পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बश्कब ब्रष्नाबव्ी শরীরও নিতান্ত বিকল, নিতান্ত বলশন্য; তাহার পর এই ভীষণ দৈব ব্যাপার—দৈব বলিয়াই শৈবলিনীর বোধ হইল-মানবচিত্ত আর কতক্ষণ প্রকৃতিস্থ থাকে ? দেহ ভাঙিগয়া পড়িল, মন ভাঙিগয়া পড়িল—শৈবলিনী অপহৃতচেতনা হইয়া অন্ধ নিদ্রাভিভূত, অদধ জাগ্রতাবস্থায় রহিল। গহাতলস্থ উপলখান্ড সকলে পািঠদেশ বাথিত হইতেছিল। সম্পণেরপে চৈতন্য বিলপতি হইলে, শৈবলিনী দেখিল, সম্মখে এক অনন্ত বিস্তৃতা নদী। কিন্তু নদীতে জল নাই—ন্দ-কািল পলাবিত করিয়া রাধারের স্রোতঃ বহিতেছে। তাহাতে অস্থি, গলিত নরদেহ, নমন্ডু, কওকালাদি ভাসিতেছে। কুম্ভীরাকৃতি জীবসকল—চম-মাংসাদিবভিজাত—কেবল অসিথ, ও বহৎ, ভীষণ, উত্তজবল চক্ষদ্বয়বিশিস্ট—ইতস্ততঃ বিচরণ করিয়া সেই সকল গলিত শব ধরিয়া খাইতেছে। শৈবলিনী দেখিল যে, যে মহাকায় পরষ তাহাকে পৰ্ব্ববত হইতে ধতি করিয়া আনিয়াছে, সেই আবার তাহাকে ধতি করিয়া সেই নদীতীরে আনিয়া বসাইল। সে প্রদেশে রৌদ্র নাই, জ্যোৎসনা নাই, তারা নাই, মেঘ নাই, আলোক মাত্ৰ নাই—অথচ অন্ধকার নাই। সকলই দেখা যাইতেছে—কিন্তু অসপস্ট। রধিরের নদী, গলিত শব, স্রোতোবাহিত কণ্ডকালমালা, অস্থিময় কুম্ভীবগণ, সকলই ভীষণান্ধিকারে দেখা যাইতেছে। নদীতীরে বালকো নাই।--তৎপরিবত্তে লৌহসাচী সকল অগ্রভাগ উদ্ধবা করিয়া রহিয়াছে। শৈবলিনীকে মহাকায় পরষ। সেইখানে বসাইয়া নদী পার হইতে বলিলেন। পারের কোন উপায় নাই। নৌকা নাই, সেতু নাই। মহাকায় পরিষ বলিলেন, সাঁতার দিয়া পার হ, তুই সাঁতার জানিস-গঙগায়, প্ৰতাপের সঙ্গে অনেক সাঁতার দিয়াছিস । শৈবলিনী এই রধিরের নদীতে কি প্রকারে সাঁতার দিবে ? মহাকায় পরষ। তখন হস্তস্থিত বেত্র প্রহার জন্য উত্থিত করিলেন। শৈবলিনী সভয়ে দেখিল যে, সেই বেত্ৰ জব্বলন্ত লোহিত লৌহনিমিত। শৈবলিনীর বিলম্ব দেখিয়া, মহাকায় পরিষ শৈবলিনীর পক্ষেষ্ঠ বোত্রাঘাত করিতে লাগিলেন। শৈবলিনী প্ৰহারে দগধ হইতে লাগিল । শৈবলিনী প্রহার সহ্য করিতে না পারিয়া রধিরের নদীতে ঝাঁপ দিল। আমনি অস্থিময় কুম্ভীর সকল তাহাকে ধরিতে আসিল, কিন্তু ধরিল না। শৈবলিনী সাঁতার দিয়া চলিল; রধিরস্রোতঃ বদনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল। মহাকায় পরষ তাহার সঙ্গে সঙ্গে রধিরস্রোতের উপর দিয়া পদব্রজে চলিলেন—ডুবিলেন না। মধ্যে মধ্যে পতিগন্ধবিশিস্ট গলিত শব্ব ভাসিয়া আসিয়া শৈবলিনীর গাত্রে লাগিতে লাগিল। এই রাপে শৈবলিনী পর্যপারে উপস্থিত হইল। সেখানে কলে উঠিয়া চাহিয়া দেখিয়া, “রক্ষা কর! রক্ষা কর” বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিল। সম্মখে যাহা দেখিল, তাহার সীমা নাই, আকার নাই, বর্ণ নাই, নাম নাই। তথায় আলোক অতি ক্ষীণ, কিন্তু এতাদশ উত্তপত যে, তাহা চক্ষে প্রবেশ মাত্র শৈবলিনীর চক্ষ বিদীর্ণ হইতে লাগিল—বিষসংযোগে যেরােপ জবালা সম্ভব, চক্ষে সেইরােপ জবালা ধরিল। নাসিকায়। এরপ ভয়ানক পতিগন্ধ প্রবেশ করিল যে, শৈবলিনী নাসিকা আব্বত করিয়াও উন্মত্তার ন্যায় হইল। কণে, অতি কঠোর, ককািশ, ভয়াবহ শবদ সকল এককালে প্রবেশ করিতে লাগিল—হৃদয়-বিদারক আত্তনাদ, পৈশাচিক হাস্য, বিকট হঙকবি, পৰ্ব্বব্যািতবিদারণ, অশানিপতনি, শিলাঘর্ষণ, জলকল্লোল, অগিনগািজন, মমতষর ক্ৰন্দন, সকলই এককালে শ্রবণ বিদীর্ণ করিতে লাগিল। সম্মমখ হইতে ক্ষণে ক্ষণে ভীমনাদে এরােপ প্রচন্ড বায় বহিতে লাগিল যে, তাহাতে শৈবলিনীকে অগিনশিখার ন্যায় দগধ করিতে লাগিল—কখন বা শীতে শতসহস্র ছরিকাঘাতের ন্যায় অঙ্গ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করিতে লাগিল। শৈবলিনী ডাকিতে লাগিল, “প্ৰাণ যায়! রক্ষা কর!” তখন অসহ্য পতিগন্ধবিশিষট এক বহৎ কদৰ্য্য কীট আসিয়া শৈবলিনীর মাখে প্রবেশ করিতে প্রবত্ত হইল। শৈবলিনী তখন চীৎকার করিয়া বলিতে লাগিল, “রক্ষা কর! এ নরক ! এখান হইতে উদ্ধারের কি উপায় নাই ?” মহাকায় পরিষ বলিলেন, “আছে।” স্বপনাবস্থায় আত্মকৃত চীৎকারে শৈবলিনীর মোহনিদ্রা ভওগ হইল। কিন্তু তখনও ভ্ৰান্তি যায় নাই।-- -পঠে প্রস্তর ফটিতেছে। শৈবলিনী ভ্ৰান্তিবশে জাগ্রাতেও ডাকিয়া বলিল, “আমার কি হবে! আমার উদ্ধারের কি উপায় নাই ?” গােহ মধ্য হইতে গম্ভীর শব্দ হইল, “আছে।” এ কি এ ? শৈবলিনী কি সত্য সত্যই নরকে ? শৈবলিনী বিস্মিত, বিমগধ, ভীতচিত্তে জিজ্ঞাসা করিল, “কি উপায় ?” গােহ মধ্য হইতে উত্তর হইল, “দাবাদশবার্ষিক ব্ৰত অবলম্বন কর।” 888