পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত
৯৩

মাধ্‌‌বা বলে না। শ্রীশ, প্রিয়, পরান প্রভৃতিও এইরূপ। বাংলা নামের বিকার সম্বন্ধে কোনাে পাঠক আলােচনা সম্পূর্ণ করিয়া দিলে আনন্দিত হইব।

  স্বার্থে আ প্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া গেছে, তাহাতে অর্থের পরিবর্তন হয় না। আবার, আ প্রত্যয়ে অর্থের কিছু পরিবর্তন ঘটে এমন উদাহরণও আছে; যেমন, হাত হইতে হাতা (বন্ধনের হাতা, জামার হাতা, অর্থাৎ হাতের মতো পদার্থ), ঠ্যাঙ হইতে ঠ্যাঙা (ঠ্যাঙের ন্যায় পদার্থ), ভাত হইতে ভাতা (খােরাকি), বাস হইতে বাসা, ধোব হইতে থােবা, চাষ হইতে চাষা।

  ধাতুর উত্তর আ প্রত্যয়যােগে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বিশেষণের সৃষ্টি হয়। বাঁধ্ ধাতুর উত্তর আ প্রত্যয় করিয়া বাঁধা, ঝর ধাতুর উত্তর আ প্রত্যয় করিয়া ঝরা। ইহারা বিশেষ্য বিশেষণ উভয় ভাবেই ব্যবহৃত হয়। বিশেষণ যেমন বাঁঁধা হাত; বিশেষ্য যেমন, হাত বাঁধা।

  দ্রষ্টব্য এই যে, কেবল একমাত্রিক অর্থাৎ monosyllabic ধাতুর উত্তর এইরূপ আ প্রত্যয় হইয়া দুই অক্ষরের বিশেষ্য বিশেষণ সৃষ্টি করে, যেমন ধর্ মার্ চল্ বল্ হইতে ধরা মারা চলা বলা। বহুমাত্রিক ধাতু বা ক্রিয়াবাচক শব্দের উত্তর আ সংযােগ হয় না। যেমন, আঁচড় হইতে আঁচ‌্ড়া, আছাড় হইতে আছ্‌ড়া হয় না।

  কিন্তু শুদ্ধমাত্র বিশেষণরূপে হইতে পারে; যেমন, থ্যাঁঁৎলা মাংস, কোঁকড়া চুল, বাঘ-আঁচ্‌ড়া গাছ, নেই-আঁক্‌ড়া লােক (ন্যায়-আঁকড়া অর্থাৎ নৈয়ায়িক তার্কিক)।

  ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বিশেষণের দৃষ্টান্ত উপরে দেওয়া গেল। আ প্রত্যয় যােগে নিষ্পন্ন পদার্থবাচক ও গুণবাচক বিশেষ্যের দৃষ্টান্ত দুই-একটি মনে পড়িতেছে; তাওয়া (যাহাতে রুটিতে তা দেওয়া যায়), দাওয়া (দাবি, অর্থাৎ দাও বলিবার অধিকার), আছ্‌ড়া (আঁটি হইতে ধান আছড়াইয়া লইয়া যাহা অবশিষ্ট থাকে)।

  বিশিষ্ট অর্থে আ প্রত্যয় হইয়া থাকে; যথা, তেলবিশিষ্ট তেলা, বেতালবিশিষ্ট বেতালা, বেসুরবিশিষ্ট বেসুরা, জলময় জলা, জুনবিশিষ্ট নােনা (লবণাক্ত), আলােকিত আলা, রোগযুক্ত রোগা, মলযুক্ত ময়লা, চালযুক্ত চালা (ঘর), মাটিযুক্ত মাটিয়া (মেটে), বালিযুক্ত বালিয়া (বেলে), দাড়িযুক্ত দাড়িয়া (দেড়ে)।