পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कब ब्रष्नाबव्ी ব্ৰহ্ম। যে পথে এখানে আসিলে, সেই পথে মন্দিরের বাহিরে যাও । মন্দির-দাবারে তোমার সত্ৰী কন্যাকে দেখিতে পাইবে। কল্যাণী এ পয্যন্ত অভুক্তা। যেখানে তাহারা বসিয়া আছে, সেইখানে ভক্ষ্য সামগ্রী পাইবে । তাহাকে ভোজন করাইয়া তোমার যাহা অভিরাচি, তাহা করিও, এক্ষণে আমাদিগের আর কাহারও সাক্ষাৎ পাইবে না। তোমার মন যদি এইরােপ থাকে, তবে উপযক্ত সময়ে তোমাকে দেখা দিব। তখন অকস্মাৎ কোন পথে ব্রহ্মচারী অন্তহিত হইলেন। মহেন্দ্র পািব্বপ্রদটি পথে নিগািমনপৰ্ব্ববাক দেখিলেন, নাটমন্দিরে কল্যাণী কন্যা লইয়া বসিয়া আছে। এদিকে সত্যানন্দ অন্য সরঙগ দিয়া অবতরণপববর্তক এক নিভৃত ভূগভাকক্ষায় নামিলেন। সেখানে জীবানন্দ ও ভবানন্দ বসিয়া টাকা। গণিয়া থরে থরে সাজাইতেছে। সে ঘরে সত্যপে সন্তাপে সবণ, রৌপ্য, তাম্র, হীরক, প্রবাল, মক্তা সজিজত রহিয়াছে। গত রাত্রে লাঠের টাকা, ইহারা সাজাইয়া রাখিতেছে। সত্যানন্দ সেই কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিলেন, “জীবানন্দ ! মহেন্দ্ৰ আসিবে। আসিলে সন্তানের বিশেষ উপকার আছে। কেন না, তাহা হইলে উহার পরষানক্রমে সঞ্চিত অর্থ রাশি মার সেবায় অপিত হইবে। কিন্তু যত দিন সে কায়মনোবাক্যে মাতৃভক্ত না হয়, তত দিন তাহাকে গ্রহণ করিও না। তোমাদিগের হাতের কাজ সমাপত হইলে তোমরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উহার অনসরণ করিও, সময় দেখিলে উহাকে শ্ৰীবিষ্ণমন্ডপে উপস্থিত করিও । আর সময়ে হউক, অসময়ে হউক, উহাদিগের প্রাণরক্ষা করিও । কেন না, যেমন দন্টের শাসন সন্তানের ধৰ্ম্মম, শিলেটর রক্ষাও সেইরােপ ধৰ্ম্ম।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ অনেক দঃখের পর মহেন্দ্র আর কল্যাণীতে সাক্ষাৎ হইল। কল্যাণী কাঁদিয়া লটিয়া পড়িল । মহেন্দ্র আরও কাঁদিল। কাঁদাকাটার পর চোখ মাছার ধর্ম পড়িয়া গেল। যত বার চোখ মছা যায়, তত বার আবার জল পড়ে। জলপাড়া বন্ধ করিবার জন্য কল্যাণী খাবার কথা পাড়িল । ব্ৰহ্মচারীর অনচর যে খাবার রাখিয়া গিয়াছে, কল্যাণী মহেন্দ্রকে তাহা খাইতে বলিল । দভি ক্ষের দিন অন্ন-ব্যঞ্জন পাইবার কোন সম্পভাবনা নাই, কিন্তু দেশে যাহা আছে, সন্তানের কাছে তাহা সলাভ। সেই কানন সাধারণ মনয্যের আগম্য। যেখানে যে গাছে, যে ফল হয়, উপবাসী মন:ষ্যগণ তাহা পাড়িয়া খায়। কিন্তু এই অগম্য অরণ্যের গাছের ফল আর কেহ পায় না। এই জন্য ব্ৰহ্মচারীর অনাচর বহতর বন্য ফল ও কিছ দগধ আনিয়া রাখিয়া যাইতে পারিয়াছিল। সন্ন্যাসী ঠাকুরদের সম্পত্তির মধ্যে অনেকগলি গাই ছিল। কল্যাণীর অননুরোধে মহেন্দ্র প্রথমে কিছ ভোজন করিলেন। তাহার পর ভুক্তাবশেষ কল্যাণী বিরলে বসিয়া কিছ খাইল। দগধ কন্যাকে কিছর খাওয়াইল, কিছ, সঞ্চিত করিয়া রাখিল, আবার খাওয়াইবে । তার পর নিদ্রায় উভয়ে পীড়িত হইলে, উভয়ে শ্রম দর করিলেন। পরে নিদ্রােভঙ্গের পর উভয়ে আলোচনা করিতে লাগিলেন, এখন কোথায় যাই। কল্যাণী বলিল, “বাড়ীতে বিপদ বিবেচনা করিয়া গািহত্যাগ করিয়া আসিয়াছিলাম, এখন দেখিতেছি, বাড়ীর অপেক্ষা বাহিরে বিপদত অধিক। তবে চল, বাড়ীতেই ফিরিয়া যাই।” মহেন্দ্রেরও তােহা অভিপ্রেত। মহেন্দ্রের ইচ্ছা, কল্যাণীকে গহে। রাখিয়া, কোন প্রকারে এক জন অভিভাবক নিযক্ত করিয়া দিয়া, এই পরম রমণীয় অপার্থিব পবিত্রতাযন্ত মাতৃসেবাৱত গ্রহণ করেন। অতএব তিনি সহজেই সম্মত হইলেন। তখন দই জন গতিশ্রম হইয়া, কন্যা কোলে তুলিয়া পদচিহ্নাভিমখে যাত্ৰা করিলেন। কিন্তু পদচিহ্নে কোন পথে যাইতে হইবে, সেই দাভেদ্য অরণ্যানীমধ্যে কিছই স্থির করিতে পারিলেন না। তাঁহারা বিবেচনা করিয়াছিলেন যে, বন হইতে বাহির হইতে পারিলেই পথ পাইবেন। কিন্তু বন হইতে ত বাহির হইবার পথ পাওয়া যায় না। অনেকক্ষণ বনের ভিতর ঘরিতে লাগিলেন, ঘরিয়া ঘরিয়া সেই মঠেই ফিরিয়া আসিতে লাগিলেন, নিগমের পথ পাওয়া যায় না। সম্মখে এক জন বৈষ্ণববেশধারী অপরিচিত ব্ৰহ্মচারী দাঁড়াইয়া হাসিতেছিল। দেখিয়া মহেন্দ্র রন্ট হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “গোঁসাই, হাস কেন ?” গোঁসাই বলিল, “তোমরা এ বনে প্রবেশ করিলে কি প্রকারে ?” মহেন্দ্র। যে প্রকারে হউক, প্রবেশ করিয়াছি। O Ο Ο