পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ঃ শবশঙ্কুরবাড়ী চলিলাম ভগিনীর এই আশীৰ্ব্ববাদ লইয়া আমি শবশরিবাড়ী যাইতেছিলাম। আমার শবশঙ্কুরবাড়ী মনোহরপর। আমার পিত্ৰালয় মহেশপাের। উভয় গ্রামের মধ্যে দশ ক্লোশ পথ, সতরাং প্রাতে আহার করিয়া যাত্ৰা করিয়াছিলাম, পৌছিতে পাঁচ সাত দন্ড রাত্ৰি হইবে জানিতাম । তাই চক্ষে একটা একট, জল আসিয়াছিল। রাত্ৰিতে আমি ভাল করিয়া দেখিতে পাইব না, তিনি কেমন । রাত্ৰিতে ত তিনি ভাল করিয়া দেখিতে পাইবেন না, আমি কেমন। মা বহি যত্নে চুল বাঁধিয়া দিয়াছিলেন—দশ ক্লোশ পথ যাইতে যাইতে খোঁপা খসিয়া যাইবে, চুল সব সন্থানচু্যত হইয়া যাইবে। পালকীর ভিতর ঘামিয়া বিশ্ৰী হইয়া যাইব । তৃষ্ণায় মাখের তাম্বলরাগ শাকাইয়া উঠিবে, শ্রান্তিতে শরীর হতশ্ৰী হইয়া যাইবে । তোমরা হাসিতেছ? আমার মাথার দিব্য, হাসিও না, আমি ভরা যৌবনে প্রথম শবশঙ্কুরবাড়ী যাইতেছিলাম। পথে কালােদীঘি নামে এক বহৎ দীঘিকা আছে। তাহার জল প্রায় অন্ধ ক্লোশ। পাড় পৰ্ব্বতের ন্যায় উচ্চ। তাহার ভিতর দিয়া পথ। চারি পাশে বা বটগাছ। তাহার ছায়া শীতল, দীঘির জল নীল মেঘের মত, দশ্য অতি মনোহর | তথায় মনষ্যের সমাগম বিরল। ঘাটের উপরে একখানি দোকান আছে মাত্র। নিকটে যে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালােদীঘি। এই দীঘিতে লোকে একা আসিতে ভয় করিত। দস্যতার ভয়ে এখানে দলবদ্ধ না হইয়া লোক আসিত না। এই জন্য লোকে “ডাকাতে কালােদীঘি” বলিত। দোকানদারকে লোকে দস্যুদিগের সহায় বলিত। আমার সে সকল ভয় ছিল না। আমার সঙ্গে অনেক লোক-ষোল জন বাহক, চারি জন্য দাবারবান, এবং অন্যান্য লোক ছিল । যখন আমরা এইখানে পৌছিলাম, তখন বেলা আড়াই প্রহর । বাহকেরা বলিল যে, “আমরা কিছ জল-টল না খাইলে আর যাইতে পারি না।” দাবারবানেরা বারণ করিল—বলিল, “এ স্থান ভাল নয়।” বাহকেরা উত্তর করিল, “আমরা এত লোক আছি—আমাদিগের ভয় কি ?’ আমার সঙ্গের লোকজন ততক্ষণ কেহই কিছই খায় নাই। শেষে সকলেই বাহকদিগের মতে মত করিল। দীঘির ঘাটে—বটতলায় আমার পালকী নামাইল । আমি হাড়ে জবিলিয়া গেলাম। কোথায় কেবল ঠাকুর দেবতার কাছে মানিতেছি, শীঘ্ৰ পৌছি—কোথায়, বেহােরা পালকী নামাইয়া হাঁট, উচু করিয়া ময়লা গামছা ঘরাইয়া বাতাস খাইতে লাগিল । কিন্তু ছি! সত্ৰীজাতি বড় আপনার বঝে! আমি যাইতেছি কাঁধে, তাহারা কাঁধে আমাকে বহিতেছে ; আমি যাইতেছি ভরা যৌবনে স্বামিসন্দশ্যনে—তারা যাইতেছে খালি পেটে এক মােঠা ভাতের সন্ধানে; তারা একট, ময়লা গামছা ঘরাইয়া বাতাস খাইতেছে বলিয়া কি আমার রাগ হইল! ধিক ভরা যৌবনে! এই ভাবিতে ভাবিতে আমি ক্ষণেক পরে অন্যভাবে বঝিলাম যে, লোকজন তফাৎ গিয়াছে। আমি তখন সাহস পাইয়া অলপ দবার খালিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম, বাহকেরা সকলে দোকানের সম্মখে এক বীটবক্ষিতলে বসিয়া জলপান খাইতেছে। সেই সন্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা। দেখিলাম যে, সম্পমখে আতি নিবিড় মেঘের ন্যায় বিশাল দীঘি কা বিস্তৃত রহিয়াছে, চারি পাশে বর্ণ পৰ্ব্বতশ্রেণীবৎ উচ্চ অথচ সমকোমল শ্যামল তৃণাবরণশোভিত। “পাহাড়,”—পাহাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীঘ বটবক্ষশ্রেণী; পাহাড়ে অনেক গোবৎস চরিতেছে—জলের উপর জলচর পক্ষিগণ ক্ৰীড়া করিতেছে—মদ, পবনের মদ মদ তরঙগাঁহিল্লোলে সাফাটিক ভঙ্গ হইতেছে—ক্ষন্দ্রোম্মিম প্রতিঘাতে কদাচিৎ জলজ পশুপপত্র এব, শৈবালে দলিতেছে। দেখিতে পাইলাম যে, আমার দাবারবানের জলে নামিয়া স্নান করিতেছে— তাহাদের অঙ্গচালনে তাড়িত হইয়া শ্যামসলিলে শেবত মত্তাহার বিক্ষিপত হইতেছে। আকাশ পানে চাহিয়া দেখিলাম, কি সন্দের নীলিম। ! কি সন্দির শেবত মেঘের সতরপরস্পরের মাত্তি। ---কিবা তলে উড্ডীন ক্ষদ্র পক্ষী নীলিমামধ্যে বিকীর্ণ কৃষ্ণবিন্দ-নিচয়তুল্য শোভা! মনে মনে হইল, এমন কোন বিদ্যা নাই কি, যাতে মানষে পাখী। হইতে পারে ? পাখী হইতে পারিলে আমি এখনই উড়িয়া চিরবাঞ্ছিতের নিকট পৌছিতম! আবার সরোবর প্রতি চাহিয়া দেখিলাম—এবার একটা ভীত হইলাম, দেখিলাম যে, বাহকেরা ভিন্ন আমার সঙ্গের লোক সকলেই এককালে স্নানে নামিয়াছে। সঙ্গে দাই জন সত্ৰীলোক Wう83