পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

डूडीश थ०७ প্রথম পরিচ্ছেদ কাল ৭৬ সােল ঈশবরকৃপায় শেষ হইল। বাঙ্গালার ছয় আনা রকম মনীষাকে,—কত কোটী তা কে জানে,--যমপরে প্রেরণ করাইয়া সেই দািববৎসর নিজে কালগ্রাসে পতিত হইল।। ৭৭ সালে ঈশবর সম্প্রসন্ন হইলেন। সবক্ৰিট হইল, পথিবী শস্যশালিনী হইল, যাহারা বাঁচিয়াছিল, তাহারা পেট ভরিয়া খাইল। অনেকে অনাহারে বা অলপ হারে রােপন হইয়াছিল, পাণ আহার একেবারে সহ্য করিতে পারিল না। অনেকে তাহাতেই মরিল। পথিবী শস্যশালিনী, কিন্তু জনশন্যা। গ্রামে গ্রামে খালি বাড়ী পড়িয়া পশগণের বিশ্রামভূমি এবং প্ৰেতভয়ের কারণ হইয়া উঠিয়াছিল। গ্রামে গ্রামে শত শত উকবর ভূমিখণডসকল আকষিত, অনৎপাদক হইয়া পড়িয়া রহিল, অথবা জঙ্গলে পরিয়া গেল। দেশ জঙ্গলে পণ্য হইল। যেখানে হাস্যময় শ্যামল শস্যরাশি বিরাজ করিত, যেখানে অসংখ্য গো-মহিষাদি বিচরণ করিত, যে সকল উদ্যান গ্রাম্য যবক-যাবতীর প্রমোদভূমি ছিল, সে সকল ক্ৰমে ঘোরতর জঙ্গল হইতে লাগিল। এক বৎসর, দই বৎসর, তিন বৎসর গেল। জঙগল বাড়িতে লাগিল। যে সস্থান মনষ্যের সখের সােথান ছিল, সেখানে নরমাংসলোলপি ব্যাঘ আসিয়া হরিণাদির প্রতি ধাবমান হইতে লাগিল। যেখানে সন্দেরীর দল অলক্ত্যাঙ্কিতচরণে চরণভূষণ ধবনিত করিতে করিতে, বয়স্যার সঙ্গে ব্যঙ্গ করিতে করিতে, উচ্চ হাসি হাসিতে হাসিতে যাইত, সেইখানে ভল্লকেরা বিবর প্রস্তুত করিয়া শাবকাদি লালন-পালন করিতে লাগিল। যেখানে শিশসকল নবীন বয়সে সন্ধ্যাকালের মল্লিকাকুসমতুল্য উৎফল্ল হইয়া হৃদয়তৃপিতিকর হাস্য হাসিত, সেইখানে আজি যথে যথে বন্য হস্তিসকল মদমত্ত হইয়া ব্যুক্ষের কান্ডসকল বিদীর্ণ করিতে লাগিল। যেখানে দাগোৎসব হইত, সেখানে শােগালের বিবর, দোলমণে8 পেচকের আশ্রয়, নাটমন্দিরে বিষধর সাপ সকল দিবসে ভেকের অন্বেষণ করে। বাঙ্গালায় শস্য জন্মে, খাইবার লোক নাই ; বিক্লেয় জন্মে, কিনিবার লোক নাই; চাষায় চাষ করে, টাকা পায় না-জামীদারের খাজনা দিতে পারে না; জমীদারেরা রাজার খাজনা দিতে পারে না। রাজা জমীদারী কাড়িয়া লওয়ায় জমীদারসম্প্রদায় সববািহৃত হইয়া দরিদ্র হইতে লাগিল । বসমেতী বহ প্ৰসবিনী হইলেন, তব আর ধন জন্মে না। কাহারও ঘরে ধন নাই। যে যাহার পায়, কড়িয়া খায়। চোর-ডাকাতেরা মাথা তুলিল, সাধ, ভীত হইয়া ঘরের মধ্যে ল.কাইল । এদিকে সন্তানসম্প্রদায় নিত্য সচন্দন তুলসীদলে বিষ্ণপাদপদ্ম পজা করে, যার ঘরে বন্দকে পিস্তল আছে, কাড়িয়া আনে। ভবানন্দ বলিয়া দিয়াছিলেন, “ভাই! যদি এক দিকে এক ঘর মণিমাণিক্যা-হীরক-প্রবালাদি দেখ, আর এক দিকে একটা ভাঙগা বন্দক দেখ, মণিমাণিক্যা-হীরকপ্রবালাদি ছাড়িয়া ভাঙ্গা বন্দকটি লইয়া আসিবে।” তার পর, তাহারা গ্রামে গ্রামে চর পাঠাইতে লাগিল ৷ চর গ্রামে গিয়া যেখানে হিন্দ দেখে, বলে, ভাই, বিষ্ণপজা করবি ? এই বালিয়া ২O ॥২৫ জন জড় করিয়া, মসলমানের গ্রামে আসিয়া পড়িয়া মসলমানদের ঘরে আগন দেয়। মসলমানেরা প্রাণরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত হয়, সন্তানেরা তাহাদের সববস্ব লািঠ করিয়া নািতন বিষ্ণভক্ত দিগকে বিতরণ করে। লাঠের ভাগ পাইয়া গ্রাম্য লোকে প্রীত হইলে বিষ্ণমন্দিরে আনিয়া বিগ্রহের পাদসপশ করাইয়া তাহাদিগকে সন্তান করে। লোকে দেখিল, সন্তানত্বে বিলক্ষণ লাভ আছে। বিশেষ মসলমানরাজ্যের অরাজকতায় ও আশাসনে সকলে মসলমানের উপর বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। হিন্দধমের বিলোপে অনেক হিন্দই হিন্দীত্ব স্থাপনের জন্য আগ্রহচিত্ত ছিল। অতএব দিনে দিনে সন্তানসংখ্যা বন্ধি পাইতে লাগিল। দিনে দিনে শত শত, মাসে মাসে সহস্ৰ সহস্ৰ সন্তান আসিয়া ভবানন্দ জীবানন্দের পাদপদ্মে প্ৰণাম করিয়া, দলবদ্ধ হইয়া দিগ দিগন্তরে মসলমানকে শাসন করিতে বাহির হইতে লাগিল। যেখানে রাজপরিষ পায়, ধরিয়া মারপিট করে, কখন কখন প্রাণবধ করে, যেখানে সরকারী টাকা পায়, লাঠিয়া লইয়া ঘরে আনে, যেখানে মসলমানের গ্রাম পায়, দগধ করিয়া ভস্মাবশেষ করে। সস্থানীয় রাজপরিষগণ তখন সন্তানদিগের শাসনাথে ভূরি ভুরি সৈন্য প্রেরণ করিতে লাগিলেন ; কিন্তু এখন সন্তানেরা দলবদ্ধ, শস্ত্ৰষন্ত এবং মহােদশভশালী। তাহাদিগের দাপের সম্মখে মাসলমান সৈন্য অগ্রসর হইতে পারে না। যদি অগ্রসর হয়, অমিতবলে সন্তানেরা G Ga