পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ-সংখ্যা । ] পড়ে। পত্রকাণ্ডাদি হইতে প্রতিদিন কি পরিমাণে জলীয়-বাষ্প উৎপন্ন হয়, তাহ স্থির করিবার জন্য একটা সুন্দর পরীক্ষাপদ্ধতি প্রচলিত আছে । এই পরীক্ষায় প্রথমে কোন এক সজীব বৃক্ষশাখা একটা জলপূর্ণ বৃহৎ-পাত্রে অহোরাত্র নিমজ্জিত ब्रांथ श्छ এবং পাত্রে কি-পরিমাণ জল আছে, তাহ। পূৰ্ব্বেই স্তির করিয়া রাখা হর । তা’র পর উক্ত সঞ্জীব শাখার শোষণজনিত পাত্রের জল কতটা কম পড়িল, তাহ ঠিক করা হইয়া থাকে । এই পরীক্ষাপদ্ধতিক্রমে গণনা কfয়লে দেখা, যার,—একটি পরিণত বৃক্ষ ভূপৃষ্ঠ হইতে প্রতিদিনই প্রায় ৫৫মণ জল পত্রমুলাদি দ্বারা শোষণ করিয়া লয় এবং ঠিক্‌ সেষ্ট-পরিমাণ জলই প্রতিদিন বাপাকারে আকাশে উৎক্ষিপ্ত করে । স্থানীর উষ্ণতা এবং পরীক্ষাস্থলের বায়ু ও আকাশের অবস্থা ইত্যাদির পরিবর্তনের সহিত উৎপন্ন বাম্পের পরিমাণ ও পরিবৰ্ত্তিত হর,—এইজন্ত পুৰ্ব্ববর্ণিত পরীক্ষালব্ধ গণনায় অল্পধিক ভ্রম, অবশ্যম্ভাবী । কিন্তু বৃক্ষের পত্রকাণ্ডাদি হইত্তে প্রতিনিয়তই যে প্রভূত জলীয়-বাষ্প আকাশস্থ হইয়া মেঘোৎপত্তির সহায়তা করিতেছে, তাহা অস্বীকার করিবার উপার নাই। বৎসরের নান সময়ে শীতপ্রধান দেশের অরণ্যতলের অবস্থা পরীক্ষা করিলে পূৰ্ব্বোক্ত উক্তির সত্যতা প্রত্যক্ষ দেখিতে পাওয়া যায়। শীতকালে ঐ সকল আরণ্যভূমির অধিকাংশ স্থানই যেন সদ্যোবর্ষণে সিক্ত থাকে, কিন্তু অপর ঋতুতে, এমন কি বর্ষাকালেও, তথায় তদ্রুপ আদ্রতা দেখা যায় না । বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, ঋতুবিশেষে শীতপ্রধান বন ও বৃষ্টি। ○ &9 দেশজ উদ্ভিদের জলশোষণশক্তির অত্যধিক হ্রাসবৃদ্ধি হয় বলিয়া, পূৰ্ব্বোক্ত বিসদৃশ ঘটনাটি আমরা দেখিতে পাই । বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় সত্য, কিন্তু সেই ঋতুতে বৃক্ষাদির জৈবক্রিয় পূর্ণভাবে চলিতে থাকে, কাজেই ভূশোষিত হওয়ার পর যে জল উদ্ধৃত্ত থাকে, তাহার সকলই উদ্ভিদমূল দ্বার শোষিত হইয়া যায়, অরণ্যতলে জল সঞ্চিত থাকিতে পারে না । যদি তলসঞ্চিত জলের তুলনায় বৃক্ষের পত্রকাণ্ডাদিন্থ স্থান অল্প হইয়৷ পড়ে, তাহ চইলেও জলশোবণের বিরাম হয় না,—উদ্ভিদসকল স্বতই সদ্য-উদগত শাখাপত্ৰাদিতে ভূষিত হইয়া সমগ্র জলের স্থান-সংকুলান করিয়া লয়। এই প্রকারে অতিবর্ষণ-সত্ত্বে ও অরণ্যতল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক থাকে। কিন্তু শীতপ্রধান দেশের অধিকাংশ উদ্ভিদকে শীতের প্রারম্ভ হইতেই ভ্রষ্টপত্র হইয়া সুপ্তাবস্থায় থাকিতে দেখা - যায়, এই সময়ে ইহাদের মূলের আর পূর্ববৎ রসাকর্ষণশক্তি থাকে না,—কাজেই হীনবীৰ্য্য-সেীরকিরণে বাষ্পীভূত এবং ভূশোষিত হওয়ার পর ষে জল উদ্ধৃত্ত থাকে, তাহী ক্রমে সঞ্চিত হইয়া অরণ্যতলটাকে আর্দ্র করিয়া তোলে। যে সকল বৃক্ষের শোষণাভাবে বর্ষণবিরল শীতকালেও অরণ্যতল পঙ্কিল হইয় পড়ে এবং অজস্ৰ-বারিপাত-সত্ত্বেও যে সকল বৃক্ষের জলশোষণশক্তিসাহায্যে বর্ষাকালেও বনভূমি শুকপ্রায় থাকিয়া বায়, সেই সকল আরণ্যবৃক্ষ দ্বারা প্রতিদিন কত জল শোষিত হইরা বাষ্পীভূত হইতেছে, তাহ বোধ হয় পাঠকপাঠিকাগণ এখন কতকটা অনুমান করিতে পারিবেন ।