পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ ভালবাসিয়াছি। তাই, তুমি যদি বল যে, তোমার স্বামী না থাকিলে তুমি আমার বেগম হইতে, তাহা হইলে এ স্নেহশান্য হৃদয়--পোড়া পাহাডের মত হৃদয়—একট, স্নিগধ হয়। নিৰ্ম্মমল ঔরঙগজেবের কথায় বিশ্ববাস করিল-কেন না, ঔরঙগজেবের কন্ঠের সবর বিশবাসের যোগ্য বলিয়া বোধ হইল। নিৰ্ম্মমল ঔরঙ্গজেবের জন্য কিছ: দঃখিত হইয়া বলিল, “জাঁহাপনা, এ বন্দিী এমন কি কাজ করিয়াছে যে, সে আপনার ভালবাসার যোগ্য হয় ?” ঔ। তাহা বলিতে পারি না। তুমি সন্দেরী বটে, কিন্তু সৌন্দয্যে মগধ হইবার বয়স আমার আর নাই। আর তুমি সন্দেরী হইলেও উদিপরেী অপেক্ষা নাও। বোধ করি, আমি তোমার কাছে ভিন্ন আর কোথাও সত্য কথা কখন পাই নাই, সেই জন্য। বোধ করি, তোমার বন্ধি, চতুরতা, আর সাহস দেখিয়া তোমাকেই আমার উপযক্ত মহিষী বলিয়া বিশ্ববাসী হইয়াছে। যাই হোক, আলমগীর বাদশাহ তোমার ভিন্ন আর কাহারও কখন বশীভূত হয় নাই। আর কাহারও চক্ষর কটাক্ষে মোহিত হয় নাই। নি। শাহানশাহ ! আমাকে একদা রােপনগরের রাজকন্যা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, “তুমি কাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করা ?” আমি বলিয়ছিলাম, আলমগীর বাদশাহকে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ? আমি তাঁহাকে বঝাইলাম যে, আমি বাল্যকালে বাঘ পষিয়াছিলাম, বাঘকে বশ করাতেই আমার আনন্দ ছিল। বাদশাহকে বশ করিতে পারিলে আমার সেই আনন্দ হইবে । আমার ভাগ্যবশতঃই অবিবাহিত অবস্থায় আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় নাই। আমি যে দীন-দরিদ্রকে স্বামীত্বে বরণ করিয়াছি, তাহতেই আমি সখী । এক্ষণে আমায় বিদায় দিন । ঔরঙ্গজেব দঃিখিত হইয়া বলিলেন, “দনিয়ার বাদশাহ হইলেও কেহ সখী হয় না।--কাহারও সাধ মিটে না। এ পথিবীতে আমি কেবল তোমায় ভালবাসিয়াছি—কিন্তু তোমাকে পাইলাম না। তোমায় ভালবাসিয়াছি, অতএব তোমায় আটকাইব না।--ছাড়িয়া দিব। তুমি যাহাতে সখী হও, তাহাঁই করিব । যাহাতে তোমার দঃখ হয়, তাহা করিব না। তুমি যাও । আমাকে সমরণ রাখিও । যদি কখনও আমা হইতে তোমার কোন উপকার হয়, আমাকে জানাইও । আমি তাহা করিব।” নিৰ্ম্মমল কুণিশা করিল। বলিল, “আমার একটি মাত্র ভিক্ষা রহিল। যখন উভয় পক্ষের মঙ্গলাৰ্থ সন্ধি করিতে আমি আপনাকে অননুরোধ করিব, তখন আমার কথায় কণপাত করিবেন।” ঔরঙগজেব বলিল, “সে কথার বিচার সেই সময়ে হইবে।” তখন নিৰ্ম্মমল ঔরঙগজেবকে তাহার কপোত দেখাইল। বলিল, “এই শিক্ষিত পায়রা আপনি রাখিবেন । যখন এ দাসীকে আপনি সমরণ করবেন, এই পায়রাটি আপনি ছাড়িয়া দিবেন। ইহা দবারা আমার নিবেদন আপনাকে জানাইব । আমি এক্ষণে সৈন্যের সঙ্গে রহিলাম। যখন আমার বিদায় লইবার সময় হইবে, বেগম সাহেবা যেন আমাকে বিদায় দেন, এই অনািমতি তাঁর প্রতি থাক।” তখন ঔরঙ্গজেব সৈন্য চালনার না। বস্থা করিতে নিযক্ত হইলেন। কিন্তু তাঁহার মনে বড় বিষাদ উপস্থিত হইল। নিৰ্ম্মলের মত কথোপকথনে সাহস, বাকচাতুৰ্য্য এবং সপ্যািটবস্তৃত্ব মোগল বাদশাহ আর কোথাও দেখেন নাই। যদি কোন রাজা,-শিবাজী বা রাজসিংহ, যদি কোন সেনাপতি-দিলীর কি তয়াবার, যদি কোন শাহজাদা—আজিম কি আকবর, এরােপ সাহসে এরােপ স্পষ্ট কথা বলিত, ঔরঙ্গজেব তাহা সহ্য করিতেন না। কিন্তু রপবতী যাবতী, সহায়হীনা নিৰ্ম্মমলের কাছে তাহা মিন্ট লাগিত। বড়োর উপর যতটকু কন্দপের অত্যাচার হইতে পারে, বোধ হয় তাহা হইয়াছিল। ঔরঙ্গজেব প্রেমান্ধের মত বিচ্ছেদে শোকে শোকাকুল না হইয়া একটা বিষন্ন হইলেন মাত্র। ঔরঙ্গজেব মাক আন্তনি বা অগিনবণ ছিলেন না, কিন্তু মনষ্য কখন পাষাণও হয় না। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ বাদশাহ বহ্নিচক্ৰে প্রভাতে বাদশাহী সেনা কুচ করিতে আরম্ভ করিল। সববাগ্রে পথপরিস্কারক সৈন্য পথ পরিস্কারের জন্য সশস্ত্ৰে ধাবিত। তাহদের তুস্ত্র কোদালি, কুড়াঁল, দা ও কাটারি। তাহারা U b°G