পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম সংখ্যা । ] রথের রজু ধরিয়া আকর্ষণ করিতে লাগিল। ঘর্ঘর কর্কর শবে রথ চলিতে আরম্ভ করিল ; চতুর্দিকে উচ্চ জয়ধ্বনি পড়িয়া গেল ; শতশত লোকের মস্তক ভুলুষ্ঠিত হইতে লাগিল । মণ্ডপের বারেণ্ডা ও রথের চারিধার আগন্তুকগণের প্রদত্ত উপহারফলে পূর্ণ। রথের উপর হইতে ব্রাহ্মণগণ আনারস, কাঠাল, ডাব, বেল, জনতার মধ্যে চুড়িয়া ফেলিতেছেন ; লাফালাফি-কাড়াকড়ি করিয়া সেই প্রসাদী ফল দর্শকদল গ্রহণ করিতেছে ; কোন স্থলে বা এই উপলক্ষে বলিষ্ঠগণের বলপরীক্ষা হইতেছে । একজন একটা কাঠাল ধরিয়াছে, আরএক-জন তাহা বলপূৰ্ব্বক ছাড়াইয়া লইবার চেষ্টা করিতেছে ; কোন স্থলে একজন বিশেষ বলশালীর প্রতি দুই, তিন, চারিজন পর্য্যস্ত প্রতিপক্ষ বল ও কৌশল প্রয়োগ করিতেছে ; লুটপুটি-গড়াগড়ি করিয়া তাহারা ধূলায় ধূসরিত অথবা বৃষ্টি-সিক্ত প্রাঙ্গণে কৰ্দমাক্ত হইতেছে । যে যে স্থলে রথ উপলক্ষে মেলা বসে, সেই সকল স্থানে স্ত্রীলোকেরা ছেলেমেয়ের আবদার মিটাইতেছেন, নিজেদের চুড়ি-চিরুণির কথাও ভুলিতেছেন না। মুসলমানেরাও মেলার দ্রব্যজাত ক্রয় করিতেছেন, আর দূরে থাকিয়া রথের ব্যাপার দেখিতেছেন । ক্রমে সন্ধ্যা হইয়া আসিল, রথস্থ বিগ্রহের আরতি দশন করিতে তখন শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দশকমণ্ডলী দাড়াইলেন। ধূপধুনার গন্ধে—পুষ্পকপুরের সৌরভে চতুর্দিক আমোদিত হইয়া উঠিল। আরতির বাদ্য আরম্ভ হইল, কীৰ্ত্তনসম্প্রদায় আরতির গান ধয়িলেন। পল্লীপাৰ্ব্বণ \రి ఆఫ్రి পুজক যথাক্রমে ধূপ, কপূরপ্রদীপ, পঞ্চপ্রদীপ ও জলশঙ্খাদি দ্বারা নানাপ্রকারে হস্তসঞ্চালন করিয়া তালে তালে আরতি । করিতে লাগিলেন ;–আরতির শেষে শঙ্খের প্রসাদী জল সকলের মস্তকে সিঞ্চিত হইল। সকলে অবনতমস্তকে সেই মঙ্গল-জলবিন্দু গ্রহণ করিয়া, স্তবস্তুতি ও প্রণামাদির পর, প্রসাদী ফলমূল ও পুষ্প-মাল্যাদি গ্রহণপূৰ্ব্বক বিদায় লইতে লাগিলেন । ক্রমে কর্তৃপক্ষ রথ প্রাঙ্গণ হইতে পুরুষসম্প্রদায়কে স্থানান্তরিত করিলেন । গ্রামের সন্ত্রান্তগুহের মহিলাগণ তখন শুদ্ধবসনভূষণ-পরিহিত হইরা সেস্থানে উপস্থিত হইলেন । র্তাহারা সপ্রণাম রথস্থ-বিগ্ৰহদর্শন ও রথসঞ্চালন করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেই, পুনৰ্ব্বার বাদ্যধ্বনির সহিত উৎসব নিবৃত্ত হইয়া গেল । - সাতদিন পরে আবার পুনর্যাত্র । তাহীও পূৰ্ব্ব রথেরই অনুরূপ, তবে তাহাতে অতটা জনতা বা আড়ম্বর দেখা যায় না । শ্রাবণমাসের জলক্রীড়া আজি ও চিত্তকে একান্ত চঞ্চল করিয়া তোলে। তখনকার অবিশ্রাম ধারাবর্ষণ, দিনদিন জলবৃদ্ধি, অনবরত বিদ্যুৎপ্রকাশ, যুগপৎ হর্ষ-ভরের সঞ্চার করে। পুর্ণবর্ষার ভরানদী পল্লীর পদতল বিধৌত করিয়া উচ্ছসিত স্রোতোবেগে দু’কুল ভাসাইয়া উধাও চলিয়াছে। সেই অবিরাম গতি, চঞ্চল তরঙ্গবিক্ষোভ, কুটিল আবৰ্ত্ত, গৈরিকরাগরঞ্জিত জলধারা, কত লোকের চিত্তে কত ভাবের স্ফুরণ করে। খালগুলিতে নদীর মত স্রোত বহিতেছে, ক্ষেত্র-প্রাস্তর জলে ভরা—চারিদিকে জলের