উত্তর হইল, “ফোর্টের কমাণ্ডাণ্ট।”
কমাণ্ডাণ্ট শব্দটা প্রায় কামানের আওয়াজের মত শুনাইল। ফোর্ট, কমাণ্ডাণ্ট, সিপাইশাস্ত্রী সব মিলিয়। অবস্থাটা ঘোরালো হইয়া উঠিল। দুপুরের রৌদ্রে দাঁড়াইয়া সকলেই পলকের জন্য একবার বিভীষিকা দেখিয়া লইল।
ভূপতিদা (পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী) সিগারেট মুখে এই প্রশ্নোত্তর নীরবে শুনিয়া যাইতেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘মহাপুরুষটি আছেন কোন ঘরে?”
বচনের ভঙ্গী ও উচ্চারণে ভদ্রলোক ঘাড় ফিরাইলেন। অর্থাৎ “কে বট হে”—স্টাইলে বেঁটেখাটো বক্তাটিকে একবার আপাদমস্তক চাক্ষুষ সার্ভে করিয়া লইলেন। পরে চোখের ইঙ্গিতে ব্যারাকের শেষপ্রান্তের ঘরটি দেখাইয়া দিয়া বলিলেন, “ঐ যে আর্দালী বসে আছে, ঐ ঘর।”
—“এসহে, সাহেবের সঙ্গ করে আসা যাক,” বলিয়া ভূপতিদা আগাইয়া চলিলেন, জন তিনেক তাঁর সঙ্গ লইলেন।
ঘরে ঢুকিয়াই দেখা গেল, লালমুখো এক সাহেব মুখে পাইপ এবং হাতে একটা লালনীল পেন্সিল লইয়া টেবিলের উপর ঝুঁকিয়া কাজ করিতেছেন। পায়ের শব্দে তিনি ঘাড় তুলিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে ভূপতিদা বলিলেন, “গুড়, আফটারনুন।”
সম্ভাষণের প্রত্যুত্তরে অস্ফুট ‘টানুন’ কোনমতে সাহেবের কণ্ঠনালী হইতে নাসাপথে নির্গত হইল, ভালো করিয়া শোনাও গেল না। মনে হইল, চিড়বিড় করিয়া বোধ হয় একটা অশ্রাব্য গালিই উচ্চারণ করিলেন।
কোন ভদ্রতা নাই, বসিবার জন্য অনুরোধ নাই, এক কথায় সাহেবটি নির্জলা একটি চাষা। তিনখানা চেয়ার ছিল, ভূপতিদা সঙ্গীদের বলিলেন, “বসে পড়।” তিনজন তিনখানা চেয়ারে বসিয়া পড়িলেন, সাহেব চুপ করিয়া দেখিয়া যাইতে লাগিলেন।
৭২