পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিজের পায়ের উপর নির্ভর করিয়া আসিতে হয় নাই—তবু দেখিলাম শরীরটা অবসন্ন ও নিস্তেজ হইয়া পড়িয়াছে। ওয়েটিংরুম বলিতে যে ছোট্ট খোপটা আছে, তাতে আশ্রয় লইতে দল হইতে সরিয়া নিঃশব্দে আগাইয়া গেলাম।

 দুয়ারেই বাধা পাইলাম, অভ্যর্থনার আয়োজন দেখিয়া। প্রবেশমুখেই মানুষের অপকর্ম মজুত রহিয়াছে। মূত্র নাই বটে, কিন্তু দাগ স্পষ্ট ফুটিয়া আছে। আর মল মেঝেতে লেপটাইয়া একাকার। ফিরিব ফিরিব মনে করিতেছিলাম, গন্ধে ও দৃশ্যে পেটে মোচড় দিয়া উঠিল, বমির ইচ্ছা জাগিয়াছে বুঝিলাম। আর ফিরিতে পারিলাম না। পেটের মোচড়ে মোহমুদ্গরের কাজ দিল। অর্থাৎ মোহ বিদূরিত হইয়া জ্ঞাননেত্রই খুলিয়া গেল। আমার নিজের কোষ্ঠেই মল রহিয়াছে; তাই বলিয়া অপবিত্র ভাবিয়া ঘৃণার নিজের শরীরটাকে তো ছাড়িয়া সরিয়া দাঁড়াই না। এখন বাহিরে ও বস্তু দেখিয়া পিছাইলে চলিবে কেন?

 বীরের মত আগাইয়া গেলাম। একটা হাতলভাঙ্গা আরামকেদারা ছিল, সেটাকে কান ধরিয়া হিড়হিড় করিয়া টানিয়া জানালার ধারে লইয়া কাৎ হইয়া শুইয়া পড়িলাম। মিথ্যা বলিব না, একটা চেয়ারও ঘরে ছিল, তার পিছনের ঠ্যাং দুটো পিছনে হেলিয়া ছিল। ভাবে মনে হয় যে, সঙ্গীয় আরামকেদারাটার কাৎ হইবার ভঙ্গীটুকু অনুকরণ করিবার যথাসাধ্য চেষ্টার ত্রুটি হয় নাই। একটা চুরুট ধরাইয়া লইলাম। সেকালে লোকেরা বাণ দিয়া বাণ কাটিত, আমি গন্ধ দিয়া গন্ধ ঠেকাইতে লাগিলাম। তবু চুরুটের কড়া গন্ধের পর্দা ফাঁক করিয়া মাঝে মাঝে শত্রুটি অর্থাৎ অবাঞ্ছিত গন্ধটা উঁকি দিতে ছাড়িল না।

 বক্‌সা ষ্টেশনে নামিয়া প্রথমেই চোখে পড়িয়াছিল যে, একদল ভুটিয়া কুলী মাল নিবার জন্য উপস্থিত রয়িাছে, ফোর্টের কম্যাণ্ডাণ্ট পাঠাইয়াছেন। গাড়ী আসিতেই উহারা দাঁড়াইয়া পড়িয়াছিল। অবাক হইয়া আমরা সকলেই দুই চোখে চাহিয়া ছিলাম, মিনিট খানেকের মধ্যে পার্থক্যটা মালুম করিতে পারি নাই, পরে দৃষ্টি অভ্যস্ত হইয়া গেল।

২৮