পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিখর-চূড়াকে জঙ্ঘা নাম দেওয়া হইল। এই যদি জঙ্ঘা হয়, তবে বাকী উর্দ্ধাংশটি কোথায়? থাকগে, খামোকা মাথা ঘামাইয়া লাভ নাই। যত ভুল নামকরণই হউক না কেন, নামটা কিন্তু শ্রুতিমধুর এবং একটি কমনীয় কাঠিন্যও ইহাতে রহিয়াছে—কাঞ্চন-জঙ্ঘা।

 শরৎবাবু কানের ধারে সারা পথটা শিশুর মত কেবল অনর্গল কথা কহিয়া গিয়াছেন। আমার তরফ হইতে উত্তর না পাইলেও তাঁর কাকলীর স্রোত সমানই অব্যাহত ছিল। আমি মুগ্ধ দুই চোখ পাতিয়া রাখিয়াছিলাম,—বাহিরে ঐ হিমালয় সারি সারি শিখর লইয়া আকাশে গা ঠেকাইয়া দাঁড়াইয়া আছে, ভিতরেও মনের একটা আকাশ আছে, সেখানে অনন্ত গিরিশ্রেণী লইয়া আর এক হিমালয় স্বপ্ন-দেহে দাঁড়াইয়া ছিল। আমার মনের সমস্ত মনোযোগ তাহাতেই আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিল, শরৎবাবুর কথায় কান বা মন কোনটাই আমি দিতে পারি নাই।—

 রাজাভাতখাওয়া ষ্টেশনে যখন নামিলাম, রৌদ্র তখন রীতিমত তপ্ত হইয়া উঠিয়াছে। এখান হইতে আমাদিগকে ছোট গাড়ীতে যাইতে হইবে। এ গাড়ী বক্‌সা হইয়া ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়া জয়ন্তিয়া ষ্টেশনে গিয়া থামিবে। জয়ন্তিয়া বোধ হয় বক্সার পরের ষ্টেশন, মাঝখানে ঘন অরণ্যে আর কোন ষ্টেশন আছে বলিয়া আমি শুনি নাই।

 হিমালয়ের পাদদেশ ধরিয়া ঘন অরণ্য হিমালয়ের মতই একটানা অবিচ্ছেদে পূর্ব হইতে পশ্চিমে বিস্তারিত হইয়া আছে। এ অরণ্য যেমন দুর্ভ্যে, তেমনি ভয়ঙ্কর, প্রস্থে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মাইল, আর দৈর্ঘ্যে হিমালয়েরই প্রায় সমান। এ অরণ্যসম্পদের পরিমাপ করা সত্যই কষ্টকর, অফুরন্ত বলিলেও চলে। পরে জানিতে পারিয়াছিলাম যে, এ দিককার ‘ফরেষ্টে’ও ব্যাঘ্র, হস্তী, বরাহ, মৃগ হইতে শুরু করিয়া যাবতীয় শ্রেণীর পশুদেরই বসতি রহিয়াছে এবং পার্শ্ববর্তী মনুষ্য-সমাজ ও বসতির উপর তাহাদের উৎপাতও কিছু কম নহে।

২৫