পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ ধৰ্ম্মাহরাগ প্রবল ছিল। কিন্তু তাহার সহিত হিন্দুবিদ্বেষ বর্তমান থাকার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় না । তৎকালে শাক্য-শৈব-সংঘর্ষের তুমুল কোলাহল শান্ত হইয়াছিল ; হিন্দু ও বৌদ্ধ পরস্পরের ধৰ্ম্মমতকে শ্রদ্ধা করিতে শিক্ষা করিয়াছিল । লোকরঞ্জনার্থ রাজাও হিন্দু এবং বৌদ্ধকে তুল্যভাবে অনুগ্রহ বিতরণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন । রাজা ধৰ্ম্মপাল সামন্তাধিপতি নারায়ণ বৰ্ম্মার অনুরোধে নারায়ণের সেবাপুজা-নিৰ্ব্বাহাৰ্থ ভূমিদান করিয়াছিলেন; রাজা নারায়ণপাল পাশুপত মতের আশ্রয় مئی ধৰ্ম্মমত । দানের জন্য ব্যবস্থা করিয়া উদারতার পরি চয় প্রদান করিরাছিলেন ; এবং দেবপাল, বিগ্রহপাল ও নারায়ণপাল বেদানুরক্ত মিশ্রংশয় ব্রাহ্মণগণকে প্রধান মন্ত্রীর উচ্চাসন প্রদান করিয়া তাহাদের নীতিকৌশলেই রাজ্যশাসন করিয়াছিলেন । ধৰ্ম্মমত কাহার ও পক্ষে রাজ প্রসাদ লাভের অন্তরায় হইত না । অন্যথা বৌদ্ধ ভূপালের নিকট হিন্দু সামস্তাধিপতি বা রাজমন্ত্রী উচ্চপদ প্রাপ্ত হক্টতেন না । এ সময়ে গৌড়ীয় হিন্দুসাম্রাজ্যের সহিত মগধের সঙ্গীর্ণ সাম্রাজ্য সংসত্ত হইয়া, মগধসাম্রাজ্যকে পুনরায় বিপুলায়তন করিয়৷ তুলিয়াছিল। গোরবের দিনে মগধের অধিকার পশ্চিমাঞ্চলেষ্ট সমধিক বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল। পতনকালে মগধের সাম্রাজ্যসীমা পশ্চিমে সঙ্কীর্ণ হইয়৷ পূৰ্ব্বাঞ্চলে বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল । তৎকালে উৎকল ও আসাম কখনকখন গৌড়ের অন্তভুক্ত হইত। পালবংশীয় সাম্রাজ্যসীমা । ጊጃቫ: বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ প্রথম পঞ্চ নরপালের শাসনসময়ে পুনঃপুন এই সকল দেশজয়ের বর্ণনাপাঠে বোধ হয়, এই সকল খণ্ডরাজ্যের সহিত গৌড়ীয় সাম্রাজ্যের ংঘর্ষ বর্তমান ছিল ;– সন্মিলন প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। প্রবল হনজাতির আক্রমণে ভারতবর্ষ বিপর্ষ্যস্ত হইত % গৌড়ীয় হিন্দুসাম্রাজ্যও তজন্ত হনগৰ্ব্ব থৰ্ব্ব করিতে অগ্রসর হইয়াছিল । ভট্টগুরবের গরুড়স্তম্ভলিপিতে ভণহার আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায় । এই সমরে উত্তরবঙ্গ সবিশেষ সমৃদ্ধিলাভ করিয়াছিল বলিয়া বোধ হয় । পালনরপালবর্গের প্রধান মন্ত্রিগণ উত্তরবঙ্গের অধিবাসী ছিলেন। সে বিখ্যাত মিশ্রবংশে ভট্টগুরবই শেষ সৌভাগ,শালী ব্যক্তি। তিনি অপুত্ৰক অবস্থায় পরলোকগমন করেন । বংশকীৰ্ত্তনের জন্ত উত্তরাধিকারী বর্তমান রহিল না বলিয়া, ভট্ট গুরব শেষজীবনে গরুড়স্তস্তলিপিতে বংশবৃত্তাস্ত খোদিত করাইয়াছিলেন । উত্তরবঙ্গের দ্যায় দক্ষিণবঙ্গও তৎ কালে জ্ঞান ও শিল্পালোচনার জন্ত খ্যাতিলাভ করিয়াছিল। দক্ষিণবঙ্গ তখন পর্য্যস্তুও “সমতট”নামে পরিচিত ছিল। তথাকার-শিল্পিগণ পাল-নরপালবর্গের শাসনলিপি উৎকীর্ণ করিতেন। মারায়ণপালের তাম্রশাসনের শেষশ্লোকে তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধিলাভ করিয়াছিল ; তথায় সহসা রাষ্ট্রবিপ্লব সংঘটিত হইত না । কিন্তু নানা কারণে উত্তরবঙ্গ বহু বিপ্লবের লীলাভূমি হইয়া উঠিয়াছিল। পূৰ্ব্বে প্রাগ জ্যোক্তিষ রাজ্য, পশ্চিমে মিথিলা ও উত্তরে উত্তরবঙ্গ ।