পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গভাষা ও সাহিত্য । ১৭৯ চতুর্থ সংখ্যা। ] কিন্তু অস্তরের মধ্যে অনুভব করিতেছি,

  • > সেদিন দূরে নাই। সমস্ত অনুকরণ-অমু

সরণকে তুচ্ছ করিয়া দিয়া নিজেকে নিজে ’ লাভ করিবার জন্ত আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তীব্র বেদন উপস্থিত হইয়াছে। মরুভূমির মধ্যে ক্ষুধাতুর তৃষার্তের স্কন্ধে টাকার থলি যেমন কেবল ভারমাত্র, তেমনি বিদেশের যে সমস্ত বহুমূল্য বোঝা আমরা মাথায় চাপাইয়াছি, বুঝিতে পারিতেছি, তাহার মূল্য সূতই হোকৃ, তাই আমাদের বল অপহরণ করিতেছে—এখন মন কেবলি বলিতেছে চাহি না, চাহি না, এ সমস্ত কিছুই চাছি না। তবে কি চাই ? হৃদয়ের মধ্য হইতে এই প্রার্থন! উৰ্দ্ধস্বরে র্কাদিয়া উঠি তেছে, আপনাকে চাই ! চাই আপনার শক্তিকে ! প্রচুর হইলেও উপকরণমাত্রে কোন লাভ নাই—তাছা আবর্জন ! সভাসমিতি, দরখাস্ত ও কন্‌গ্রেসে যে আমাদিগকে হীনতা হইতে মুক্তি দিতে পারে, এ মোহ আমাদের মন হইতে চলিয়া যাইতেছে, গবমেণ্ট, অনুগ্রহপূর্বক উচ্চ আসনে চড়াইয়া আমাদিগকে বড় করিতে পারে, এই মিথ্যা আশাও শিথিল হইয়া আসিয়াছে । এথলি যথার্থ সময় ! এখনি মনে হইতেছে, কোন মহাপুরুষের আবির্ভাব আসল্প হইয়াছে, যিনি ভারতবর্ষের সম্মুখে ভারতবর্ষের পথ উদঘাটিত করিয়া দিবেন—যিনি আমাদের অস্তরের মধ্যে এই কথা ধ্বনিত করিয়া তুলিবেন যে, আমরা ভারতবাসী, আমরা ফিরিঙ্গি নই, “আমরা বৰ্ব্বর নই, আমাদের লজ্জার কোন কারণ নাই। যিনি আমাদের মনকে, আমাদের হৃদয়কে, আমাদের কল্পনাকে স্বাধীন করিয়া দিবেন—যিনি আমাদের শিক্ষার বন্ধনমোচন করিবেন, আমাদের বিদেশী সংস্কারের সমস্ত কুহেলিকা অপসারিত করিয়া দিবেন । তখন আমাদের বর্তমান অবস্থা যেমনি থাক, আমাদের চিত্ত তাহার বহু উৰ্দ্ধে উঠিয়া সমস্ত বিশ্বজগৎকে প্রত্যক্ষ আপনার সম্মুখে প্রসারিত দেখিবে । এমন মুক্তি আছে, যাহাকে রাজার শাসন, প্রবলের পীড়ন, অবস্থার পেষণ স্পর্শ করিতে পারে না । সেই মুক্তিই ভারতবর্ষের লক্ষ্যস্থল ছিল এবং সকল ক্ষুদ্রতা ও স্বার্থচেষ্টার আক্রমণ্ড হইতে সেই রত্নকে রক্ষণ করিবার ভার লইয়াই ব্রাহ্মণ ভারতবর্ষে গৌরব লাভ করিয়াছিলেন এবং সেই রত্ন হারাইয়াই ব্রাহ্মণ ও ভারতবর্ষ রসাতলে গেছে । সেই মুক্তির আশা ও আনন্দ যখন অরুণালোকের ন্তায় আমাদের মাতৃভূমির উদয়াচল স্পর্শ করিবে, তখন যে অপরূপ সঙ্গীত চতুৰ্দ্দিকৃ হইতে ধ্বনিত—উদগীত হইয়৷ উঠিবে, তাহ আমার অস্তরে বাজিতেছে, কিন্তু তাহা প্রকাশ করিবার সাধ্য আমার নাই। সেইদিনকার বঙ্গসাহিত্যের জন্ত আর্মর অপেক্ষা করিয়া আছি, ততদিন যাহা করিতেছি, তাহী ক্রীড়াচ্ছলে সময়ষাপন মাত্র।