পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার আদর্শ। । ማእ» উচ্চতর ধৰ্ম্মকে আঘাত করিল, তখন ধৰ্ম্ম তাহাকে আঘাত করিল— ধৰ্ম্ম এব হতে হস্তি ধৰ্ম্মে রক্ষতি রক্ষিতঃ । একসময় অাৰ্য্যসভ্যতা আত্মরক্ষার জন্ত ব্রাহ্মণশূদ্রে দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান রচনা করিয়াছিল। কিন্তু ক্রমে সেই ব্যবধান বর্ণাশ্রমধন্মের উচ্চতর ধৰ্ম্মকে পীড়িত করিল। বর্ণাশ্রম আপনাকে রক্ষা করিবার জন্য চেষ্টা করিল, কিন্তু ধৰ্ম্মকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করিল না । সে যখন উচ্চ অঙ্গের মনুষ্যত্বচর্চা হইতে শৃদকে একেবারে বঞ্চিত করিল, তখন ধৰ্ম্ম তাহার প্রতিশোধ লইল । তখন ব্রাহ্মণ্য আপন জ্ঞানধৰ্ম্ম লইয়া পূর্বের মত আর অগ্রসর হইতে পারিল না । অজ্ঞানজড় শূদ্রসম্প্রদায় সমাজকে গুরুভারে আকৃষ্ট করিয়া নীচের দিকে টানিয়া বাখিল । শূদ্রকে বাহ্মণ উপরে উঠিতে দেয় নাই, কিন্তু শূদ্র বাহ্মণকে নীচে নামাইল । আজি ও ভারতে বাহ্মণপ্রধান বর্ণাশ্রম থাকা সত্ত্বেও শূদ্রের সংস্কারে, নিকৃষ্ট অধিকারীর অজ্ঞানতায়, বাহ্মণসমাজ পৰ্য্যন্ত আচ্ছন্ন আবিষ্ট । ইংরাজের আগমনে যখন জ্ঞানের বন্ধনমুক্তি হইল, যখন সকল মনুষ্যই মনুষ্যত্বলাভের অধিকারী হইল, তখনি ব্রাহ্মণধৰ্ম্মের মৃচ্ছাপগমের লক্ষণ প্রকাশ পাইল । আজ বাহ্মণ-শূদ্রে সকলে মিলিয়া হিন্দুজাতির অস্তনিহিত আদশের বিশুদ্ধমূৰ্ত্তি দেখিবার জন্য সচেষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। শূদ্রের আজ জাগিতেছে বলিয়াই, ব্রাহ্মণধৰ্ম্মও জাগিবার উপক্রম করিতেছে। যাহাই হউক, আমাদের বর্ণাশ্রমধৰ্ম্মের সঙ্কীর্ণতা নিত্যধৰ্ম্মকে নানাস্তানে থৰ্ব্ব করিয়া ছিল বলিয়াই, তাহা উন্নতির দিকে না গিয়া বিকৃতির পথেই গেল । যুরোপীয় সভ্যতার মূলভিত্তি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ যদি এত অধিক স্ফীতিলাভ করে যে, ধৰ্ম্মের সীমাকে অতিক্রম করিতে থাকে, তবে বিনাশের ছিদ্র দেখা দিবে এবং সেই পথে শনি প্রবেশ করিবে । স্বার্থের প্রকৃতিই বিরোধ। যুরোপীয় সভ্যতার সীমায় সীমায় সেই বিরোধ উত্তরোন্তর কণ্টকিত হইয়া উঠিতেছে। পৃথিবী লষ্টয়া ঠেলাঠেলি কাড়াকড়ি পড়িবে, তাহার পূৰ্ব্বস্থচনা দেখা যাইতেছে । ইহাও দেখিতেছি, যুরোপের এই রাষ্ট্রীয় স্বার্থপরতা ধৰ্ম্মকে প্রকাশ্যভাবে অবজ্ঞা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। ‘জোর যার মুলুক তার’ এ নীতি স্বীকার করিতে আর লজ্জা বোধ করিতেছে না। ’ ইহাও স্পষ্ট দেখিতেছি, যে ধৰ্ম্মনীতি ব্যক্তিবিশেষের নিকট বরণীয়, তাহ রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে আবশ্বকের অনুরোধে বজ্জনীয়, এ কথা একপ্রকার সৰ্ব্বজনগ্রাহ হইয়া উঠিতেছে। রাষ্ট্ৰতন্ত্রে মিথ্যাচরণ, সত্যভঙ্গ, প্রবঞ্চন, এখন আর লজ্জাজনক যলিয়া গণ্য হয় না। যে সকল জাতি মনুষ্যে মনুষ্যে ব্যবহারে সত্যের মর্য্যাদা রাখে, দ্যায়ীচরণকে শ্রেয়োজ্ঞান করে, রাষ্ট্ৰতন্ত্রে তাহাদের ধৰ্ম্মবোধ অসাড় হইয়া থাকে। সেই জন্ত ফরাসী, ইংরাজ, জৰ্ম্মাশ, রুশ, ইছারা পরস্পরকে কপট, ভণ্ড, প্রবঞ্চক বলিয়া উচ্চস্বরে গালি দিতেছে । ইহা হইতে এই প্রমাণ হয় যে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে যুরোপীয় সভ্যতা এতই আত্যস্তিক