পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বৎসর ঘুরিয়া আর একটা নূতন বৎসর আসিল, আমাদের সুখের সংসারে ভাঙ্গন দেখা দিল। ১৯৩২ সালের প্রথমভাগেই বিপ্লবীদের আঠার জন নেতাকে ‘ডেটিনিউ’ হইতে তিন-নম্বর রেগুলেশনের রাজবন্দীরূপে পরিবর্তিত করা হইল। এই আঠারোজনের মধ্যে সতেরজনই ছিলেন বকসা ক্যাম্পের।

 সঙ্গে সঙ্গে দুইটা জিনিস আমাদের কাছে জলের মত পরিষ্কার হইয়া গেল। আমরা দিব্যদৃষ্টিতে দেখিলাম যে, এ-ভাঙ্গন এখানেই শেষ হইবে না, ইহা শুধু আরম্ভ মাত্র এবং অদূর ভবিষ্যতেও আমাদের মুক্তি দিবার তেমন কোন ইচ্ছা ইংরেজ গবর্ণমেণ্টের নাই, আমাদের সম্বন্ধে তাঁহারা মনস্থির করিয়া ফেলিয়াছেন। যেন নদীর ভাঙ্গনপাড়ে ঘর বাঁধিয়াছি, এমন ভাবেই আমরা দিন অতিবাহিত করিতে লাগিলাম।

 কিছুদিন যাইতে না যাইতেই আতঙ্কজনক কানাঘুষা শোনা গেল যে, আমাদের জন্য বাংলার বাহিরে পাকা বন্দোবস্ত হইতেছে। বাংলায় আমাদের রাখা সরকার নিরাপদ মনে করেন না, আমাদের কোথায় রাখিয়া তাঁহারা একটু সুস্থির হইতে পারেন, অধুনা সেই বাঞ্ছিত স্থানের অনুসন্ধান চলিতেছে।

 দুপুরবেলা, খাওয়া-দাওয়া সারিয়া আমরা জটলা করিতেছিলাম, বীরেনদা (চ্যাটার্জি) আসিয়া দেখা দিলেন।

 ঘরে ঢুকিয়াই সাহেবী বাংলায় সকলকে শুনাইয়া তিনি সন্তোষ গাঙ্গুলীকে জিজ্ঞাসা কারলেন, “ইউ সন্তোষ জংলী, টোম্বাকটো জানে?”

 গাঙ্গুলী শব্দটা বীরেনদার সাহেবী উচ্চারণে “জংলী” রূপ পরিগ্রহ করিয়াছিল।

 সন্তোষবাবু কহিলেন, “টোম্বাকটো? সে কি বস্তু, খায় না গায়ে মাখে?”

 বীরেনদা কহিলেন, “টুমি ডেকছি, কিচ্ছু জানে না।”

২১৭