পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दका ब्रष्न्बव्ी দেবী রাণী ছেলেমানষের মত বড় কান্নাটা কাঁদিল। ব্রজেশবের ততক্ষণ বড় বিপন্ন হইলেন। তাঁর মনে মনে বোধ আছে যে, এ পাপীয়সী ডাকাইতি করিয়া খায়, এর জন্য এক ফোটাও চোখের জল ফেলা হবে না। কিন্তু চোখের জল, আত বিধি ব্যবস্থা অবগত নয়, তারা অনাহত আসায় ব্ৰজেশবরের চোখ ভরিয়া গেল। ব্রজেশবের মনে করিলেন, হাত উঠাইয়া চোখ মছিলেই ধরা পড়িব । কাজেই চোখ মোছা হইল না। চোখ মোছা হইল না, তখন পকুর ছাপাইয়া —গাল বাহিয়া ধারা চলিল—প্রফল্পের হাতে পড়িল । তখন বালির বাঁধটা ভাঙিগয়া গেল। ব্রজেশবের মনে করিয়া আসিয়াছিলেন যে, প্ৰফল্লিকে ডাকাইতি করার জন্য ভারী রকম তিরস্কার করিবেন, পাপীয়সী বলিবেন—আরও দই চারিটা লম্বা চৌড়া কথা বলিয়া আবার একবার জন্মের মত ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবেন । কিন্তু কোদে যার হােত ভিজিয়ে দিবেন, তার উপর কি আর লম্বা চৌড়া কথা হয় ? তখন চক্ষ মাছিয়া ব্রজেশবের বলিল, “দেখ প্ৰফল্লি, তোমার টাকা আমার টাকা—তাঁর পরিাশোধের জন্য আমি কেন কাতর হব ? কিন্তু আমি বড় কাতরই হইয়াছি। আমি আজ দশ বৎসর কেবল তোমাকেই ভাবিয়াছি। আমার আর দাই সত্ৰী আছে- আমি তাহাদিগকে এ দশ বৎসর সত্ৰী মনে করি নাই; তোমাকেই সত্ৰী জানি। কেন, তা বঝি তোমায় আমি বঝাইতে পারিব না। শনিয়াছিলাম, তুমি নাই। কিন্তু আমার পক্ষে তুমি ছিলো। আমি তার পরও মনে জানিতাম, তুমিই আমার সত্ৰী—মনে আর কাহারও স্থান ছিল না। বলব না। মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু বলাতেও ক্ষতি নাই—তুমি মরিয়াছ শনিয়া, আমিও মরিতে বসিয়াছিলাম। এখন মনে হয়, মরিলেই ভাল হইত ; তুমি মরিলে ভাল হইত। -- না মরিয়াছিলো ত আমি মরিলেই ভাল হইত। এখন যাহা শনিয়াছি, বঝিয়াছি, তা শনিতে হইত না, বঝিতে হইত না। আজ দশ বৎসরের হারান ধন তোমায় পাইয়াছি, আমার সবগ সখের অপেক্ষা অধিক সখি হইত। তা না হয়ে প্রফতুল্ল, আজ তোমায় পাইয়া মৰ্ম্মান্তিক যন্ত্ৰণা।” তার পর একবার থামিয়া একটা ঢোক গিলিয়া, মাথা টিপিয়া ধরিয়া ব্রজেশবের বলিল, “মনের মন্দিরের ভিতর সোণার প্রতিমা গড়িয়া রাখিয়াছিলাম। —আমার সেই প্ৰফল্লি-মাখে আসে না।--সেই প্রফল্পের এই বত্তি!” প্রফতুল্ল বলিল, “কি ? ডাকাইটত করি ?” ৱ। কর না কি ? ইহার উত্তরে প্রফতুল্ল একটা কথা বলিতে পারিত। যখন ব্ৰজেশবরের পিতা প্ৰফল্পকে জন্মের মত ত্যাগ করিয়া গহবহিস্কৃত করিয়া দেয়, তখন প্ৰফল্লা কাতর হইয়া শবশারকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, “আমি আলোর কাঙ্গাল, তোমরা তাড়াইয়া দিলে—আমি কি করিয়া খাইব ?” তাহাতে শবশ্যর উত্তর দিয়াছিলেন, “চুরি ডাকাইতি করিয়া খাইও ।” প্রফতুল্ল মেধাবিনী—সে কথা ভুলে নাই । ভুলিবার কথাও নহে। আজ ব্রজেশবের প্রফতুল্পকে ডাকাইত বলিয়া এই ভৎসনা করিল ; আজ প্রফল্পের সেই উত্তর ছিল। প্রফল্পের এই উত্তর ছিল, “আমি ডাকাইত বটে—তা এখন এত ভৎসনা কেন ? তোমরাই ত চুরি ডাকাইতি করিয়া খাইতে বলিয়াছিলো। আমি গরেজনের আজ্ঞা পালন করিতেছি।” এ উত্তর সম্বরণ করাই যথার্থ পণ্য। প্রফতুল্ল সে পণ্য সঞ্চয় করিল,—সে কথা মাখেও আনিল না। প্রফতুল্ল স্বামীর কাছে হাত জোড় করিয়া এই উত্তর দিল। বলিল, “আমি ডাকাইত নই। আমি তোমার কাছে শপথ করিতেছি, আমি কখন ডাকাইতি করি নাই। কখন ডাকাইতির এক কড়া লই নাই। তুমি আমার দেবতা। আমি অন্য দেবতার অচ্চনা করিতে শিখিতেছিলাম—-শিখিতে পারি নাই ; তুমি সব দেবতার সােথান অধিকার করিয়াছ —তুমিই একমাত্র আমার দেবতা। আমি তোমার কাছে শপথ করিতেছি—আমি ডাকাইত নই। তবে জানি, লোকে আমাকে ডাকাইত বলে। কেন বলে, তাও জানি। সেই কথা তোমাকে আমার কাছে শনিতে হইবে। সেই কথা শনাইবা বলিয়াই আজ এখান আসিয়াছি। আজ না শনিলে, আর শনা হইবে না। শোন, আমি বলি।” তখন যে দিন প্ৰফল্লি শবশরোলয় হইতে বহিস্কৃত হইয়াছিল, সেই দিন হইতে আজ পয্যন্ত আপনার কাহিনী সকলই অকপটে বলিল। শনিয়া ব্রজেশবের বিস্মিত, লজিজত, অতিশয় আহমাদিত, আর মহামহিমময়ী স্ত্রীর সমীপে কিছ, ভীত হইলেন। প্ৰফল্লি সমাপন করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আমার এ কথাগলিতে বিশ্ববাস করিলে কি ?” অবিশবাসের জায়গা ছিল না—প্রফল্লের প্রতি কথা ব্ৰজেশবরের হাড়ে হাড়ে বসিয়াছিল। b'8bf