বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত থাকাতে, অশেষপ্রকারে হিন্দুসমাজের অনিষ্ট ঘটিতেছে। সহস্র সহস্র বিবাহিতা নারী, যার পর নাই, যন্ত্রণাভোগ করিতেছেন। ব্যভিচারদোষের ও ভ্রূণহত্যাপাপের স্রোত প্রবলবেগে প্রবাহিত হইতেছে। দেশের লোকের যত্নে ও চেষ্টায় ইহার প্রতিকার হওয়া কোনও মতে সম্ভাবিত নহে। সম্ভাবনা থাকিলে, তদর্থে রাজদ্বারে আবেদন করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন থাকিত না। এক্ষণে, বহুবিবাহ প্রথা রহিত হওয়া আবশ্যক, এই বিবেচনায়, রাজদ্বারে আবেদন করা উচিত; অথবা এরূপ বিষয়ে রাজদ্বারে আবেদন করা ভাল নয়, অতএব তাহা প্রচলিত থাকুক, এই বিবেচনায়, ক্ষান্ত থাকা উচিত। এই জঘন্য ও নৃশংস প্রথা প্রচলিত থাকাতে, সমাজে যে গরীয়সী অনিষ্টপরম্পরা ঘটিতেছে, যাহারা তাহা অহরই প্রত্যক্ষ করিতেছেন, এবং তাহা প্রত্যক্ষ করিয়া, যাহাদের অন্তঃকরণ দুঃখনলে দগ্ধ হইতেছে, তাহাদের বিবেচনায়, যে উপায়ে হউক, এই প্রথা রহিত হইলেই, সমাজের মঙ্গল। বস্তুতঃ, রাজশাসন দ্বারা এই নৃশংস প্রথার উচ্ছেদ হইলে, সমাজের মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল ঘটিবেক, তাহার কোনও হেতু বা সম্ভাবনা দেখিতে পাওয়া যায় না। আর, যাহারা তদর্থেরাজদ্বারে আবেদন করিয়াছেন, তাঁহাদের যে কোনও প্রকারে অন্যায় বা অবিবেচনার কর্ম্ম করা হইয়াছে, তর্ক দ্বারা তাহা প্রতিপন্ন করাও নিভান্ত সহজ বোধ হয় না। আমাদের ক্ষমতা গবর্ণমেণ্টের হস্তে দেওয়া উচিত নয়, এ কথা বলা বালকতা প্রদর্শন মাত্র। আমাদের ক্ষমতা কোথায়। ক্ষমতা থাকিলে, ঈদৃশ বিষয়ে গবর্ণমেণ্টের নিকটে যাওয়া কদাচ উচিত ও আবশ্যক হইত না; আমরা নিজেই সমাজের সংশোধনকার্য্য সম্পন্ন করিতে পারিতাম। ইচ্ছা নাই, চেষ্টা নাই, ক্ষমতা নাই, সুতরাং সমাজের দোষসংশোধন করিতে পারিবেন না; কিন্তু তদর্থে রাজদ্বারে আবেদন করিলে অপমানবোধ বা সর্ব্বনাশজ্ঞান করিবেন, এরূপ লোকের সংখ্যা, বোধ করি, অধিক নহে; এবং অধিক না হইলেই, দেশের ও সমাজের মঙ্গল।
পাতা:বহুবিবাহ.pdf/৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
৭৩
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/0e/%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9.pdf/page86-708px-%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9.pdf.jpg)