পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বকসাতে আসিয়া একেবারে বোকা বনিয়া গেলাম, যেন কুয়ার ব্যাঙকে সমুদ্রে আনিয়া ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। স্থান, কাল পাত্র—সবগুলি মিলাইয়া এমনই একটা অবস্থা আমার সম্মুখে ধরিয়া দেওয়া হইল যে, এর সামানতম অংশকে চেতনা দিয়া বেষ্টন বা আয়ত্ত করিতেই মন হাঁপাইয়া উঠিল, সেই যাকে বলে ভ্যাবাচাকা খাইয়া গেলাম, ভদ্র ভাষায়—হতভম্ব অথবা হতবুদ্ধি হওয়া।

 এতদিন ছিলাম জেলে, বড়জোর দশবারো জনে মিলিয়া বাসস্থানকে নরক বানাইয়া গুলজার করিবার চেষ্টাই শুধু করিয়াছি। যেন ছোট্ট একটি পরিবারের সীমাবদ্ধ ছোট্ট ডোবায় সাঁতার কাটিয়াছি, ঐটুকু জলেই হাবুডুবু পর্যন্ত খাইতে অসুবিধা বোধ করি নাই, এমনই ছিলাম।

 কিন্তু এতো তা নয়। এখানে দেখি ইতিমধ্যেই শ’দেড়েক লোক হাজির রহিয়াছে এবং এখনও লোক আনিয়া সংখ্যা বাড়ানোই চলিতেছে। স্কুলে থাকিতে অঙ্ক কষিতে হইত—চৌবাচ্চার একটা পাইপ দিয়া জল আসে এবং আর একটা পাইপ দিয়া জল নিঃসরণ হয়। কিন্তু এখানে ভিতরে ঢুকিবার পাইপটাই আছে, বাহির হইবার পাইপটার কোন পাত্তাই পাইতেছি না। এরকম অঙ্ক যে জীবনে কষিতে হইবে, কই, তাতো স্কুলে বা কলেজে কোন শিক্ষকই শাসাইয়া দেয় নাই! পুরা জ্ঞান বোধ হয় কোন শিক্ষকই দেন না, কিছুটা হাতে রাখিয়া দেওয়াই তাঁহাদের অভ্যাস, অর্থাৎ ঠেকিয়া শিখিবার জন্যই আমাদের তাঁহারা অর্ধশিক্ষিত করিয়া পৃথিবীতে ছাড়িয়া দিয়া থাকেন।

 বাঙলাদেশের এমন জেলা নাই যেখান হইতে এই বকসা দুর্গে লোককে টানিয়া আনা না হইয়াছে। বিমূঢ় হইয়াই গেলাম, দেশে এত বিপ্লবীও ছিল! গোপনে গোপনে বিপ্লবের শাখা-প্রশাখা কী ভয়ানকভাবেই না প্রদেশের জেলায় জেলায় ছড়াইয়া পড়িয়াছিল, একেবারে সর্বনাশের জালটিই ছড়াইয়া ফেলা হইয়াছিল! আমরা যে এতখানি আগাইয়া গিয়াছিলাম, দেখিতেছি সে খবরটা আমরা নিজেরাই জানিতাম না। ঠাট্টা

৬১