পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बध्निकञ ब्रष्नावौ রাজপত্র-শরীর লক্ষ্য করিল ; যেমন রাজপত্রের উল্লশেফাখিত শরীর ভূতলে অবতরণ করিতেছিল, অমনি সেই ছরিকা রাজপত্রের বিশাল বাহ মধ্যে গভীর বিধিয়া গেল। রাজপত্র সে আঘাত সচীবেধ মাত্র জ্ঞান করিয়া পাঠানের কটিদেশে পৰ্ব্বতপাতবৎ পদাঘাত করিলেন, যবন দরে নিক্ষিপত হইয়া পড়িল। রাজপত্র বেগে ধাবমান হইয়া তাহার শিরচ্ছেদ করিতে উদ্যত হইতেছিলেন, এমন সময়ে ভীমনাদে “আল্লা-ল্লা-হো” শবদ কারিয়া অগণিত পাঠানস্রোত কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল। রাজপত্ৰ দেখিলেন, যাদ্ধ করা কেবল মরণের কারণ। রাজপত্রের অঙ্গ রধিরে পলাবিত হইতেছে; রধিরে।াৎসগে ক্ৰমে দেহ ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে। তিলোত্তমা এখনও বিচেতন হইয়া বিমলার ক্লোড়ে রহিয়াছেন। বিমলা তিলোত্তমাকে ক্লোড়ে করিয়া কাঁদিতেছেন; তাঁহারও বস্ত্র রাজপত্রের রক্তে আদ্র হইয়াছে। কক্ষ পাঠান সেনায় পরিপািণ হইল। রাজপত্র এবার অসির উপর ভর করিয়া নিশবাস ছাড়িলেন। একজন পাঠান কহিল, “রে নফর! অস্ত্র ত্যাগ করা; তোরে প্রাণে মারিব না।” নিৰ্ব্ববাণোন্মািখ আপিনতে যেন কেহ ঘতাহতি দিল। অগ্নিশিখাবৎ লম্ফ দিয়া কুমার দাম্ভিক পাঠানের মস্তকচ্ছেদ করিয়া নিজ চরণতলে পাড়িলেন। আসি ঘরাইয়া ডাকিয়া কহিলেন, ‘যবন, রাজপত্যেরা কি প্রকারে প্রাণত্যাগ করে দেখা।” অনন্তর বিদ্যালবৎ কুমারের অসি চমকিতে লাগিল। রাজপত্ৰ দেখিলেন যে, একাকী আর যদ্ধ হইতে পারে না; কেবল যত পারেন। শত্রনিপাত করিয়া প্রাণত্যাগ করাই তাঁহার উদ্দেশ্য হইল। এই অভিপ্ৰায়ে শত্র তরঙ্গের মধ্যস্থলে পড়িয়া বজমন্টিতে দই হস্তে আসি-ধারণাপন্ব্বক সঞ্চালন করিতে লাগিলেন। আর আত্মরক্ষার দিকে কিছমাত্ৰ মনোযোগ রহিল না; কেবল অজস্র আঘাত করিতে লাগিলেন। এক, দই, তিন, —প্রতি আঘাতেই হয় কোন পাঠান ধরাশায়ী, নচেৎ কাহারও অঙ্গচ্ছেদ হইতে লাগিল। রাজপত্রের অঙ্গে চতুদিক হইতে বন্টিধারাবৎ অস্ত্ৰাঘাত হইতে লাগিল। আর হস্ত চলে না, ক্ৰমে ভূরি ভুরি আঘাতে শরীর হইতে রক্তপ্রবাহ নিগত হইয়া বাহ ক্ষীণ হইয়া আসিল; মস্তক ঘারিতে লাগিল; চক্ষে ধামাকার দেখিতে লাগিলেন; কণে অসপস্ট কোলাহল মাত্র প্রবেশ করিতে লাগিল। “রাজপত্রকে কেহ প্ৰাণে বধ করিও না, জীবিতাবস্থায় ব্যাঘ্রকে পিঞ্জরাবদ্ধ করিতে হইবে।” এই কথার পর আর কোন কথা রাজপত্র শনিতে পাইলেন না ; ওসমান খাঁ এই কথা বলিয়াছিলেন । রাজপত্রের বাহযোিগল শিথিল হইয়া লম্বমান হইয়া পড়িল ; বলহীন মল্টি হইতে আসি ঝঞ্চনা-সহকারে ভূতলে পড়িয়া গেল ; রাজপত্রেও বিচেতন হইয়া সবকর নিহত এক পাঠানের মতদেহের উপর মচ্ছিত হইয়া পড়িলেন। বিংশতি পাঠান রাজপত্রের উষ্ণীষের রত্ন অপহরণ করিতে ধাবমান হইল। ওসমান বজগম্ভীরস্বরে কহিলেন, “কেহ রাজপত্রকে সপশ করিও না।” সকলে বিরত হইল। ওসমান খাঁ ও অপর একজন সৈনিক তাঁহাকে ধরাধরি করিয়া পালন্ডেকর উপর উঠাইয়া শয়ন করাইলেন। জগৎ সিংহ চারি দন্ড পব্বে তিলাদধব জন্য আশা করিয়াছিলেন যে, তিলোত্তমাকে বিবাহ করিয়া এক দিন সেই পালঙ্কে তিলোত্তমার সহিত বিরাজ করবেন,- সে পালঙক তাঁহার মাতুঢ়া-শয্যা-প্রায় হইল। कझे জগৎ সিংহকে শয়ন করাইয়া ওসমান খাঁ সৈনিকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সত্ৰীলোকেরা יי ק ওসমান, বিমলা ও তিলোত্তমাকে দেখিতে পাইলেন না। যখন দিবতীয়বার সেনাপ্রবাহ কক্ষমধ্যে প্রধাবিত হয়, তখন বিমলা ভবিষ্যৎ বঝিতে পারিয়াছিলেন; উপায়ান্তর বিরহে পালঙ্কতলে তিলোত্তমাকে লইয়া লক্কায়িত হইয়াছিলেন, কেহ তাহা দেখে নাই। ওসমান তাঁহাদিগকে না দেখিতে পাইয়া কহিলেন, “সত্ৰীলোকেরা কোথায়, তোমরা তাবৎ দগমধ্যে অন্বেষণ কর! বাঁদী ভয়ানক বদ্ধিমতী ; সে যদি পলায়, তবে আমার মন নিশিচন্ত থাকিবেক না। কিন্তু সাবধান! বীরোন্দ্রের কন্যার প্রতি যেন কোন অত্যাচার না হয়।” সেনাগণ কতক কতক দগের অন্যান্য ভাগ অন্বেষণ করিতে গেল। দই একজন কক্ষমধ্যে অন্যাসন্ধান করিতে লাগিল। একজন অন্য এক দিক দেখিয়া আলো লইয়া পালঙ্ক-তলমধ্যে দণ্টিপাত করিল। যাহা সন্ধান করিতেছিল, তাহা দেখিতে পাইয়া কহিল, “এইখানেই আছে।" SO