পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৮ প্রেষ্টিঞ্জের বড়—তাহার কাছে আমাদের মন স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক মাথা নত করে—বিভূীষিকা আমাদিগকে ঘাড়ে ধরিয়া নোয়াইয়৷ দেয়, সেই প্রণতি-অবমাননার বিরুদ্ধে আমাদের মন ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ ন৷ করিয়া থাকিতে পারে না । ব্রাহ্মণও যখন আপন কৰ্ত্তব্য পরিত্যাগ করিয়াছে, তখন কেবল গারের জোরে পরলোকের ভয় দেখাইয়া সমাজের উচ্চতম আসনে আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না । কোন সম্মান বিনামূল্যের নহে-যথেচ্ছ কাজ করিয়া সম্মান রাখা যায় না । যে রাজা সিংহাসনে বসেন, তিনি দোকান খুলিয়া ব্যবসা চালাইতে পারেন না। সম্মান যাহার প্রাপা, তাহাকেই সকল দিকে সৰ্ব্বদ। নিজের ইচ্ছাকে খধ্ব করিরা চলিতে হয়। গৃহের অন্তান্ত লো-কর অপেক্ষ আমাদের দেশে গৃহকর্তা ও গৃহকত্ৰীকেই সংসারিক বিষয়ে অধিক বঞ্চিত হইতে হয়-- বাড়ীর গৃহিণীই সকলের শেষে অন্ন পান। ইছ না হইলে আত্মম্ভরিতার উপর কর্তৃত্বকে দীর্ঘকাল রক্ষণ করা যায় না । সম্মানও পাইবে, অথচ তাহার কোন মূল্য দিবে না, ইহা কখনই চিরদিন সহ হয় না। আমাদের আধুনিক ব্রাহ্মণের বিনামূল্যে সন্মান-আদায়ের বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিলেন । তাহাতে ঠাঁহাদের সন্মান আমাদের সমাজে উত্তরোত্তর মৌখিক হইয়৷ আসিয়াছে । কেবল তাছাই নয়, ব্রাহ্মণের সমাজের যে উচ্চকৰ্ম্মে নিযুক্ত ছিলেন, সে কৰ্ম্মে শৈথিল্য ঘটাতে সমাজেরও সন্ধিবন্ধন প্রতিদিন বিশ্লিষ্ট হইয়া আসিতেছে। বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, আষাঢ় । যদি প্রাচ্যভাবেই আমাদের দেশে সমাজরক্ষা করিতে হয়, যদি যুরোপীয় প্রণালীতে এই বহুদিনের বৃহৎ সমাজকে আমূল পরিবর্তন করা সম্ভবপর বা বাঞ্ছনীয় না হর, তবে যথার্থ ব্রাহ্মণসম্প্রদায়ের একান্ত প্রয়োজন আছে। ত;হারা দরিদ্র হইবেন, পণ্ডিত হইবেন, ধৰ্ম্মনিষ্ঠ হইবেন, সৰ্ব্ব প্রকার আশ্রমধৰ্ম্মের আদর্শ ও আশ্রয়স্বরূপ হইবেন ও গুরু হইবেন । যে সমাজের একদল ধনমানকে অবহেলা করিতে জানেন, বিলাসকে ঘৃণা করেন, যাহাঁদের আচার নিৰ্ম্মল, ধৰ্ম্মনিষ্ঠ দৃঢ়,যাহারা নিঃস্বার্থভাবে জ্ঞান অর্জন ও নিঃস্বার্থভাবে জ্ঞান বিতরণে রত—পরাধীনতা বা দারিদ্র্যে সে সমাজের কোন অবমাননা নাই। সমাজ যাহাকে যথার্থভাবে সন্মাননীয় করিয়া তোলে, সমাজ তাহার দ্বারাই সন্মানিত হয় । সকল সমাজেই মান্তব্যক্তিরা–শ্রেষ্ঠ লোকেরাই নিজ নিজ সমাজের স্বরূপ । ইংলণ্ডকে যখন আমরা ধনী বলি, তখন অগণ্য দরিদ্রকে হিসাবের মধ্যে আনি না। যুরোপকে যখন আমরা স্বাধীন বলি, তখন তাহার বিপুল জনসাধারণের দুঃসহ অধীনতাকে গণা করি না। সেথানে উপরের কয়েকজন লোকই ধনী, উপরের কয়েকজন লোকই স্বাধীন, উপরের কয়েকজন লোকই পাশবত হইতে মুক্ত। এই উপরের কয়েকজন লোক যতক্ষণ নিম্নের বহুতর লোককে মুখস্বাস্থ্য জ্ঞানধৰ্ম্ম দিবার জন্ত সৰ্ব্বদা নিজের ইচ্ছাকে প্রয়োগ ও নিজের মুখকে নিয়মিত করে, ততক্ষণ সেই সভ্যসমাজের কোন ভয় নাই ।