পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
বাংলা শব্দতত্ত্ব

 ইয়া প্রত্যয়ান্ত শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে ইয়া প্রত্যয় ত্যাগ করিয়া ই প্রত্যয় গ্রহণ কয়ে। ঘরভাঙানিয়া (ভাঙানে) ঘরভাঙানী, মনমানিয়া মনমাতানী, পাড়াকুঁদুলিয়া পাড়াকুঁদুলি, কীর্তনীয়া কীর্তনী।

 হিন্দিতে ক্ষুদ্রতা ও সৌকুমার্য -বােধক ই প্রত্যয়যুক্ত শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া গণ্য হয়– পুং গাড়া, স্ত্রীং গাড়ি, পুং রস্সা, স্ত্রী রস্সী।

 বাংলায় বৃহত্ত্ব অর্থে আ ও ক্ষুদ্রত্ব অর্থে ই প্রত্যয় প্রয়ােগ হইয়া থাকে, অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার দৃষ্টান্ত অনুসারে ইহাদিগকে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে।

 রসা রসি, দড়া দড়ি, ঘড়া ঘটি, বড়া বড়ি, ঝােলা ঝুলি, নােড়া নুড়ি, গোলা গুলি, হাঁড়া হাঁড়ি, ছােরা ছুরি, ঘুষ ঘুষি, কুপা কুপি, কড়া কড়ি, ঝােড়া ঝুড়ি, কলস কলসি, জোড়া জুড়ি, ছাতা ছাতি।

 কোনাে কোনাে স্থলে এইপ্রকার রূপান্তরে কেবল ক্ষুদ্রত্ব বৃহত্ব -ভেদ বুঝায় একেবারে দ্রব্যভেদ বুঝায়। যথা, কোড়া (বাঁশের) কুঁড়ি (ফুলের), জাঁতা জাঁতি, বাটা (পনের) বাটি।

 কিন্তু এ কথা বলা আবশ্যক টা ও টি, গুলা ও গুলি, স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গ উভয় প্রকার শব্দেই ব্যবহৃত হয়। মেয়েগুলাে ছেলেগুলি, বউটা জামাইটি ইত্যাদি।

 অগ্রহায়ণ ১৩১৮