পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভাবনাটা বাধা পাইল। শরৎবাবু আমার কঁধে হাত রাখিয়া তাঁর দেহের গুরুভার যতটা পারিলেন আমার উপর চালান করিয়া দিলেন। আমি মানুষ, ভারবাহী প্রাণী নাহি এবং ভূটিয়া কুলীও নাহি। সুতরাং থামিয়া পড়িতে আমি অবশ্যই বাধ্য।

 কাঁধ হইতে হাতটা সরাইয়া দিলাম, অর্থাৎ সরিয়া আসিতেই শরৎবাবুর হস্ত আমার স্কন্ধচ্যুত হইল।

 কহিলাম—“করেন কি? আত্মনির্ভরশীল হন দেখি।”

 কিন্তু আত্মনির্ভরশীল হইবার কোন ইচ্ছা, অথবা শক্তিও হইতে পারে, শরৎবাবুর ছিল না। কিন্তু আমি নিরূপায়। আমারও তো তাঁর মত দুখানা ঠ্যাংই মাত্র সম্বল, আর দুখানা বেশী হইলে নয় কথা ছিল না। বন্ধুর বোঝা বইতে তখন ন্যায়তঃ আমি বাধ্য থাকিতাম।

 শরৎবাবুর গায়ে মাংস বেশী, আমার গায়ে মাংস নাই বলিলেই চলে। বেশ, স্বীকার পাইলাম। কিন্তু তাই বলিয়া আমাকে মাধ্যাকর্ষণের ট্যাক্স তো কম দিতে হয় না, তাঁর সমানই দিতে হইতেছে। মাধ্যাকর্ষণের বেলায় লঘুগুরু ভেদ নাই, এটা শরৎবাবুর জানা উচিৎ ছিল।

 কহিলাম—“লাঠিটায় ভর দিয়ে উঠুন।”

 —“বাবা! প্রাণ নিয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে পারলে হয়,” বলিয়া প্রাণধারণের যে-কষ্ট হইতেছে, তাহা শ্বাস-প্রশ্বাসের নমুনায় দেখাইয়া দিলেন।

 পায়ের শব্দে সম্মুখে উপরের দিকে চাহিলাম। উপরের বাঁকটায় সাদা কালো এক জোড়া আদমীর আবির্ভাব হইল, ভীষণ বেগে নীচে নামিয়া আসিতেছে।

 পোষাকে ও কোমরের পিস্তলে পরিচয় জানাইয়া দিল যে, পুলিশ কর্মচারী, সার্জেণ্ট ও হাবিলদার। অনুমানে জানিলাম, ফোর্টে বন্দী পৌঁছাইয়া দিয়া স্টেশনে চলিয়াছে, ফিরতি গাড়িতে রাজধানীর লোক রাজধানীতে যাইবে।

 সাহেবটি মাংসপিণ্ডে-গড়া একটি বর্তুল মূর্তিবিশেষ। মুখটা হাঁড়ির মত

৫১