পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত
৯১

আসিয়াছে, বাংলার সহিত কোনােপ্রকার আদানপ্রদান করিতেছে না, তাহাকে আমরা বাংলা ব্যাকরণে প্রত্যয়রূপে স্বীকার করিতে পারি না।

  যে-সকল কৃৎ-তদ্ধিতের সাহায্যে বাংলা বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের সৃষ্টি হয়, বর্তমান প্রবন্ধে কেবল তাহারই উল্লেখ থাকিবে। ক্রিয়াপদ সম্বন্ধে বারান্তরে আলােচনার ইচ্ছা রহিল।

  এই প্রবন্ধে বিশেষ্য বিশেষণকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছি, ক্রিয়াবাচক ও পদার্থবাচক। ক্রিয়াবাচক বিশেষ যথা, চলা বলা সাঁঁৎরানাে বাঁচানাে ইত্যাদি। পদার্থবাচক যথা, হাতি ঘােড়া জিনিসপত্র ঢেঁঁকি কুলা ইত্যাদি। গুণবাচক প্রভৃতি বিশেষ্য বিশেষণের প্রয়ােজন হয় নাই।

অ প্রত্যয়

  এই প্রত্যয়যােগে একশ্রেণীর বিশেষণ শব্দের সৃষ্টি হয়; যথা, কট্‌মট্ শব্দের উত্তর অ প্রত্যয় হইয়া কটমট (কটমট ভাষা, কটমট দৃষ্টি), টল‌্মল্ হইতে টলমল।[১]

  আসন্নপ্রবণতা বুঝাইবার জন্য শব্দদ্বৈত-যােগে যে-বিশেষণ হয় তাহাতে এই অ প্রত্যয়ের হাত আছে; যথা, পড়্ ধাতু হইতে পড়-পড়, পাক্ ধাতু হইতে পাক-পাক, মর্ ধাতু হইতে মরমর, কাঁঁদ ধাতু হইতে কাঁঁদ-কাঁঁদ। অন্য অর্থে হয় না; যথা, কাটাকাটা (কথা), পাকাপাকা ছাড়াছাড়া ইত্যাদি।

  এই প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে পাঠকদের মনােযােগ আকৰ্ষণ করিতে চাই। মনে পড়িতেছে, রামমােহন রায় তাহার বাংলা ব্যাকরণে লিখিয়াছেন, বাংলায় বিশেষণ পদ হলন্ত হয় না। কথাটা সম্পূর্ণ প্রামাণিক নহে, কিন্তু মােটের উপর বলা যায়, খাস বাংলার অধিকাংশ দুই অক্ষরের বিশেষণ হলন্ত নহে। বাংলা- উচ্চারণের সাধারণ নিয়মমতে ‘ভাল’ শব্দ ভাল্ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমরা

  1. দ্রষ্টব্য এই যে, ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বৈতে সর্বত্র এ নিয়ম খাটে না; যথা, আমরা টকটক লাল বা খটখট রৌদ্র বা টনটন ব্যথা বলি না, সে-স্থলে টক‌্টকে টন‌্টনে বলিয়া থাকি। কট‌্কট্ টল‌্মল্ জ্বল‌্জ্বল্, শব্দ হইতে বিকল্পে— কটমট কট‌্মটে, টলমল টল‌্মলে, জ্বলজ্বল জ্বল‌্জ্বলে হইয়া থাকে।