পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাধারাণী রাধারাণীকে যাহা দিয়াছিলেন, তাহা পরিশোধ করিবে বলিয়া। আপনি শোধ লাইবেন। দেবেন্দ্ৰ হাসিয়া বলিলেন, “যা দিয়াছি, তাহা পাইলে লইতে পারি।” রা। কি কি দিয়াছেন ? দে ! একখানা নোট । এই নিন। বলিয়া রাধারাণী অচল হইতে সেই নোটখানি খলিয়া দেবেন্দ্রনারায়ণের হাতে দিলেন। দেবেন্দ্রনারায়ণ দেখিলেন, তাঁহার হাতে লেখা রাধারাণীর নাম সে নোটে আছে। দেখিয়া বলিলেন, “এ নোট কি রাধারাণীর সবামী কখনও দেখিয়াছেন ?” রা। রাধারাণী কুমারী। স্বামীর কথাটা আপনাকে মিথ্যা বলিয়াছিলাম। দে। তা, সব ত শোধ হইল না। রা। আর কি বাকি ? দে। দইটা টাকা, আর কাপড়। রা। সব ঋণ যদি এখন পরিশোধ হয়, তবে আপনি আহার না করিয়া চলিয়া যাইবেন। পাওনা বঝিয়া পাইলে “কোন মহাজন বসে ? ঋণের সে অংশ ভোজনের পর রাধারাণী পরিশোধ করিবে । দে। আমার যে এখনও অনেক পাওনা বাকি । রা। আবার কি ? দে। রাধারাণীকে মনঃপ্রাণ দিয়াছি--তা ত পাই নাই। রা। অনেক দিন পাইয়াছেন। রাধারাণীর মনঃপ্রাণ আপনি অনেক দিন লইয়াছেন—তা সে দেনাটা শোধ-বোধ গিয়াছে। দে। সদে কিছ পাই না ? রা। পাইবেন বৈ কি । দে। কি পাইব ? রা। শােভ লগেন সন্তহিবাক যোগে এই অধম নারীদেহ আপনাকে দিয়া, রাধারাণী ঋণ হইতে মক্ত হইবে। এই বলিয়া রাধারাণসী ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। অস্টেম পরিচ্ছেদ রাধারাণীর আজ্ঞা পাইয়া, দেওয়ানজি আসিয়া রাজা দেবেন্দ্রনারায়ণকে বহিববাটীতে লইয়া গিয়া যথেস্ট সমাদর করিলেন। যথাবিহিত সময়ে রাজা দেবেন্দ্রনারায়ণ ভোজন করিলেন। রাধারাণী স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়া তাঁহাকে ভোজন করাইলেন। ভোজনান্তে রাধারাণী বলিলেন, “আপনার নগদ দইটা টাকা ও কাপড় এখনও ধারি। কাপড় পরিয়া ছিড়িয়া ফেলিয়াছি; টাকা খরচ করিয়াছি। তাহা আর ফেরত দিবার যো নাই। তাহার বদলে যাহা আপনার জন্য রাখিয়াছি, তাহা গ্রহণ করান।” এই বলিয়া রাধারাণী বহমাল্য হীরকহার বাহির করিয়া দেবেন্দ্রের গলায় পরাইয়া দিতে গেলেন। দেবেন্দ্রনারায়ণ নিষেধ করিয়া বললেন, “যদি ঐরাপে দেনা পরিশোধ করিবে, তবে তোমার গলায় যে ছড়া আছে, তাহাই লাইব ।” রাধারাণী হাসিতে হাসিতে আপনার গলার হার খালিয়া দেবেন্দ্রনারায়ণের গলায় পরাইল । তখন দেবেন্দ্রনারায়ণ বলিলেন, “সব শোধ হইল—কিন্তু আমি একটি ঋণী রহিলাম।” রাধা । কিসে ? দে। সেই দাই পয়সার ফলের মালার মতুল্য ত ফেরত পাইলাম। তবে এখন মালা ফেরত দিতে আমি বাধ্য। রাধারাণী হাসিল। 8切">