পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कभ ब्रा5नावव्T তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ বাতাস উঠিল। শৈবলিনী তাঁহাই করিল—সপতদিবস গােহা হইতে বাহির হইল না—কেবল এক একবার দিনান্তে ফলমলান্বেষণে বাহির হইত। সাত দিন মনষ্যের সঙ্গে আলাপ করিল না। প্রায় অনশনে, সেই বিকটান্ধকারে আনন্যোন্দ্ৰিয়বাত্তি হইয়া স্বামীর চিন্তা করিতে লাগিল—কিছ দেখিতে পায় না, কিছ শনিতে পায় না, কিছ, সপশ করিতে পায় না। ইন্দ্ৰিয় নিরন্ধ—মন নিরদ্ধ—সববন্ত্র স্বামী। স্বামী চিত্তব্যত্তিসমহের একমাত্র অবলম্বন হইল। অন্ধকারে আর কিছ দেখিতে পায় না—সাত দিন সাত রাত কেবল সর্বামিমািখ দেখিল। ভীম নীরবে। আর কিছ: শনিতে পায় না—কেবল স্বামীর জ্ঞানপরিপািণ, স্নেহবিচলিত, বাক্যালাপ শনিতে পাইল— ঘাণেন্দ্ৰিয় কেবলমাত্র তাঁহার পৎপপত্রের পক্ষপরাশির গন্ধ পাইতে লাগিল—ত্বক কেবল চন্দ্রশেখরের আদরের সপশা অনভূত করিতে লাগিল। আশা আর কিছতেই নাই—আর কিছতে ছিল না, সর্বামিসন্দশন কামনাতেই রহিল। সন্মতি কেবল শামশ্রশোভিত, প্রশস্ত ললাটপ্রমািখ বদনমন্ডলের চতুঃপাশে বা ঘারিতে লাগিল—কণাটকে ছিন্নপক্ষ ভ্ৰমরী যেমন দলভ সগন্ধিপাম্পবােক্ষতলে কম্পেট ঘরিয়া ঘরিয়া বেড়ায়, তেমনই ঘরিয়া বেড়াইতে লাগিল। যে এ ব্রতের পরামর্শ দিয়াছিল, সে মনষ্যচিত্তের সব্বাংশীদশী সন্দেহ নাই। নির্জন, নীরব, অন্ধকার, মনষ্যসিন্দশ নরহিত, তাহাতে আবার শরীর ক্লিঅ’ট ক্ষধাপীড়িত; চিত্ত অন্যচিন্তাশন্যে; এমন সময়ে যে বিষয়ে চিত্ত সিথর করা যায়, তাহাই জপ করিতে করিতে চিত্ত তন্ময় হইয়া উঠে । এই অবস্থায়, অবসন্ন শরীরে, অবসন্ন মনে, একাগ্রচিত্তে, সবামীর ধ্যান করিতে করিতে শৈবলিনী বিকৃতিপ্ৰাপত হইয়া উঠিল। বিকৃতি ? না দিব্য চক্ষ ? শৈবলিনী দেখিল—অন্তরের ভিতর অন্তর হইতে দিব্য bभ চাহিয়া, শৈবলিনী দেখিল, এ কি রােপ! এই দীঘ শালতরনিন্দিত, সভূজবিশিষট, সন্দরগঠন সকুমারে বলময় এ দেহ যে রাপের শিখর ! এই যে ললাট—প্রশস্ত, চন্দনচচ্চিত, চিন্তারেখাবিশিষ্ট—এ যে সরস্বতীর শয্যা, ইন্দ্রের রণভূমি, মদনের সখ্যকুঞ্জ, লক্ষয়ীর সিংহাসন ! ইহার কাছে প্রতাপ ? ছিঃ! ছি:! সমদ্রের কাছে গঙ্গা! ঐ যে নয়ন-জবেলিতেছে, হাসিতেছে, ফিরিতেছে, ভাসিতেছে—দীঘ, বিস্ফারিত, তীব্রজ্যোতিঃ, স্থির, স্নেহময়, কারণাময়, ঈষৎরঙগপ্রিয়, সৰ্ব্বব্যািত্র তত্ত্বজিজ্ঞাসা-ইহার কাছে কি প্রতাপের চক্ষ ? কেন আমি ভুলিলাম-কেন মজিল্যাম-কেন মরিলাম! এই যে সন্দর, সবুকুমার, বলিভ্ৰষ্ঠ দেহ—নবপত্ৰশোভিত শালতরমাধবীজড়িত দেবদার, কুসমপরিব্যাপত পৰ্ব্ববত, অদ্ধেক সৌন্দৰ্য্য অদ্ধেক শক্তি—আধ চন্দ্ৰ আধ ভান— আধা গৌরী আধা শওকর—আধি রাধা আধা শ্যাম—আধ। আশা আধ ভয়—আধা জ্যোতিঃ আধা ছায়া—আধা বহ্নি আধ ধর্ম—কিসের প্রতাপ ? কেন না দেখিলাম-কেন মজিলাম—কেন মরিলাম! সেই যে ভাষা-পরিস্কৃত, পরিস্ফাট, হাস্যপ্ৰদীপত, ব্যওগরঞ্জিত, স্নেহপরিপ্ৰলত, মদ, মধর, পরিশদ্ধ—কিসের প্রতাপ ? কেন মজিলাম—কেন মরিলাম-কেন কুল হারাইল্যাম ? সেই যে হাসি—ঐ পক্ষপপাত্রস্থিত মল্লিকারাশিতুল্য, মেঘমন্ডলে বিদ্যুত্তাল্য, দক্ৰবৎসরে দাগোৎসবতুল্য, আমার সখস্বপনতুল্য—কেন দেখিলাম না, কেন মজিলাম, কেন মরিলাম, কেন বঝিলাম না ? সেই যে ভালবাসা সমদ্রতুল্য—অপাের, অপরিমেয়, অতলস্পর্শ, আপনার বলে আপনি চঞ্চল-প্রশান্তভাবে স্থির, গম্ভীর, মাধৰ্য্যময়—চাঞ্চল্যে কলপালাবী, তরঙ্গভঙগভীষণ, অগম্য, অজেয়, ভয়ঙ্কর-কেন বঝিলাম না, কেন হৃদয়ে তুলিলাম না-কেন আপনা খাইয়া প্ৰাণ দিলাম না! কে আমি ? তাঁহার কি যোগ্য-বালিকা, অজ্ঞান,—অনক্ষর, অসৎ, তাঁহার মহিমাজ্ঞানে অশক্ত, তাঁহার কাছে আমি কে ? সমদ্রে শশীবকে, কুসমে কীট, চন্দ্রে কলঙক, চরণে রেণকণা—তাঁর কাছে আমি কে ? জীবনে কুস্বপ্ন, হৃদয়ে বিসমিতি, সখে বিঘা, আশায় অবিশ্বাস—তাঁর কাছে আমি কে? সরোবরে কদম, মণিালে কণ্টক, পবনে ধলি, অনলে পতঙ্গ ! আমি মজিলাম—মরিলাম না কেন ? যে বলিয়াছিল, এইরনুপে স্বামিধ্যান কর, সে অনন্ত মানবহৃদয়-সমদ্রের কান্ডারী—সব জানে। জানে যে, এই মন্ত্রে চিরপ্রবাহিত নদী অন্য খাদে চালান যায়,-জানে যে, এ বাজে পাহাড় ভাঙেগ, এ গন্ডষে সমদ্র শক্ষিক হয়, এ মন্ত্রে বায় সস্তম্ভিত হয়। শৈবলিনীর চিত্তে প্রতাপকে ভুলিয়া চন্দ্ৰশেখরকে ভালবাসিল। 88S8 V