি? নিজের জীবনের পথেই যে নিজে অন্ধের মত পা দিয়া পথ পরীক্ষা করিয়া চলে, সে কেন এবং কেমনে পথ দেখায় বলিতে পার?’

 সত্তার গভীরে কোথায় আমার যেন ফাটল ধরিয়াছে, তাই এই অপরিচিত অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন বাহির হইয়া আসিল। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, করিলাম, “কে তুমি? কস্ত্বং?”

 ইহাকেই বলে কেঁচো খুঁড়িতে গিয়া সাপ বাহির হওয়া। আমার জীবনে অভিশাপ ছিল, তাই সাপ বাহির হইয়া আসিল।

 গভীর রাত্রে পঞ্চাননবাবু আমার কম্বলের ঘরে ঢুকিলেন। পঞ্চাননবাবু আমার আবাল্য-সুহৃদ। স্কুলে নীচের ক্লাশে থাকিতেই আমরা কয়েক বন্ধু এই বিপ্লবের যাত্রাপথে বাহির হইয়াছিলাম, সে ১৯১৪।১৫ সালের কথা। তারপর দীর্ঘদিন একত্র চলিয়া আসিয়াছি। আমাদের জীবন যেদিন শেষ হইবে, সেদিনও একই পরিণামে আমরা একত্র অবসান লাভ করিব, বিধাতার এই নির্দেশ আমরা যেন না শুনিয়াও শুনিতে পাইয়াছিলাম। আমরা জানিতাম যে, আমাদের জীবনের আরম্ভ একত্র, যাত্রাও একত্র এবং অবসানও এক সঙ্গে।

 পঞ্চাননবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুই এত চটে গেলি কেন?”

 বন্ধুর প্রশ্নে ভিতরে ঝড় জাগিল, সংযম হারাইয়া ফেলিলাম।

 বলিলাম, “তুমি জান না পঞ্চাদা, আমার সমগ্র অস্তিত্ব বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। রাশিয়াতে বিপ্লব করেছে, গভর্নমেণ্ট হস্তগত করেছে, বেশ বুঝি আমি। বিপ্লবের শিক্ষা তাদের কাছে নিতে আমি প্রস্তুত আছি, কেমন করে দল গঠন করতে হয়, বিপ্লব প্রচার করতে হয় সবই আমি তাদের কাছে শুনতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু একটা রাষ্ট্রীয় বিপ্লব করেছে বলেই যে সেই জোরে জীবন সম্বন্ধে, জীবনের অর্থ সম্বন্ধে শিক্ষা দেবার অধিকার তার জন্মেছে, এ আমার

১৭১