পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] কার,— একাকিত্বের আক্রটুকু, থাকে নু । না থাকে স্থানের অবকাশ, না থাকে কালের অবকাশ, না থাকে ধ্যানের অবকাশ। હાફরূপে নিজের সঙ্গ নিজের কাছে অত্যন্ত অনভ্যস্ত হইয়া পড়াতে, কাজের একটু ফাক হই লেই মদ খাইয়া প্রমেদে মাতিয়া বলপুৰ্ব্বক নিজের হাত হইতে মিস্তৃতি পাইবার চেষ্টা ঘটে। নীরব থাকিবার, স্তব্ধ থাকিবার,আনন্দে থাকিবার সাধ্য আর কাহারে থাকে না । যাহারা শ্রমজীবী, তাহীদের এই দশা । যাহারা ভোগী, তাহার ভোগের নব নব উত্তেজনায় ক্লান্ত । নিমন্ত্রণ, খেলা, নৃত্য, ঘোড়দৌড়, শিকার, ভ্রমণের ঝড়ের মুখে শুষ্কপত্রের মত দিনরাত্রি তাহারা নিজেকে আবৰ্ত্তিত করিয়া বেড়ায়। ঘূর্ণাগতির মধ্যে কেহ কখনো নিজেকে এবং জগৎকে ঠিকভাবে দেখিতে পায় না, সমস্তই অত্যন্ত ঝাপূসা দেখে। যদি একমুহূর্তের জন্ত তাহার প্রমোদচক্ৰ থামিয়া যায়, তবে সেই ক্ষণকালের জন্ত নিজের সহিত সাক্ষাৎকার, বৃহৎ জগতের সহিত মিলনলাভ, তাহার পক্ষে অত্যন্ত দুঃসহ বোধ হয়। ভারতবর্ষ ভোগের নিবিড়তাকে আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীর মধ্যে ব্যাপ্ত করিয়া লঘু করিয়া দিয়াছে, এবং কৰ্ম্মের জটিলতাকেও সরল করিয়া অনিয়া মামুষে-মানুষে বিভক্ত করিয়া দিয়াছে। ইহাতে ভোগে, কৰ্ম্মে এবং ধানে প্রত্যেকেরই মকুন্যত্বচর্চায় যথেষ্ট অবকাশ থাকে। ব্যবসায়ী—সেও মন দিয়া কথকতা শোনে, ক্রিয়াকৰ্ম্ম করে ; শিল্পী— সে-ও নিশ্চিন্তমনে মুর করিয়া রামায়ণ পড়ে। এই অবকাশের বিস্তারে গৃহকে, মুনকে, সমা নরবর্ষ। Vలిసి জকে কুলুষের ঘনবাষ্প হইতে অনেকট পরিমাণে নিৰ্ম্মল করিয়া রাখে—দূষিত

  • বায়ুকে বদ্ধ করিয়া রাখে না, এবং মলিনতার আবর্জনাকে একেবারে গায়ের পাশেই জমিতে দেয় না। পরস্পরের কাড়াকড়িতে

ঘেঁষাৰ্ঘেষিতে ষে রিপুর দাবানল জলিয়া উঠে, ভারতবর্ষে তাহা প্রশমিত থাকে। ভারতবর্যের এই একাকী থাকিয়া কাজ করিবার ব্রতকে যদি আমরা প্রত্যেকে গ্রহণ করি, তবে এবারকার নববর্ষ আশিষ-বর্ষণে ও কল্যাণশস্তে পরিপূর্ণ হইবে। দল বাধি বার, টাকা জুটাইবার ও সঙ্কল্পকে স্ফীত করিবার জন্ত মুচিরকাল অপেক্ষা না করিয়া যে-যেখানে আপনার গ্রামে, প্রান্তরে, পল্লীতে, গৃহে, স্থিরশান্তচিত্তে ধৈৰ্য্যের সহিত—সন্তোষের সহিত পণ্যকৰ্ম্ম-মঙ্গলকৰ্ম্ম সাধন করিতে আরম্ভ করি; আড়ম্বরের অভাবে ক্ষুব্ধ না হইয়া, দরিদ্র আয়োজনে কুষ্ঠিত না হইয়া, দেশীয় ভাবে লজ্জিত না হইয়া, কুটীরে থাকিয়া, মাটিতে বসিয়া, উত্তরীয় পরিয়া সহজভাবে কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হই ; ধৰ্ম্মের সহিত কৰ্ম্মকে, কৰ্ম্মের সহিত শান্তিকে জড়িত করিয়া রাখি ; চাতকপক্ষীর স্তায় বিদেশীর করতালিবর্ষণের দিকে উৰ্দ্ধমুখে তাকাইয়৷ না থাকি ; তবে ভারতবর্ষের ভিতরকার যথার্থবলে আমরা বলী হইব । বাহির হইতে আঘাত পাইতে পারি, বল পাইতে পারি না ; নিজের বল ছাড়া ৰল নাই ৷ -ভারতবর্ষ যেখানে নিজবলে প্রবল, সেই স্থানটি আমরা যদি আবিষ্কার ও অধিকার করিতে পারি, তবে মুহুর্তে আমাদের সমস্ত লজ্জা অপসারিত হইয়া যাইবে ।