পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গিয়া হাতে কেডস্ ঠেকিয়া গেল। কালীপদবাবু দৌড়াইয়া আসিয়াই শয্যা লইয়াছিলেন, তাড়াতাড়িতে খেয়াল ছিল না, তাই জুতোটা আর খোলা হয় নাই।

 ডাক্তার গোবিন্দ কহিলেন,—“আরে কাজ্যডা কিরে মশায়, জুতা পায়েই শুয়ে পড়েছেন। সতীশবাবু কি আর সাধে ভূত দেখেছেন।” বলিয়া কবিকে টানিয়া তুলিলেন। তখন দুই বন্ধুর হাসিতে ঘর ভরিয়া গেল।

 সমস্ত শুনিয়া সতীশবাবু যৎপরোনাস্তি রুষ্ট হইলেন। জীবনে যদিও বা একবার ভূত দেখিবার সুযোগ আসিল, তাও এইভাবে মাটি হইয়া গেল। গোঁ গোঁ আওয়াজ, চক্ষুবন্ধ, বংশপত্রের কম্পন, মাঝখান হইতে ইহাই শুধু সার হইল। তাই চটিয়া গিয়া মন্তব্য করিলেন,—“চাঁদ দেখবার জন্য আবার গাছে ওঠা কেন, বাপের জন্মে শুনিনি। দুমিনিট দেরী করলেই তো হতো। যত সব ইয়ে—কবি না ভূত।”

 তিননম্বর ব্যারাকের এই মাঠেই ভদ্রলোককে দেখি। পৃথিবীতে এক জাতীয় লোক থাকে, যাদের খুঁজিয়া বাহির করিতে হয় না, চক্ষুষ্মাণ ব্যক্তিমাত্রের দৃষ্টিতেই তারা ধরা পড়ে। প্রথম দিনেই দেখিতে পাই যে, পরিধানে খদ্দরের হাফপ্যাণ্ট, গায়ে সবুজ রংয়ের গলাবন্ধ খদ্দরের কোট, পায়ে স্যাণ্ডাল, চোখে চশমা এক ভদ্রলোক ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। পোষাকেই পরিচয় কিছু পাইয়া গেলাম। বয়স্ক ব্যক্তি, কিন্তু কিছুই গ্রাহ্যের মধ্যে আনিতেছেন না। কে কি ভাবিবে, এ যেন তাঁর ভাবনার মধ্যেই আসে না। লোক কি বলিবে অর্থাৎ জনমতকে যিনি এত সহজে তুচ্ছ ও অগ্রাহ্য করিতে পারেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কোন সন্দেহেরই অবকাশ নাই। রামকৃষ্ণদেবের প্রশ্নের উত্তরে যুবক নরেন্দ্র নাকি একদিন মন্তব্য করিয়াছিলেন, “লোক না পোক।” নরেন্দ্রনাথ যে উত্তরকালে সিংহপুরুষ হইবেন, তার ইঙ্গিত এই উক্তির মধ্যেই পাওয়া গিয়াছিল। নিজের ব্যক্তিত্বে কতখানি প্রতিষ্ঠিত থাকিলে লোককে পোকার সামিল মনে হইতে পারে, আপনারাও

৮৯