পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বোধ হইল না। কাঁদিলে যদি উপায় থাকিত, তবে কাঁদিতেও রাজী ছিলাম। এমনই মনের অবস্থা।

 জিজ্ঞাসা করিলাম,—“আর সকলে কি বলেন?

 —“কিছু বলেন না, শুধু ভাবছেন। একমাত্র সেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঘোড়া বা ডাণ্ডী না হলে পায়ে হেঁটে যাবেন না।”

 সেই তিনি মানে যিনি সিউড়ী স্টেশনে ‘সেকেণ্ড কেলাশ ছাড়া পাদমেকং ন গচ্ছামি’ ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন। ভীষ্মের জন্য ভাবিত হইলাম না, কারণ দরকার হইলেই তিনি প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গিতে প্রস্তুত হইবেন। তাঁর সংস্কারমুক্ত মনের উপর আমার ভরসা ছিল। তবু মনে মনে চটিয়া গেলাম। মুখের কথা বলিয়াই ইঁহারা মুক্ত হন, কথাটার যে কোন দাম থাকিতে পারে, এ তাঁরা যেন গ্রাহ্যই করিতে চান না।

 শরৎবাবুকেই জিজ্ঞাসা করিলাম,—“বলে তো এলেন যে, যাবেন না। করবেন কি শুনি?”

 শরৎবাবু নির্বিকার উত্তর দিলেন,—“না গেলে এখানেই থাকতে হবে।”

 —“এখানে? এখানে এই জঙ্গলের মধ্যে কোথায় থাকবেন শুনি?”

 প্রশ্নের উত্তর না দিয়া শরৎবাবু খোলা দরজার পথে দৃষ্টিটাকে প্রেরণ করিয়া থাকিবার মত জায়গা খুঁজিতে লাগিলেন।

 কহিলাম,—“স্টেশন মাস্টারটাও বোধ হয় ফিরতি ট্রেনে আলিপুর ডুয়ার্সে গিয়ে রাত কাটায়। এখানে রাত্রে জনমানব থাকে আপনি মনে করেন?”

 শরৎবাবু মাথা নাড়িলেন, অর্থাৎ তিনি তাহা মনে করেন না। শরৎবাবু কি মনে করেন, তাহা মনে করিবার ভার তাঁহার উপরই ছাড়িয়া দিলাম। নিজে কি মনে করি, এই প্রশ্নটা এতক্ষণে নিজেকে জিজ্ঞাসা করিলাম।

 মন সজাগ হইয়া উঠিল। না, এখানে থাকা চলিতেই পারে না। যে-ভাবেই হউক, ফোর্টে গিয়া পৌঁছিতেই হইবে। শরীর ক্লান্ত বোধ করিতেছি, তা সত্য। কিন্তু প্রাণ যে তার চেয়েও বেশী সত্য। ঘোড়া ডাণ্ডী

৩৮