পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রকাণ্ড এবং একেবারে একটি নিখুঁত বর্তুল। দেশীটি লম্বায় ছ’ ফুটের উপরেও কম করিয়া আরও ইঞ্চি চারেক, দেহের প্রস্থেও বড় কম যায় নাই। দুজনেই মাতালের মত টলিতে টলিতে নামিতেছিল, কিন্তু গতিটা দ্রুত। বুঝিলাম, মাধ্যাকর্ষণের স্রোতে নিজেদের ছাড়িয়া দিয়া কোনমতে দেহের হাল ঠিক রাখিয়া যাইতেছে—তাই গতি ঝড়ের মুখে পাল-তোলা নৌকার মত।

 এই দুই দানব গায়ের উপর আসিয়া পড়িলে আমাদের আর দুর্গতির সীমা থাকিবে না।

 নিজে একপাশে সরিয়া দাঁড়াইয়া কহিলাম—“সরে দাঁড়ান, ধাক্কা লাগলে অবস্থাটা ভালো হবে না। এ-পাশে আসুন, ও-পাশে খাদ দেখতে পাচ্ছেন না।”

 শরৎবাবু এ-পাশে সরিয়া আসিলেন, কহিলেন—“মদ খেয়েছে নাকি? ওরকম ক’রে টলতে টলতে দৌড়ে আসছে কেন?”

 মদ্যপান করিয়াছে কি না, আন্দাজে বলা শক্ত। তাই যাহা বলা যায়, তাহাই বলিলাম—“পতনের পথ কত সহজ দেখেছেন, হাত পা ছেড়ে দিলেই হ’ল। আর এদিকে আমাদের এক পা উঠতে একপো প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে।”

 যুগল মূর্তি প্রায় কাছে আসিয়া পড়িল। ওদের নামার সুবিধাটায় কিছুক্ষণ আগে ঈর্ষা বোধ করিয়াছিলাম, কিন্তু কাছে আসিতে ভুল ভাঙ্গিল। মাধ্যাকর্ষণে প্রায় কাহিল করিয়া আনিয়াছে, ধাক্কা সামলাইতে হাল ঠিক রাখিতে দু’জনেরই প্রায় হইয়া আসিয়াছে। সাদাটি তো প্রায় ব্যাদিত বদনে মানে হাঁ-করা মুখে নামিয়া আসিতেছে, শ্বাস নেওয়া ও ফেলা ছাড়া ও-মুখে এখন আর অন্য কোন কাজের অবস্থা নাই— সমতল ভূমিতে গেলে যদি বাক্য বাহির হয়। কালাটির অবস্থাও খারাপ, কিন্তু সঙ্গীটির মত অত নহে।

 হাত কয়েক উপরে থাকিতেই আমাদিগকে লক্ষ্য করিয়া কালা আদমী বলিল,—“বহুৎ আচ্ছা খানাপিনা, জায়গাভি আচ্ছ। হ্যার, আরাম সে রহগে।”

৫২