পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ সােয্যমখীকে হারাইলাম। সােয্যমখীকে পত্নীভাবে পাওয়া বড় জোর কপালের কাজ। সকলেই মাটি খোঁড়ে, কোহিনীর এক জনের কপালেই উঠে। সােয্যমখী সেই কোহিনীর। কুন্দনন্দিনী কোন গণে তাঁহার সােথান পণ করিবে ? তবে কুন্দনন্দিনীকে তাঁহার সােথলাভিষিক্ত করিয়াছিলাম কেন ? ভ্ৰান্তি, ভ্ৰান্তি! এখন চেতনা হইয়াছে। কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল মরিবার জন্য। আমারও মরিবার জন্য এ মোহনিদ্রা ভাঙিগয়াছে। এখন সাহায্যমখনীকে কোথায় পাইব ? আমি কেন কুন্দনন্দিনীকে বিবাহ করিয়াছিলাম ? আমি কি তাহাকে ভালবাসিতাম ? ভালবাসিতাম। বই কি-তােহর জন্য উন্মাদগ্ৰসত হইতে বসিয়াছিলাম-প্ৰাণ বাহির হইতেছিল। কিন্তু এখন বঝিতেছি, সে কেবল চোখের ভালবাসা। নহিলে আজি পনের দিবসমাত্র বিবাহ করিয়াছি—এখনই বলিব কেন, “আমি তাহাকে ভালবাসিতাম ? ভালবাসিতাম। কেন ? এখনও ভালবাসি—কিন্তু আমার সােয্যমখী কোথায় গেল ? অনেক কথা লিখিব মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু আজ আর পারিলাম না। বড় কম্পট হইতেছে। ইতি (হরদেব ঘোেষালের উত্তর) আমি তোমার মন বঝিয়াছি। কুন্দনন্দিনীকে ভালবাসিতে না, এমত নহে—এখনও ভালবাসা; কিন্তু সে যে কেবল চোখের ভালবাসা, ইহা যথাৰ্থ বলিয়াছ। সত্যািমখীর প্রতি তোমার গাঢ় স্নেহ—কেবল দই দিনের জন্য কুন্দনন্দিনীর ছায়ায় তাহা আবিত হইয়াছিল। এখন সােয্যমখনীকে তাহা বঝিয়াছ। যতক্ষণ অনাচ্ছিন্ন থাকেন, ততক্ষ কিরণে সন্তাপিত হই, মেঘ ভাল লাগে। কিন্তু সায্য অস্ত গেলে বঝিতে পারি, সােয্যদেবই সংসারের চক্ষ। সােয্য বিনা সংসার অাঁধার। তুমি আপনার হৃদয় না বঝিতে পারিয়া এমন গারতের ভ্রান্তিম লক কাজ করিয়াছ—ইহার জন্য আর তিরস্কার করিব না—কেন না, তুমি যে ভ্ৰমে পড়িয়াছিলো, অ্যাপনা হইতে তাহার অপনোদন বড় কঠিন। মনের অনেকগালি ভােব আছে, তাহার সকলকেই লোকে ভালবাসা বলে । কিন্তু চিত্তের যে অবস্থায়, অন্যের সখের জন্য আমরা আত্মসখি বিসঙ্জন করিতে সম্ভবতঃ প্রস্তুত হই, তাহাকে প্রকৃত ভালবাসা বলা যায়। “স্বতঃ প্রস্তুত হই,” অর্থাৎ ধৰ্ম্মম জ্ঞান বা পণ্যাকাঙক্ষায় নহে। সতরাং রপাবতীর রােপভোগালালসা ভালবাসা নহে। যেমন ক্ষধাতুরের ক্ষধাকে অন্নের প্রতি প্রণয় বলিতে পারি না, তেমনি কামাতুরের চিত্তচাঞ্চল্যকে রপাবতীর প্রতি ভালবাসা বলিতে পারি না। সেই চিত্তচাঞ্চল্যকেই আয্যকবিরা মদনশরজ বলিয়া বণনা করিয়াছেন। যে বত্তির কলিপিত অবতার বসন্তসহায় হইয়া, মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ করিতে গিয়াছিলেন, যাঁহার প্রসাদে কবির বণনায় মাগের মােগীদিগের গাত্ৰে গাত্ৰকণীডয়ন করিতেছে, কারিগণ করিণী দিগকে পদ্মমণাল ভাঙ্গিয়া দিতেছে, সে এই রােপজ মোহমাত্র। এ ব্যত্তিও জগদীশ্বরপ্রেরিতা; ইহা দ্বারাও সংসারের ইন্টসাধন হইয়া থাকে, এবং ইহা সর্বব জীবমাগধকারী। কালিদাস, বাইরণ, জয়দেব ইহার কবি :--বিদ্যাসন্দর ইহার ভেঙগান। কিন্তু ইহা প্রণয় নহে। প্রেম বন্দিধবত্তিম লক। প্রণয়াস পদ ব্যক্তির গণসকল যখন বন্দিধবত্তিদ্বারা পরিগহীত হয়, হৃদয় সেই সকল গণে মগধ হইয়া তৎপ্রতি সমাকৃত্সট এবং সঞ্চালিত হয়, তখন সেই গণাধারেব সংসগলিপসো, এবং তৎপ্রতি ভক্তি জন্মে। ইহার ফল, সহৃদয়তা, এবং পরিণামে আত্মবিসমিতি ও আত্মবিসর্জন। এই যথার্থ প্রণয়; সেক্সপীয়র, বালমীকি, শ্ৰীমদভাগবতকার। ইহার কবি। ইহা রাপে জন্মে না। প্রথমে বদ্ধিদ্বারা গণগ্রহণ, গণগ্রহণের পর আসঙ্গলিপসা; আসঙ্গলিপসা সফল হইলে সংসগ, সংসগফলে প্রণয়, প্ৰণয়ে আত্মবিসর্জন। আমি ইহাকেই ভালবাসা বলি। নিতান্ত পক্ষে সন্ত্রীপরিষের ভালবাসা আমার বিবেচনায় এইরােপ। আমার বোধ হয়, অন্য ভালবাসারও মল এইরহপ; তবে স্নেহ এক কারণে উপস্থিত হয় না। কিন্তু সকল কারণই বদ্ধিবত্তিম লক। নিতান্ত পক্ষে বন্দিধবত্তিম লক কারণজাত স্নেহ ভিন্ন স্থায়ী হয় না। রােপজ মোহ তােহা নহে। রপদশনজনিত যে সকল চিত্তবিকৃতি, তাহার তীক্ষতা পৌনঃপন্যে হিসােব হয়। অর্থাৎ পৌনঃপন্যে পরিতৃপিত জন্মে। গণজনিতের পরিতৃপিত নাই। কেন না, রােপ এক—প্ৰত্যহই তাহার এক প্রকারই বিকাশ, গণ নিত্য নতন নািতন ক্লিয়ায় নািতন নািতন হইয়া প্রকাশ পায়। রাপেও প্রণয় জন্মে, গণেও প্রণয় জন্মে—কেন না, উভয়ের দ্বারা আসওগালিপসা জন্মে। যদি উভয় একত্রিত হয়, তবে প্রণয় W) > ○